মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বাড়লেও জিনিসপত্রের দামে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, অত্যাবশ্যকীয় সব পণ্যে শুল্ক শূন্য করে দেওয়া হয়েছে, সেই ছাড়টাও দেখতে হবে।
শুল্ক-কর বাড়ানোর বিষয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা।
বুধবার ৪৩টি পণ্য ও সেবায় মূসক বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। পাশাপাশি কিছু পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে সম্পূরক ও আবগারি শুল্ক বাড়ানোরও উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের মূল্যস্ফীতির মূল ওয়েটের ইন্ডিকেটরগুলো হলো চাল, ডাল এগুলো। আমরা যেসব জিনিসের ওপর কর বাড়াচ্ছি, এগুলো মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে খুবই কম গুরুত্বপূর্ণ।
“অত্যাবশ্যকীয় সব পণ্যের শুল্ক কমিয়ে জিরো (শূন্য) করে দেওয়া হয়েছে। আপনারা সেই ছাড়টা দেখবেন।”
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “তিন তারকার ওপর যে রেস্টুরেন্টগুলো, সেগুলোর ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। ভাতের রেস্টুরেন্ট বা অন্য রেস্টুরেন্ট থেকে তো যাবে না।”
বিমানভাড়ার ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়ানোর উদ্যোগের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “বিমানের ভাড়ার ক্ষেত্রে আগে ৫০০ টাকা ছিল, সেটি ২০০ টাকা বাড়ানো হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ বিমানে এখন লোকজন মোটামুটি চড়ে। তারা ২০০ টাকা বেশি দিতে পারবে না বলে মনে হয় না। এগুলো মার্জিনাল।
“পৃথিবীর কোনও দেশেই, এমনকি নেপাল, ভুটানেও, বাংলাদেশের মতো এত কম কর (ট্যাক্স) নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ক্ষেত্রে আমরা সব সময় বলেছি, সেখানে আমরা প্রায় জিরো করে নিয়ে আসব।”
অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ মাসের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এটা করার কারণটা হলো, যে ছাড় দিয়েছি, সেটা হিসাব করে…কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে। আর আমাদের রাজস্ব ঘাটতি এত বেশি, আমি তো আর বড় করে ঘাটতি অর্থায়ন (ডেফিসিট ফাইন্যান্সিং) করে এগোতে পারব না।”
আইএমএফের পরামর্শে এটি করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “না, সবদিক চিন্তাভাবনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
সরকারের এ সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষের কষ্ট হবে কি না জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “মনে হয় না কষ্ট হবে।”
এনবিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব পণ্য ও সেবায় বর্তমানে ৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেস্তোরাঁয় এখন খাওয়ার বিলের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়; যা বেড়ে ১৫ শতাংশ হচ্ছে। বর্তমানে তৈরি পোশাকের আউটলেটে বিলের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে; সেটিও বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
একই সঙ্গে মিষ্টির দোকান ও নন-এসি হোটেলে সেবার ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে।
উৎপাদন পর্যায়ে বিস্কুট, আচার, সিআর কয়েল, ম্যাট্রেস, ট্রান্সফরমার, টিস্যু পেপার এবং বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ড্রাইভিং লাইসেন্সের কার্ড বানানোর সময়ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকার।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে টার্নওভার কর বসানোরও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এখন ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত টার্নওভারে কর দিতে হয়। নতুন সিদ্ধান্তে বছরে ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা লেনদেন হলেই টার্নওভার কর দিতে হবে।
আর বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকার বেশি হলে সকল পণ্য ও সেবা বেচাকেনায় ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বসানোর প্রস্তাব করেছে এনবিআর।
মদ পানের বিলের ওপর বিদ্যমান ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আমদানি পর্যায়ে ফলের রসে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ; তামাকে ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ; সুপারিতে ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া মোবাইল ফোনে কথা বলায় (টকটাইম) সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে।
উড়োজাহাজের টিকেটের ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক বাড়ছে। দেশের ভেতরে বিমানযাত্রায় আবগারি শুল্কের পরিমাণ ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা, বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সার্কভুক্ত দেশ ভ্রমণে ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা হতে পারে।
সার্কভুক্ত দেশের বাইরে কিন্তু এশিয়ার মধ্যে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক ২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা এবং ইউরোপ ও আমেরিকা ভ্রমণের ক্ষেত্রে ৩ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা করা হতে পারে।