বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মো. সাগর নামে এক ব্যক্তি নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।
এই মামলার রিমান্ড শুনানিতে ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী হিসেবে তার পরিচয় দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। যদিও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হারের পর আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বলে আদালতকে জানিয়েছেন সাবেক এই নেতা।
সোমবার ঢাকার মহানগর হাকিম জশিতা ইসলামের আদালতে আসামি ও বাদী পক্ষের শুনানিতে এসব কথা উঠে আসে।
এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম আসামি এনামুর রহমানকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, এই মামলার ঘটনাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে। গোপনে ও প্রকাশ্যে প্রাথমিক তদন্তও করা হয়ে। তদন্তে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সাক্ষ্য প্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এ অবস্থায় মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে এবং ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করতে আসামিকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে দফায় দফায় নিরিবিলি পরিবেশে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
তবে সাবেক প্রতিমন্ত্রীর রিমান্ড বাতিল চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবী প্রাণ নাথ। আর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী করেন এর বিরোধীতা।
ওমর ফারুক বলেন, “এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রানা প্লাজার আহতের চিকিৎসা দিয়ে এনামুর রহমান আলোচনায় আসেন। পরবর্তীতে তার মাথায় ফ্যাসিস্টের ভূত চেপে বসে। তাকে পুরস্কার হিসেবে প্রতিমন্ত্রী বানানো হয়। শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট বানাতে সহযোগিতা করেছেন এনামুর। আমরা চাই যারা ফ্যাসিজমে কাজ করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক “
এই বক্তব্যের বিরোধীতায় আইনজীবী প্রাণ নাথ বলেন, “গত সংসদ নির্বাচনে এনামুর রহমান এমপি ছিলেন না। এই হত্যা মামলার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। তিনি থাকেন সাভারে, অথচ ঘটনাস্থল মিরপুর। তিনি অনেক অসুস্থ ও বয়স্ক। এ বিবেচনায় তার রিমান্ড বাতিল করা হোক। প্রয়োজনে জেলগেইটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।”
এ পর্যায়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন এনামুর রহমান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে হাসপাতালকে নির্দেশ দিয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “জুলাই থেকে অক্টোবর চার মাসে গুলিবিদ্ধ ২৯০ জনকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দিয়েছি। আহত ৫৭৬ জনকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। মিরপুর হত্যার সঙ্গে আমার কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই।
“গত নির্বাচনে হেরে দলের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। মন খারাপ থাকায় হাসপাতাল নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম।”
দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেন এবং তাকে ছয় দিনের রিমান্ডে নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেন।
এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি ঢাকার ভাটারা এলাকা থেকে এনামুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই মিরপুর থানার ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় ছাত্র-জনতার মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এসময় ঘটনাস্থলেই মারা যান মো. সাগর।
এ ঘটনায় গত ২৭ নভেম্বর নিহতের মা বিউটি আক্তার মিরপুর থানায় শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করে ২৪২ জনের নামে হত্যা মামলায় দায়ের করেন। মামলায় ৩০ নম্বর আসামি ডা. এনামুর রহমান।
এনামুর রহমান দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৯ (সাভার) আসন থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন। সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলামের কাছে পরাজিত হন।
২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এনামুর রহমানের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা ও দুর্নীতির মামলা করা হয়।
এছাড়া গত ২৩ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অজানা উৎস থেকে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে। একই তদন্তে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সাবেক চেয়ারম্যান হাইয়ুল কাইয়ুমকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এনামুরের প্রায় ৬ কোটি টাকার নগদ আমানত ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ রয়েছে। তিনি এনাম মেডিকেল হাসপাতাল, এনাম এডুকেশন অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিলেজ এবং এনাম ক্যান্সার হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।