জশ হ্যাজেলউড ফিট থাকলে খেলতে পারতেন না স্কট বোল্যান্ড। ডানহাতি পেসার না থাকলেই অস্ট্রেলিয়া দলে সুযোগ মেলে তার। কিন্তু যখনই সুযোগ পান, নিজের সেরাটা দিয়ে দলকে সাহায্য করে চলেছেন বোল্যান্ড। সিডনি টেস্টের প্রথম ইনিংস সেটির বড় প্রমাণ। এই পেসারের ঝড়ে এলোমেলো ভারত।
বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি হাতছাড়া হওয়া বাঁচাতে সিডনি টেস্টে জয়ের বিকল্প নেই ভারতের। এই টেস্ট ড্র হলেও সিরিজ জিতে নেবে অস্ট্রেলিয়া। বাঁচা-মরার এই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে আবারও ব্যর্থ ভারতের ব্যাটাররা। বোল্যান্ড-মিচেল স্টার্কদের চমৎকার বোলিংয়ে প্রথম ইনিংসে ৭২.২ ওভারে ১৮৫ রানে অলআউট হয়েছে সফরকারীরা। অস্ট্রেলিয়ার শুরুটাও ভালো হয়নি। দিনের শেষ বলে আউট হয়ে গেছেন উসমান খাজা। দিনশেষে স্বাগতিকদের রান ৩ ওভারে ১ উইকেটে ৯।
ভারতের নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মা এই টেস্টে নেই। অফফর্মের কারণে নিজে থেকেই একাদশ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতে ভারতকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জসপ্রিত বুমরা। এই পেসার টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। তবে তার সিদ্ধান্ত অস্ট্রেলিয়ার জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। ভারতের ১৮৫ রানে অলআউট তো সেটাই বলছে।
রোহিত না থাকায় ওপেনিংয়ে ফেরা লোকেশ রাহুল শুরুতেই আউট। মিচেল স্টার্কের বলে স্যাম কনস্টাসকে ক্যাচ দিয়ে ৪ রান করে বিদায় নেন তিনি। খানিক পর বোল্যান্ডের শিকার হয়ে ১০ রানে ফেরেন যশস্বী জয়সওয়াল। তাতে ১৭ রানে ২ উইকেট হারায় ভারত।
সিডনি টেস্ট দিয়ে আবার একাদশে ফেরা শুবমান গিল ও বিরাট কোহলি শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন। অবশ্য মুখোমুখি প্রথম বলেই আউট হতে পারতেন কোহলি। এই টেস্টে নতুন ক্যাচ-বিতর্ক তৈরি হয়েছে কোহলিকে ঘিরে। বল তার ব্যাট ছুঁয়ে গেলে স্লিপে দাঁড়ানো স্টিভেন স্মিথ ঝাঁপিয়ে তালুবন্দি করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি তালুতে জমাতে না পারলেও ছুটে যাওয়া বল ধরেন মার্নাস লাবুশেন। অস্ট্রেলিয়া উইকেট উদযাপানে মাতে।
ফিল্ড আম্পায়ার ছিলেন বাংলাদেশের শরফুদ্দৌলা ইবনে সৈকত। যিনি আগের টেস্টে টিভি আম্পায়ার হিসেবে দিয়েছিলেন গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশি এই আম্পায়ার কোহলির আউটের সিদ্ধান্তের ভার তুলে দেন টিভি আম্পায়ার জোয়েল উইলসনকে। তিনি ‘নট আউট’ ঘোষণা করেন কোহলিকে।
সেবার বেঁচে যাওয়া কোহলি অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ওই বোল্যান্ডের বলে স্লিপে ধরা পড়েন বাউ ওয়েবস্টারের হাতে। ১৭ রানে থামে তার ইনিংস। কোহলি আউট হওয়ার আগেই ফিরে যান গিল। নাথান লায়নের বলে আউট হওয়ার আগে করেন ২০ রান।
কোহলি-গিলের বিদায়ের পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেছিলেন ঋষভ পন্ত ও রবীন্দ্র জাদেজা। সময়ের দাবি মিটিয়ে ব্যাট করেছিলেন তারা। কিন্তু ৯৭ বল খেলা পন্ত অপ্রয়োজনীয় শট খেলে উইকেট বিলিয়ে আসেন। বোল্যান্ডের শর্ট বল পুল করতে গিয়ে প্যাট কামিন্সের হাতে ধরা পড়েন । ৯৮ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় তিনি খেলেন ৪০ রানের ইনিংস।
পন্তকে আউট করার পর হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন বোল্যান্ড। কারণ পরের বলেই অস্ট্রেলিয়ান পেসার ফেরান নিতিশ কুমার রেড্ডিকে। মেলবোর্ন টেস্টে সেঞ্চুরি পাওয়া এই ব্যাটার প্রথম বলেই স্লিপে ক্যাচ দেন স্টিভেন স্মিথকে। খানিক পর স্টার্ক তুলে নেন জাদেজার উইকেট (২৬)।
মেলবোর্নের মতো সিডনিতেও প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর। তবে ৩০ বলে ১৪ রানে তাকে থামান কামিন্স। দলের বিপর্যয়ের মধ্যে শেষ দিকে ব্যাট হাত ঝড় তুলেছিলেন বুমরা। তার আক্রমাণত্মক ব্যাটিংয়েই ভারতের রান একটু বেড়েছে। ভারতীয় অধিনায়ক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক কামিন্সের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ১৭ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় করেন ২২ রান।
অস্ট্রেলিয়ার সেরা বোলার নিঃসন্দেহে বোল্যান্ড। এই পেসার ২০ ওভারে ৩১ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। স্টার্ক ৪৯ রান খরচায় পেয়েছেন ৩ উইকেট। এছাড়া কামিন্স ৩৭ রানে নেন ২ উইকেট।