ভারতকে উদ্দেশ্য করে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এস এম জিলানী বলেছেন, এদেশের এক ইঞ্চি মাটির দিকে তাকালে সেই চোখ উপড়ে ফেলা হবে।
বুধবার বিএনপির তিন সংগঠনের লং মার্চ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাসস্ট্যান্ডে আয়োজিত এক পথসভায় তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টার প্রতিবাদে বুধবার ঢাকা থেকে আগরতলা অভিমুখে লং মার্চ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন– যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল।
একই ইস্যুতে এর আগে গত রবিবার ঢাকায় পদযাত্রা করে ভারতীয় হাই কমিশনে স্মারকলিপি দিয়েছিল বিএনপির এই তিন সহযোগী সংগঠন। সেদিন ঢাকার বারিধারায় ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে বিএনপির তিন সংগঠনের পদযাত্রা কর্মসূচি রামপুরা ব্রিজের কাছে পুলিশ আটকে দিলে যুবদল সভাপতি মোনায়েম মুন্নার নেতৃত্বে সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ দূতাবাসে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করে।
ভৈরবের পথসভায় জিলানী বলেন, “ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমরা লং মার্চ করছি। ভারত নিজেদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দাবি করে, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের গণ-আন্দোলনে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা, তার সকল দোসরদের আশ্রয় দিয়েছে।
“আপনাদের জানিয়ে দিতে চাই– এই বাংলাদেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ না। এই বাংলাদেশ শহীদ জিয়ার, খালেদার জিয়ার, তারেক রহমানের বাংলাদেশ। এদেশের এক ইঞ্চির মাটির দিকে তাকালে সেই চোখ উপড়ে ফেলা হবে।”
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ভারতের সঙ্গে এক ধরনের অস্বস্তির সম্পর্ক তৈরি হয় বাংলাদেশের।
৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার বিষয়ে শুরু থেকেই উদ্বেগ জানিয়েছিল ভারত। বাংলাদেশিদের ভারতে ভ্রমণ ভিসা দেওয়াও বন্ধ রাখা হয়।
সবশেষ গত ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার, তাকে কারাগারে পাঠানোর দিন পুলিশের সঙ্গে তার অনুসারীদের সংঘর্ষ, এক আইনজীবীর মৃত্যু, এই ঘটনা ঘিরে গ্রেপ্তার, চট্টগ্রামের ভারতীয় ডেপুটি হাই কমিশন অভিমুখে হেফাজতের লংমার্চ কর্মসূচি, বাংলাদেশের বেশ কিছু স্থানে ভারতীয় পতাকার পদদলন, আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলা ও বাংলাদেশের পতাকা পোড়ানোর ঘটনায় দুই দেশের সম্পর্কে আরও তিক্ততা তৈরি হয়।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সুতো যখন টানটান অবস্থায় তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ গত ৪ ডিসেম্বর এক আলোচনা সভায় বলেন, এখন থেকে ভারতের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলবে বাংলাদেশ।
দুই দেশের সম্পর্ক ন্যায্যতার ভিত্তিতে চলবে, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
এরপর বুধবার ভৈরবের পথসভায় বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটির দিকে তাকালে সেই চোখ উপড়ে ফেলার হুঁশিয়ারি দিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জিলানী।
ভারতের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “ভারত বাংলাদেশের বন্ধু না। বিশেষ করে সেখানে শেখ হাসিনা থাকে, বাংলাদেশের শত্রু থাকে, সেই ভারত বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারে না।”
পথসভায় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, “ভারত-বাংলাদেশ পাশাপাশি রাষ্ট্র। আমরা বলেছি– ভারত বন্ধু রাষ্ট্র, কিন্তু সেখানে আমাদের হাই কমিশনে হামলা হয়েছে, পতাকা পুড়িয়েছে। সীমান্তে আমাদের দেশের নাগরিকদের গুলি করে মারছে, ফেলানিকে হত্যা করে কাঁটাতারের ঝুলিয়ে রাখে। এটা কোনও বন্ধু রাষ্ট্রের কাজ হতে পারে না।”
তিনি বলেন, “ভারত একটি আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র। ভারতের আর্শিবাদে এদেশে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখন হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”
এর আগে বুধবার সকাল ৯টায় ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে লং মার্চের কর্মসূচি শুরু হয়। তার আগে সেখানে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
ভৈরবের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় সমাবেশের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে লং মার্চের কর্মসূচি।