ঘুষ ও প্রতারণার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা ও প্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে ভারতের আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির বিরুদ্ধে। এই ঘটনার পরই আদানি গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমতে শুরু করেছে।
শুধু কি তাই কেনিয়া আদানির সঙ্গে করা চুক্তিও বাতিল করেছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়াও আদানির বিরুদ্ধে এনেছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। এসব ঘটনায় বেশ চাপেই পড়েছেন ভারতের আদানি শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার ও বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি গৌতম আদানি।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের এই পদক্ষেপ ৬২ বছর বয়সী ধনকুবের আদানির জন্য নতুন এক ধাক্কা। তার ব্যবসার সাম্রাজ্য ছড়িয়ে আছে বন্দর ব্যবস্থাপনা থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি পর্যন্ত। বিশ্বজুড়ে তার ১৬৯ বিলিয়ন ডলারের সাম্রাজ্য মুখ থুবড়ে পড়তে শুরু করেছে।
মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় উদযাপন করে দেশটির জ্বালানি ও অবকাঠামো প্রকল্পে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন আদানি।
কিন্তু বুধবার মামলার পরদিনই আদানির সঙ্গে আড়াই বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের দুটি চুক্তি বাতিল করেছে কেনিয়া।
অন্যদিকে ধস নেমেছে আদানির বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার দরেও। আদানির গ্রুপের ফ্ল্যাগশিপ কোম্পানি আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ার দর কমেছে ২৩ শতাংশ।
এছাড়া আদানি পোর্ট, আদানি টোটাল গ্যাস, আদানি গ্রিন, আদানি পাওয়ার, আদানি উইলমার, আদানি এনার্জি সলিউশন, আম্বুজা সিমেন্ট, এসিসি ও এনডিটিভির শেয়ারের দাম কমেছে ৯ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত।
আদানি এক সময় কিছু সময়ের জন্য বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি ছিলেন। এর আগে গত বছর নিউইয়র্ক-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চের এক রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরও গৌতম আদানির মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের মূল্যে ধস নামে।
গৌতম আদানি ও তার কয়েকজন সহযোগীর বিরুদ্ধে গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ফেডারেল আদালতের কৌঁসুলিরা ঘুষ ও প্রতারণার অভিযোগ আনেন। তাদের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ পেতে ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়া এবং এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগকারীদের কাছে তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
নিউ ইয়র্কের প্রসিকিউটররা দাবি করেছেন, ভারতের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি আদানি ও তার অন্য শীর্ষ নির্বাহীরা তার নবায়নযোগ্য জ্বালানি কোম্পানির জন্য কাজ পেতে চুক্তির জন্য রাজি করাতে ভারতীয় কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে সম্মত হয়েছিল।
রয়টার্স জানিয়েছে, চুক্তিটি করা গেলে আদানির কোম্পানি ভারতের সবচেয়ে বড় সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কাজ পেত, যা থেকে ২০ বছরে তাদের ২০০ কোটি ডলার লাভ হত।
আদানি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ট মিত্র। সমালোচকরা দীর্ঘ দিন ধরে মোদির কাছ থেকে অনুচিতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য আদানিকে দোষারোপ করে আসছিলেন। ভারতের বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধীও তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
ভারতের অর্থনীতিতে ধাক্কা
এসব অভিযোগের ফলে ইতোমধ্যেই আদানি গ্রুপ এবং ভারতের অর্থনীতিতেও ধাক্কা লেগেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলো মোট ৩৪ বিলিয়ন ডলার বাজারমূল্য হারিয়েছে। ফলে তার ১০টি কোম্পানির সম্মিলিত বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছে ১৪৭ বিলিয়ন ডলারে।
অভিযোগের কেন্দ্রে থাকা আদানি গ্রীন এনার্জি কোম্পানি ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বন্ড অফারিং স্থগিত করার কথা জানিয়েছে। এছাড়া ভারতের ব্যবসা বাণিজ্য ও রাজনীতির ওপর এর কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
ভারতের অর্থনীতি গভীরভাবে আদানি গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আদানি দেশটির শীর্ষস্থানীয় অবকাঠামো ব্যবসায়ী। তিনি ১৩টি বন্দর (৩০ শতাংশ পণ্য চলাচল), ৭টি বিমানবন্দর (২৩ শতাংশ যাত্রী চলাচল) এবং ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সিমেন্ট ব্যবসা (মোট বাজারের ২০ শতাংশ) পরিচালনা করেন।
ছয়টি কয়লাচালিত বিদ্যুৎ প্লান্টসহ আদানি ভারতের সর্ববৃহৎ বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদক। একই সঙ্গে তিনি গ্রিন হাইড্রোজেনে ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পাশাপাশি ৮ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন পরিচালনা করছেন।
আদানি ভারতের দীর্ঘতম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছেন এবং দেশের বৃহত্তম বস্তিরও পুনর্নির্মাণ করছেন। তিনি ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে কর্মসংস্থান দিয়েছেন। কোটি কোটি মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলছে আদানি গ্রুপ।
ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় তার কয়লা খনিসহ আফ্রিকায় বিশাল অবকাঠামো প্রকল্পও রয়েছে।
আদানি গ্রুপের পোর্টফোলিও মোদির নীতিগত অগ্রাধিকারগুলোকে চমৎকারভাবে প্রতিফলিত করে। যার শুরু হয় অবকাঠামো দিয়ে এবং সম্প্রতি সবুজ জ্বালানি শক্তিতে সম্প্রসারিত হয়েছে।
মোদীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত করে সমালোচকরা আদানির ব্যবসায় সাম্রাজ্যকে ক্রোনি ক্যাপিটালিজম বা স্বজন-পোষণের পুঁজিবাদ বলে আখ্যায়িত করে।
একজন সফল ব্যবসায়ী হিসাবে আদানি বিভিন্ন বিরোধী নেতা ও রাজ্যের সঙ্গেও সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। সেসব রাজ্যগুলোতে বিনিয়োগও করেছেন।
আদানি গ্রুপ সম্পর্কে লেখালেখি করা ভারতীয় সাংবাদিক পরাঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা বলেন, “এটি একটি বড় ঘটনা। আদানি এবং মোদী অনেক বছর ধরে অটুট সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। এটি ভারতের রাজনৈতিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে।”
এই সংকটটি এমন সময় এসেছে, যখন আদানি প্রায় দুই বছর ধরে তার ইমেজ পুনর্গঠন করার চেষ্টা করছেন। ২০২৩ সালে ইউএস শর্ট-সেলার হিনডেনবার্গ রিসার্চ তার কনগ্লোমারেটকে দশকব্যাপী স্টক ম্যানিপুলেশন এবং প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত করে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল।
আদানি এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও তা বাজারে চাপ সৃষ্টি করেছে এবং ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি একটি তদন্ত শুরু করেছে।
আমেরিকান থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক উইলসন সেন্টারের মাইকেল কুগেলম্যান বিবিসিকে বলেছেন, “আদানি তার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন। তিনি দেখানোর চেষ্টা করছেন যে, হিন্ডেনবার্গ গ্রুপ আগে যে প্রতারণার অভিযোগ করেছিল তা সত্য ছিল না। তার কোম্পানি এবং তার ব্যবসাগুলোও আসলে বেশ ভাল কাজ করছে। গত এক বছরে বেশ কিছু নতুন চুক্তি এবং বিনিয়োগ করা হয়েছে। তাই এই বিলিওনিয়ারের জন্য এটি কেবল একটি বাহ্যিক আঘাত, যিনি সেই আগের অভিযোগগুলোর সম্ভাব্য ক্ষতি ঝেড়ে ফেলার জন্য খুব ভাল কাজ করেছিলেন।”
এখন আদানির অর্থনির্ভর প্রকল্পগুলোতে দেশীয় বাজারে মূলধন সংগ্রহ করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
আমবেরীশ বালিগা নামের একজন স্বাধীন বাজার বিশ্লেষক বিবিসিকে বলেছেন, “বাজারের প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে যে, এটি কতটা গুরুতর। এরপরও আদানি তার প্রধান প্রকল্পগুলোর জন্য অর্থায়ন পাবে, তবে তা বিলম্বিত হবে।”
সাম্প্রতিক অভিযোগগুলো আদানির বৈশ্বিক সম্প্রসারণ পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। কেনিয়া ও বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অধিগ্রহণ এবং একটি বিতর্কিত জ্বালানি চুক্তি নিয়ে ইতোমধ্যেই তাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের লি কং চিয়ান প্রফেসর নির্মল্য কুমার বিবিসিকে বলেছেন “এই ঘুষের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কিত তার আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণ পরিকল্পনাকেও থামিয়ে দেয়।”
