Beta
বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

অসুস্থতা, কেলেঙ্কারি ও বিরোধে ক্ষয়প্রাপ্ত ব্রিটিশ রাজপরিবার

রাজা তৃতীয় চার্লস। ছবি: রয়টার্স।
রাজা তৃতীয় চার্লস। ছবি: রয়টার্স।
[publishpress_authors_box]

ক্যান্সার ধরা পড়ার পর দীর্ঘদিন আড়ালে ছিলেন যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস। আগামী রবিবার তিনি এক রাজকীয় অনুষ্ঠানে ফের জনসম্মুখে হাজির হবেন। কিন্তু ওই অনুষ্ঠানে সিংহাসনের উত্তরসূরি এবং রাজার বড় ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম ও তার স্ত্রী কেট মিডলটন উপস্থিত থাকতে পারছেন না। তাদের এই অনুপস্থিতির মধ্য দিয়ে অসুস্থতা, কেলেঙ্কারি ও পরিবারের মধ্যে বিরোধে ব্রিটিশ রাজতন্ত্র কতটা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে সেটাই প্রকাশ হবে।

বাকিংহাম প্যালেস বলেছে, ৭৫ বছর বয়সী রাজা তার স্ত্রী রানি ক্যামিলার সঙ্গে উইন্ডসর ক্যাসেলে ঐতিহ্যবাহী ইস্টার সানডে গির্জা সেবায় যোগ দেবেন। বার্ষিক এই অনুষ্ঠানে সাধারণত রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সব সদস্যরা অংশগ্রহণ করে থাকেন।

কিন্তু সম্প্রতি রাজবধূ কেট মিডলটনেরও ক্যান্সার ধরা পড়ায় প্রিন্স উইলিয়াম তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। গত সপ্তাহে অনলাইনে প্রকাশিত এক ভিডিওতে কেট জানান, তার ক্যান্সার ধরা পড়ায় তিনি কেমোথেরাপির চিকিৎসা নেওয়া শুরু করেছেন।

পিপল সাময়িকীর রাজপরিবার বিষয়ক জ্যেষ্ঠ সম্পাদক এরিন হিল বলেন, “রাজা তৃতীয় চার্লস সিংহাসনে বসার সময় রাজপরিবার আকার ছোট করে আনার কথা বলেছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশ রাজ পরিবারের আকার এখন যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে এতটা ছোট হওয়ার আশা নেই। সামনে ব্রিটিশ রাজপরিবারের জন্য একটি জটিলতাপূর্ণ সময় অপেক্ষা করছে।”

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের জন্য এক অনিশ্চিত সময়ে সিংহাসনে বসেন তার বড় ছেলে রাজা তৃতীয় চার্লস। গত কয়েক দশক ধরে যুক্তরাজ্য ও এর কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে রাজতন্ত্রের প্রতি বিমুখতা বেড়ে চলছিল। জনগণের টাকায় রাজপরিবারের বিশাল ব্যয়ভার বহন নিয়ে বহুদিন ধরেই সমালোচনা চলে আসছে। বলা হচ্ছে, রাজ পরিবারের দূরবর্তী আত্মীয়রাও জনগণের টাকায় বিলাসী জীবন যাপন করেন।

এসব কারণে রাজা তৃতীয় চার্লস সিংহাসনে বসার আগে থেকেই স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেন যে, তিনি রাজপরিবারের আকার আরও ছোট করে ফেলবেন এবং রাজকীয় আড়ম্বরও কমিয়ে আনবেন।

কিন্তু পরিস্থিতি এমন দিকে গড়িয়েছে যে, রাজা তৃতীয় চার্লস এখন প্রায় পুরোপুরি একা হয়ে পড়েছেন। রাজা সিংহাসনে বসার আগেই তার ছোট ছেলে প্রিন্স হ্যারি (৩৯) ও তার স্ত্রী মেগান স্বেচ্ছায় রাজকীয় পদবী ও দায়িত্ব ছেড়ে তিন বছর আগেই যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন।

আর প্রয়াত মার্কিন যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং সতের বছর বয়সী এক কিশোরীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কের কেলেঙ্কারির জেরে চার্লসের ছোট ভাই প্রিন্স অ্যান্ড্রুকে ২০১৯ সালেই রাজ পরিবার থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তার সকল ধরনের রাজকীয় উপাধিও কেড়ে নেওয়া হয়। তাকে তাদের মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের আদেশেই তা করা হয়েছিল।

রাজপরিবার ছাঁটাইয়ের ধারণাটি ‘ভালো নয়’

রাজার ছোট বোন প্রিন্সেস অ্যান গত বছর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “রাজ পরিবারের আকার ছোট করার ধারণা এমন দিনে সামনে এসেছিল যখন রাজপরিবারে অনেক মানুষ ছিল। সেসময় ধারণাটি ঠিক ছিল।কিন্তু এখন আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেখান থেকে আমাকে বলতে হবে, এটি এখন আর কোনও ভাল ধারণার মতো শোনাচ্ছে না। আমি নিশ্চিত না যে আর কী আমরা করতে পারি।”

দাপ্তরিকভাবে কর্মরত অবশিষ্ট রাজপরিষদের মধ্যে যারা আছেন, তারাও অনেকেই প্রয়াত রানি এলিজাবেথের প্রজন্মের। যারা রাজার জন্য বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। যেমন, নতুন ভবন খোলা, সম্মান প্রদর্শন করা এবং বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করা।

রানী এলিজাবেথের তুতো বোন এবং দীর্ঘদিনের বন্ধু প্রিন্সেস আলেকজান্ড্রাকেও (৮৭) খুব কমই জনসমক্ষে দেখা যায়। এলিজাবেথের তুতো ভাই ডিউক অব কেন্ট প্রিন্স এডওয়ার্ড ও ডিউক অব গ্লুচেস্টার প্রিন্স রিচার্ডও যথাক্রমে ৮৮ ও ৭৯ বছর বয়সী।

প্রিন্সেস অ্যান প্রায়ই রাজ পরিবারের সবচেয়ে পরিশ্রমী সদস্যদের তালিকার শীর্ষে থাকেন। তবে তিনিও এই বছর ৭৪ বছর বয়সী হবেন। তার ছেলে পিটার ফিলিপস এই সপ্তাহে বলেছিলেন, তিনি সম্ভবত তার প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করছেন।

অস্ট্রেলিয়ার স্কাই নিউজকে পিটার বলেন, “তিনি এখনও বিদেশ ভ্রমণ করছেন এবং ২৪ ঘণ্টা ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যা বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে বেশ কঠিন। তবে বয়স ৭০ পেরিয়ে যাওয়ার পরও এভাবে কাজ করতে পারাটা অসাধারণ ব্যাপার।”

পিটার বলেন, “বেশ কিছুদিন ধরেই রাজ পরিবারের কিছু সদস্যের ওপর কাজের চাপ একটু বেশি পড়ছে।” তার মায়ের পাশাপাশি তিনি ক্যামিলা ও চার্লসের ছোট ভাই প্রিন্স এডওয়ার্ড ও স্ত্রী সোফির অতিরিক্ত পরিশ্রমের কথাও বলেন। তারা বর্তমানে এডিনবার্গের ডিউক ও ডাচেস।

রাজকীয় জীবনীকার ক্লডিয়া জোসেফ বলেন, ক্যান্সার ধরা পড়ার পর চার্লসের অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রী ক্যামিলা ও ছেলে উইলিয়াম রাজকীয় দায়িত্ব যেভাবে সামলেছেন, তা সহজ ছিল না।

রাজ পরিবারে মানুষ কমে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ব্যক্তিগত পর্যায়ে, এটি রাজপরিবারের জন্য ভয়ঙ্কর হতে চলেছে। ব্যবহারিক স্তরে বিষয়টি রাজকীয় কার্যক্রমকে স্বাভাবিক রাখাটা কঠিন করে তুলতে পারে।”

বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে যে, রাজপরিবারের বেশিরভাগ সদস্য এখনও নিবেদিত প্রাণ। তবে বয়স্করা রাজকীয় কাজকর্মে যতটা আন্তরিক তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সেই আন্তরিকতা নেই। তরুণদের মধ্যে উদাসীনতা বাড়ছে।

প্রিন্স এডওয়ার্ডের বয়স এই মাসে ৬০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। আর প্রিন্সেস সোফি পরের বছর একই মাইলফলকে পৌঁছাবেন।

উইলিয়াম ও কেটের সন্তানদের রাজকীয় দায়িত্ব পালনে আসতে আরও অন্তত ১০ বছর সময় লাগবে।

রাজকীয় লেখক টিনা ব্রাউন বলেছেন, ব্রিটিশ রাজপরিবার অনেক বেশি ছোট হয়ে গেছে। এতে উইলিয়াম ও কেটের উপর অনিয়ন্ত্রিত চাপ পড়ছে।

টিনা গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্ক টাইমসে লিখেছেন, “উইলিয়ামের পর তার স্ত্রী কেটই রাজপরিবারের সবচেয়ে জনপ্রিয় সদস্য। ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ভবিষ্যত একটি মাত্র সুতোয় ঝুলে আছে, আর সেই সুতোটি হলেন কেট মিডলটন।”

কিন্তু দুঃসংবাদটি হলো কেট মিডলটনও গত সপ্তাহে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার খবর দিয়েছেন।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত