অর্ধ যুগেরও বেশি সময় পর বাংলাদেশের বাইরে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাকে বিদায় জানাতে নেতা-কর্মীদের ঢল নেমেছে ঢাকার গুলশানে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার রাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন। রাত ১০টায় উড়োজাহাজটি ছাড়ার কথা রয়েছে।
শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছতে রাত ৮টায় গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে বের হন বিএনপি চেয়ারপারসন।
তাকে বিদায় জানাতে বিকাল থেকেই ফিরোজার সামনে ভিড় করছিলেন নেতা-কর্মীরা। গুলশান-২ নম্বর থেকে শুরু করে বনানীর সড়কেও রয়েছে তাদের অবস্থান।
দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে ট্রাকে চড়ে আসেন দলীয় নেত্রীকে বিদায় জানাতে।
মোহাম্মদ ইয়াসিন নামে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা এক ছাত্রদল নেতা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমার বাপ-দাদা বিএনপি করত। আমি যখন থেকে রাজনীতি করি, ম্যাডামকে কখনও সশরীরে দেখিনি। উনাকে নিজের চোখে একবার দেখতে পাব, এই আশা নিয়েই এসেছি। পারলে একটা ছবিও তুলব।”
আরাফাত খোকন নামে আরেকজন বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের চেয়ারপারসনকে চিকিৎসার সুযোগটাও দেয়নি। আজকে দেখেন ভাগ্যের কী খেলা, তিনি (শেখ হাসিনা) পালিয়েছেন, আর ম্যাডাম হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বহর নিয়ে বিদেশে যাচ্ছেন।”
নেতা-কর্মীদের ভিড়ে ফিরোজার সামনের সড়কটি গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সেখানে রয়েছে তৎপর।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন বিকাল ৩টার দিকে ফিরোজায় ঢোকেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও সেই বাড়িতে ঢুকতে দেখা যায়।
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালে কারাগারে যেতে হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। দুই বছর পর তাকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিলেও গুলশানের বাড়িতেই ছিল তার বিচরণ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দণ্ড মওকুফ করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন রাষ্ট্রপতি।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বন্দি থাকা অবস্থায় লিভার সিরোসিসসহ হৃদযন্ত্রের জটিলতায় আক্রান্ত হন। তখন চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে চাইলেও সরকারের অনুমতি না পাওয়ায় তাকে পাঠানো যায়নি।
মুক্ত হওয়ার পাঁচ মাস পর এখন বিদেশ যাচ্ছেন তিনি। তার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি পাঠিয়েছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হাম্মাদ আল থানি।
খালেদা জিয়ার ছেলে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সপরিবারে লন্ডনে রয়েছেন। বিমানবন্দর থেকে তিনিই মাকে দ্য লন্ডন ক্লিনিকে নিয়ে যাবে, যেখানে হবে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা।
চিকিৎসার জন্য সবশেষ ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। এরপর দেশে ফেরার এক বছরের মধ্যে কারাবাস শুরু হয়েছিল তার।