আদানি কি গ্রেপ্তার হবেন
ভারতের বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী যথাযথভাবে আদানির গ্রেপ্তার দাবি করেছেন এবং সংসদে বিষয়টি তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
নির্মল্য কুমার বলেন, “ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়া নতুন কিছু নয়। কিন্তু উল্লেখিত পরিমাণ অত্যন্ত চমকপ্রদ। আমার সন্দেহ, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কিছু ব্যক্তির নাম আছে, যারা এই ঘুষ নিয়েছিল। এটি ভারতের রাজনৈতিক দৃশ্যে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। সামনে আরও অনেক কিছু ঘটতে পারে।”
আদানির লোকেরা নিঃসন্দেহে শীর্ষস্থানীয় আইনগত প্রতিরক্ষা তৈরি করবে। কুগেলম্যান বলেন, “এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে শুধু অভিযোগের খসড়া রয়েছে। অনেক কিছু এখনও প্রকাশ হতে বাকি।”
কুগেলম্যানের মতে, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত ব্যবসায়িক সম্পর্ক নিরীক্ষণের মুখোমুখি হলেও বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় একটি বন্দর প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্র আদানির সঙ্গে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে। গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-ভারত ব্যবসায়িক সম্পর্ক দৃঢ় রয়েছে।
“যুক্তরাষ্ট্র-ভারত ব্যবসায়িক সম্পর্ক খুব বড় এবং বহুমুখি। এমন একজন বড় ব্যবসায়ী, যিনি ভারতের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, তার বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও, আমি মনে করি না যে, এটি সেই সম্পর্কের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।”
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকলেও আদানিকে গ্রেপ্তার করে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে কিনা তাও স্পষ্ট নয়। কারণ এটি নতুন প্রশাসনের ওপর নির্ভর করবে যে তারা এসব মামলা এগিয়ে নেবে কিনা।
বাজার বিশ্লেষক বালিগার বিশ্বাস, আদানির জন্য পরিস্থিতি নাজুক নয়। তিনি বলেন, “আমি এখনও মনে করি, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এবং ব্যাংকগুলো তাদের সহায়তা করবে, যেমনটি তারা হিনডেনবার্গ রিপোর্টের পর করেছে। কারণ তারা ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ও সফল খাতের অংশ।
“বাজারেও ধারণা হলো, ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণ করলে এটি হয়তো অচিরেই মিটে যাবে।”
এই ঘটনায় হোয়াইট হাউসও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দপ্তর বলেছে, এই ঘটনায় নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন নিবিড় সম্পর্কের উপর কোনও প্রভাব পড়বে না।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারিন জ্যাঁ পিয়ের সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘আমরা মনে করি ভারত-আমেরিকা দৃঢ় সম্পর্ক সমস্যা সমাধানের দিশা দেখাবে।’’
আমেরিকার তদন্তকারী সংস্থা এবং বিচার বিভাগকে আদানিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেশ করতে হবে জানিয়ে পিয়েরে বলেছেন, ‘‘আমরাও বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন।’’
এরপর কী
আদানিকে বিচারের মুখোমুখি করতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটরদের যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে থাকা প্রত্যার্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ভারতের কাছে চাইতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র আদানিকে চাওয়ার আবেদন করলে ভারতের আদালত সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। যেমন, আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি ভারতেও অপরাধ কিনা, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা বা যুক্তরাষ্ট্রে আদানির অমানবিক আচরণের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা।
আদানি এই প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে লড়তে পারেন। এই প্রক্রিয়া শেষ হতে কত সময় লাগবে তা স্পষ্ট নয়। আদানির বিরুদ্ধে ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে, তাই প্রত্যর্পণের বিষয়টির রাজনৈতিক দিকও রয়েছে।
আদানি কি আদালতে অভিযোগ খণ্ডন করতে পারবেন
এক কথায়, হ্যাঁ।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে হাজির হওয়ার আগ পর্যন্ত আদানির আইনজীবীরা একটি বিষয় চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। সেটি হচ্ছে, তারা যুক্তি দিতে পারেন, আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার এখতিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটরদের নেই।
আর আদানি যুক্তরাষ্ট্রের বিচারকের সামনে হাজির হলে তার আইনজীবীরা বলতে পারেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে আইনগত ঘাটতি আছে বা এর পক্ষে তথ্যপ্রমাণ নেই।
অভিযোগ দাখিলের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটরেরা ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক এবং মোবাইল ফোন ও মেসেজিং অ্যাপ রেকর্ড উপস্থাপন করেছেন।
আদানি তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কিছু অংশ স্বীকার করে প্রসিকিউটরদের কাছে শাস্তির পরিমাণ কমাতে আবেদনও করতে পারেন। যদিও প্রসিকিউটরেরা এমন আলোচনায় ঢুকতে বাধ্য নন। এছাড়া এ ধরনের কোনও চুক্তি হলে সেটি একজন বিচারক দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে।
আদানিকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রত্যর্পণ করা হলে বা তিনি নিজে যুক্তরাষ্ট্রে আত্মসমর্পণ করলেও বিচার শুরু হতে অনেক দেরি হতে পারে।
কী শাস্তি হতে পারে
অভিযোগ প্রমাণ হলে আদানির কয়েক দশকের জেল ও আর্থদণ্ড হতে পারে। তবে বিষয়টি বিচারকের ওপর নির্ভর করে।
আদানিকে অভিযুক্ত করতে হলে ১২ জনের একটি জুরিকে সর্বসম্মতিক্রমে ভোট দিতে হবে। এছাড়া আদানি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন।
কে এই আদানি
ভারতের গুজরাটে ১৯৬২ সালে জন্ম নেন গৌতম আদানি। ব্লুমবার্গ লিখেছে, গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যের ছাত্র ছিলেন তিনি। কিন্তু পড়াশুনা শেষ করেননি।
এরপর তিনি তার পিতার গার্মেন্টস ব্যবসায় যোগ না দিয়ে, হীরার ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন। আরও পরে তিনি তার ভাইয়ের প্লাস্টিক কারখানা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৮৮ সালে তিনি আদানি এক্সপোর্টস নামের একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন- যা পরে আদানি এন্টারপ্রাইজেসে পরিণত হয়। তার বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড়।
ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমেই আজ আদানির অঢেল সম্পদ। আদানি গ্রুপের অধীনে রয়েছে মোট সাতটি কোম্পানি।
বন্দর ব্যবস্থাপনা, কয়লা উৎপাদন এবং কয়লার ব্যবসা, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন, গ্যাস সরবরাহ, সড়ক ও রেলপথ নির্মাণ, প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ সরঞ্জাম উৎপাদন, বিমানবন্দর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা, আমদানি-রপ্তানি, পণ্য পরিবহন, আবাসন, ভোজ্যতেল, খাদ্যপণ্য এরকম নানা খাতে ব্যবসা রয়েছে কোম্পানিটির।
আদানি পাওয়ারের সঙ্গে চুক্তি, অভিযোগ খতিয়ে দেখছে অন্তর্বর্তী সরকার
বিদ্যুৎ আমদানির জন্য গৌতম আদানির মালিকানাধীন কোম্পানি আদানি পাওয়ারের সঙ্গে চুক্তি আছে বাংলাদেশেরও। ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় নির্মিত আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার জন্য ২৫ বছরের চুক্তিটি করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার।
সর্বোচ্চ গোপনীয়তা অনুসরণ করে করা এই চুক্তির আওতায় আদানি গ্রুপের কোম্পানির কাছ থেক বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার এই অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।
আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তিতে শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়গুলো কীভাবে সম্পাদন করা হয়েছে, তাতে কোনও ত্রুটি ছিল কি না, শুল্ক পরিহার বা প্রত্যাহারের বিষয় রয়েছে কি না; এমন আরও প্রশ্ন সামনে রেখে তদন্তে নামছে বাংলাদেশের কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরও।