Beta
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

ভারতে অবৈধ বাংলাদেশিদের ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানোর পরিকল্পনা

Fadnavis
[publishpress_authors_box]

কূটনৈতিক চাপান-উতোর ছাড়িয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও নাজুক এখন। তার মধ্যেই দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে ছড়াচ্ছে উত্তেজনা। নয়া দিল্লি কিংবা বাংলাদেশের কাছের রাজ্যগুলোতে এক ধরনের উত্তেজনা তো চলছেই, তা এখন দূরের রাজ্যেও ছড়াচ্ছে।

দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শনিবার ঘোষণা দিয়েছেন, তার রাজ্যে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশিদের বন্দি শিবিরে নেওয়া হবে। একই দিনে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীও েসেই পথে হাঁটার কথা জানিয়েছেন।

কর্ণাটক রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গঙ্গাধারাইয়া পরমেশ্বর সাংবাদিকদের বলেন, “কারও কাছে পাসপোর্ট বা ভিসার মতো বৈধ নথি না থাকলে, তাদের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করে বন্দি শিবিরে পাঠানো হবে। এরপর তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি বাংলাদেশ হাই কমিশন বা রাষ্ট্রদূতকে জানিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর অনুমতি চাওয়া হবে।”

এর আগে কর্ণাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই বলেছিলেন, অবৈধভাবে বাস করা বাংলাদেশিরা রাজ্য ও দেশের জন্য বড় হুমকি।

পরমেশ্বর বিজেপি নেতা এবং বেঙ্গালুরুর সাবেক পুলিশ কমিশনার বি ভাস্কর রাওয়ের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানান।

রাও দাবি করেছিলেন, বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি, কারণ তারা রাজনৈতিক সমর্থন পাচ্ছেন।

এবিষয়ে কংগ্রেস নেতা পরমেশ্বর বলেন, “যখন তিনি (ভাস্কর) কমিশনার ছিলেন, তখন এটি সম্ভব হয়নি। আমরা এখন তা করছি। আমরা রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শক্তিশালী করছি। কাউকে আইন ভাঙতে দেওয়া হবে না।”

পরমেশ্বর জানান, রাজ্যে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান নিয়মিত চলছে।

কর্ণাটকের মতো মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাইয়েও একই ধরনের বন্দি শিবির নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাড়নবীস।

তিনি বলেন, “সম্প্রতি আমরা দেখেছি, মাদক মামলাসহ অবৈধ অণুপ্রবেশের ঘটনায় বিদেশি নাগরিকরা জড়িত। তাদের সরাসরি আমাদের কারাগারে রাখা যায় না। তাদের বন্দি শিবিরে রাখতে হয়।

“এজন্য বিএমসি (বৃহনমুম্বাই মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন) আমাদের জমি দিয়েছে। কিন্তু সেই জমি বন্দী শিবিরের মান অনুযায়ী নয়। তাই আমরা বিএমসিকে অন্য জমি দিতে বলেছি। মুম্বাইতে একটি ভালো বন্দি শিবির তৈরি করা হবে।”

মুম্বাইয়ের থানে পুলিশের মানবপাচারবিরোধী শাখা সম্প্রতি ক্যাল্যান এলাকায় অবৈধভাবে বসবাসরত এক বাংলাদেশি দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার দম্পতি সবুজ সানোয়ার শেখ ও বিস্টি সবুজ শেখ অবৈধভাবে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করেছে। বৃহস্পতিবার পুলিশের এক অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পাসপোর্ট ও বিদেশি আইনের বিভিন্ন ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এছাড়া ওই দম্পতিকে ঘর ভাড়া দেওয়া বাড়িওয়ালা মুস্তাফা মুনশির বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়েছে।

ভারতে অবৈধ বাংলাদেশি কত, সে বিষয়ে সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া দুষ্কর। তবে ২০১৬ সালে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজেজু দাবি করেছিলেন, ভারতে অবৈধ বাংলাদেশির সংখ্যা ২ কোটি।

লোকসভায় সেই তথ্য দিলেও তার উৎস সম্পর্কে জানাননি তিনি। তখন বাংলাদেশের তরফেও সেই সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল।

বাংলাদেশে গত অগাস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে গত নভেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৩৯৩ জন বাংলাদেশিকে সীমান্তে আটকের খবর সম্প্রতি দিয়েছিল দ্য হিন্দু। ২০২৩ সালে সীমান্তে মোট ৩ হাজার ১৩৭ বাংলাদেশিকে আটক করেছিল ভারতের সীমান্ত রক্ষীরা।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর কয়েকদিন পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এরপর থেকেই ঢাকা ও নয়া দিল্লির সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না।

এরপর তা আরও নাজুক হয়ে পড়ে গত নভেম্বরে হিন্দু ধর্মীয় নেতা চিন্ময় ব্রহ্মচারী গ্রেপ্তার হওয়ার পর। তার প্রতিবাদে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় এক বিক্ষোভ থেকে বাংলাদেশ মিশনে হামলা হয়। অন্যদিকে ভারতবিরোধী বিক্ষোভ বাংলাদেশেও চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন।

ভারতের সঙ্গে কূটনীতিক টানাপড়েনের মধ্যে বাংলাদেশে থাকা অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি গত ৮ ডিসেম্বর দিয়েছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছিলেন, কোনও বিদেশিকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না।

বাংলাদেশে অবৈধভাবে থাকা বিদেশিদের মধ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারতের নাগরিক বেশি বলে ধরে নেওয়া হয়। সেই কারণে তার ওই ঘোষণা অবৈধ ভারতীয়দের লক্ষ্য করেই বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এরপর দিল্লি পুলিশ ভারতের রাজধানীতে অবৈধ বাংলাদেশিদের ধরতে অভিযান শুরু করে। এখন অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী শিক্ষার্থীদের শনাক্তেও দিল্লির সব স্কুলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের পরিচয় যথাযথভাবে শনাক্তও যাচাইয়ের বিষয়টিও আছে নির্দেশনাতে।

শনিবার দিল্লি মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের (এমসিডি) জারি করা ওই নির্দেশনাটি প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লি সরকারের প্রধান সচিবের (গৃহ বিভাগ) সভাপতিত্বে গত ১২ ডিসেম্বর এমসিডি একটি ভার্চুয়াল সভা আয়োজন করে। এতে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে স্কুলে তাদের শনাক্তকরণ ও তাদের জন্ম সনদ না দেওয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত