অভিনব কোষ থেরাপির মাধ্যমে চীনা বিজ্ঞানীরা একজন ডায়াবেটিক রোগিকে সম্পূর্ণ সুস্থ করেছেন। এই ঘটনাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে যুগান্তকারী সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
চীনের সাংহাই চাংঝেং হাসপাতাল ও চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের অধীনে সেন্টার ফর এক্সেলেন্স ইন মলিকিউলার সেল সায়েন্সের একদল বিজ্ঞানী নতুন এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এর বিস্তারিত গত ৩০ এপ্রিল সেল ডিসকভারি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন বলছে, ওই রোগী ২০২১ সালের জুলাইয়ে কোষ প্রতিস্থাপন চিকিৎসা গ্রহণ করেছিলেন।
চিকিৎসার এগার সপ্তাহের পর ওই রোগিকে আর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিন নিতে হয়নি।
২০২২ সালে তিনি ধীরে ধীরে তার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে মুখে খাওয়ার ওষুধের মাত্রা কমাতে থাকেন। পরে এক পর্যায়ে তিনি ওষুধ খাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করেন।
সেল থেরাপি পদ্ধতির আবিষ্কারক দলেন প্রধান হলেন বিজ্ঞানী ইন।
তিনি বলেন, “অনুসন্ধানের ফলে দেখা যায়, রোগির অগ্ন্যাশয়ের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার হয়েছে। তিনি বর্তমানে ৩৩ মাস ধরে ইনসুলিন নিচ্ছেন না।”
এই সাফল্য ডায়াবেটিস নিরাময়ে সেল থেরাপির ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।
ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলুলার ও শরীরবৃত্তীয় বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক টিমোথি কিয়েফার এই গবেষণার প্রশংসা করেছেন।
তিনি বলেন, “আমার মনে হয় এই গবেষণা ডায়াবেটিসের জন্য সেল থেরাপির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।”
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা শরীরে খাবারকে শক্তিতে রূপান্তর করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। এটি যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে হৃদরোগ, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া ও কিডনি রোগের মতো গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
ডায়বেটিসের চিকিৎসা মূলত ইনসুলিন, ওষুধ এবং ক্রমাগত পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করে।
আবিষ্কৃত এই পদ্ধতিতে রোগির নিজের কোষ ব্যবহার করে অগ্ন্যাশয়ের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করা হয়।
এক্ষেত্রে প্রথমে রোগির রক্ত থেকে নির্দিষ্ট ধরণের কোষ সংগ্রহ করা হয়। পরে সেগুলোকে ল্যাবরেটরিতে প্রক্রিয়াজাত করে ‘বীজ কোষে’ রূপান্তরিত করা হয়।
সেই বীজ কোষগুলো একটি কৃত্রিম পরিবেশে রাখা হয়। এরপর সেগুলো ওই রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়।
চীনে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এটি তাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করে।
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের মতে, চীনে ১৪০ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে ৪০ মিলিয়ন মানুষকে ইনসুলিনের উপর নির্ভর করতে হয়।
অধ্যাপক টিমোথি কিয়েফারের মতে, এই কোষ থেরাপি পদ্ধতি বৃহত্তর গবেষণায় কার্যকর প্রমাণিত হলে এটি রোগীদের দীর্ঘস্থায়ী ওষুধের বোঝা থেকে মুক্ত করতে পারে। এর ফলে মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং চিকিৎসা ব্যয় কমবে।
তথ্যসূত্র : সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।