Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

৬০ শতাংশ ভারতীয় বিবাহিতের চোখ অন্য সঙ্গীর দিকে!

ছবি: গ্লিডেনের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া
ছবি: গ্লিডেনের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া
Picture of আইরিন সুলতানা

আইরিন সুলতানা

‘এক পুরুষে আসক্ত নারী’ কথাটি কি আজকের দিনে তামাদি হতে চলেছে? পুরো কথা না শুনে এটুকুর ভিত্তিতে ক্ষেপে উঠতে মানা করেছে ইন্ডিয়া টুডে।     

বিবাহিত ব্যক্তিদের প্রেমের সুযোগ করে দেওয়ার ডেটিং সাইট গ্লিডেন এক জরিপ চালিয়ে দাবি করেছে, সঙ্গীর প্রতি অবিশ্বস্ত থাকার প্রবণতা অনেকটাই বেড়ে গেছে ভারতের সমাজে।

গ্লিডেন কী?

ভারতীয় সমাজে বিবাহিত বহির্ভূত সম্পর্কের হালহকিকত নিয়ে জরিপ বলে দিচ্ছে, গ্লিডেন এখানে বাজার বাড়াতে চায়।

আবার ইন্ডিয়া টুডে-তে অর্থাৎ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে গ্লিডেনের জরিপ শিরোনাম করার অর্থ হতে পারে, এই অ্যাপের চাহিদা রয়েছে অনেকের কাছে।   

২০০৯ সালে ফ্রান্সে গ্লিডেন ওয়েবসাইটের যাত্রা শুরু হয়। এদের ওয়েবসাইটে ‘গোপন প্রণয়ের’ সুবিধা গড়ে দিতে নিজেদের এক নম্বর দাবি করা হয়েছে। গ্লিডেন বলছে, নারীর জন্য পরিচালিত এই সাইট নারীদেরই সেবা দিচ্ছে। এদের অধিকাংশ গ্রাহকই ইউরোপীয়।

কোনো কোনো সূত্র বলছে, ভারতে খুব সম্ভবত গ্লিডেন অ্যাপ আইনগতভাবে বৈধ নয়।

আবার অন্যান্য সূত্রে দেখা যাচ্ছে, ২০১৭ সাল থেকে ভারতে চালু হয় গ্লিডেন। মহামারীর আগে ৮ লাখ ব্যবহারকারী থেকে পরের দুই বছরের মধ্যে ৯ লাখ ব্যবহারকারী হয় তাদের।

এই অ্যাপে নারী ও পুরুষ ব্যবহারকারীর অনুপাত ৬০:৪০।

প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারাটি ‘নারীদের জন্য অপমানজনক’ আখ্যা দিয়ে ২০১৮ সালে তা বাতিল করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

ভারতের আদালতে ‘ব্যভিচার অপরাধ নয়’ রায় হওয়ার পর গ্লিডেন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।

নারীর জন্য এই অ্যাপে কোনো সেবামূল্য ধার্য নেই। তবে পুরুষের বেলায় ২৫ ক্রেডিট পেতে এক হাজার রুপি, ১০০ ক্রেডিট পেতে তিন হাজার রুপি, ৪০০ ক্রেডিট পেতে সাত হাজার রুপি খরচ করতে হবে।

এই ক্রেডিট দিয়ে তারা বার্তা পাঠানোর পাশাপাশি চ্যাটিং সেবা এবং ভার্চুয়াল উপহার দিতে পারবেন।  

কী বলছে গ্লিডেন জরিপ?

বিয়ে, অবিশ্বস্ততা এবং সামাজিক প্রথা নিয়ে ভারতীয় সমাজ কোন দিকে চলেছে তা নিয়ে জরিপ চালিয়েছিল গ্লিডেন। সমাজে এসব মনস্তত্ত্ব কতটুকু জটিল আকার ধারণ করে আছে তা বুঝতে ১৫০৩ জন বিবাহিতকে বেছে নেয় তারা।

জরিপে অংশ নেওয়া এই ভারতীয়দের শহর অনুসারে টায়ার-১  এবং টায়ার-২ ভাগে ভাগ করা হয়; যাদের বয়স ছিল ২৫ বছর থেকে ৫০ বছর।  

গ্লিডেনের এই জরিপ দাবি করছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ প্রথা ভেঙ্গে নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন।

অনেক ক্ষেত্রে দুইজন সম্মত হয়ে যৌনসম্পর্কে থাকছে। এর অর্থ সম্পর্কে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার জায়গা থেকে সরে এসে বাঁধনহীন থাকার দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই।  

ভারতীয় সমাজে প্রতিশ্রুতি ও প্রেম সবসময়ই পবিত্র বলে মানা হয়।

কিন্তু গ্লিডেনের এই জরিপ বলছে, ভারতের সমাজে পরিবর্তন ঘটেছে এবং তা বোঝা যাচ্ছে খুব পরিস্কার ভাবেই।   

সঙ্গীর প্রতি অবিশ্বস্ততার আরেকটি দৃষ্টান্ত হলো, প্রেমে বা যৌন সম্পর্কে না জাড়িয়েও অন্য কারও প্রতি আকর্ষণ বোধ করা।

আর জরিপ বলছে, ৪৬ শতাংশের বেলায় এমন ঘটেছে।

অর্থাৎ অন্য কারও সঙ্গে যৌন সম্পর্কে না থেকেও সামজিকভাবে বৈধ সঙ্গীর প্রতি অবিশ্বস্ত থাকা যায়। অনেকে মানসিক দুর্বলতার মুহূর্তে কারও প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন; মানসিক আশ্রয় খোঁজেন অন্য কারও কাছে।

এও এক ধরনের অবিশ্বস্ততা, বলছে গ্লিডেন।  

তাদের জরিপ বলছে, আশ্চর্যজনকভাবে ৪৬ শতাংশ পুরুষ এ ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে আগ্রহী।

শহর ভেদে এই পরিসংখ্যানে কমবেশ হতে পারে। কলকাতায় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৫২ শতাংশ পুরুষের বেলায় এই মনোভাব দেখা গেছে।

ভার্চুয়াল জগতে বিশেষ করে ইনবক্সে অন্য কাউকে পটানোর চেষ্টা দেখা যায়; যাকে ফ্লার্ট করা বলে। এও অবিশ্বস্ততার একটি ধরন বলে জানাচ্ছে গ্লিডেন।

ফেইসবুকে নারীরা সাধারণত পুরুষদের ইনবক্সে এ ধরনের আচরণ নিয়ে বলে থাকেন।

গ্লিডেন বলছে, ৩৫ শতাংশ পুরুষ অনলাইনে ফ্লার্ট করাকে পছন্দ করেন। তবে নারীরাও পিছিয়ে নেই, বরং এগিয়ে; ৩৬ শতাংশ নারী ভার্চুয়াল মাধ্যমে ফ্লার্ট করতে চান।     

অঞ্চল ভেদে এমন আচরণের পার্থক্য দেখা যায়। জরিপে অংশ নেওয়া, কেরালা রাজ্যের কোচি শহরের ৩৫ শতাংশের মধ্যে এই প্রবণতা রয়েছে।

সঙ্গী ছাড়া স্বপ্নে অন্য কাউকে দেখে থাকেন ৩৩ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।

গ্লিডেন বলছে, নিজের সঙ্গী ছাড়াও অন্য কারও প্রতি আকর্ষণ বোধ করা এখন খুব স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।

জরিপের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৩৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৫ শতাংশ নারী খোলাখুলিভাবেই অন্য কারও প্রতি এমন আকর্ষণ থাকার কথা স্বীকার করেন।

রাজস্থান রাজ্যের রাজধানী জয়পুরে ২৮ শতাংশ এবং পাঞ্জাব রাজ্যের লুধিয়ানাতে ৩৭ শতাংশের মধ্যেও এই প্রবণতা আছে। এই উপাত্ত বলছে, অঞ্চল  ভেদে এ ধরনের অবিশ্বস্ততা ধারণকারীদের পরিসংখ্যানে কমবেশ থাকবে।

ভালোবাসার ভারতীয় সংস্করণ

যুগের পর যুগ ধরে আমাদের ভাবতে বাধ্য করা হয়, একজন সঙ্গীর সঙ্গে পুরো জীবন কাটিয়ে দিতে হবে।

এর বাইরে যে কোনো সম্পর্ককে সমাজে  ‘নোংরা’ ও  ‘অবৈধ’ ভাবা হয়।

ভারতে গ্লিডেনের কান্ট্রি ম্যানেজার সাইবিল শিড্ডেল বলেন. “এই জরিপটি আজকের দিনে ভারতীয়দের মধ্যে সম্পর্কের জটিল জগতকে দেখার দারুণ জানালা হয়ে উঠলো।

“এই জরিপ প্রচলিত ধারণাগুলোর দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ভালোবাসা, প্রতিশ্রুতি এবং ব্যক্তিগত ইচ্ছে পূরণে পরিবর্তনের ধরনকে বিবেচনায় নিতে সমাজের কাছে আহ্বান জানায়।”

গ্লিডেনের এই নারী কর্মকর্তা বলেন, “ব্যক্তির ইচ্ছেকে একটি দেশ কীভাবে গ্রহণ করে তাও দেখতে পাই আমরা। এসব দৃষ্টিভঙ্গি শুধু যে প্রচলিত ধ্যানধারণাকে নাড়িয়ে দিয়ে আজকের ভারতীয়দের সাহসী বলছে তা নয়; এই জরিপ ভালোবাসা এবং নিজস্ব প্রকাশভঙ্গির কথাও বলছে।”

গ্লিডেনের এই জরিপের উপর ভিত্তি করে ইন্ডিয়া টুডে বলছে, এরপর কখনও যদি নিজের সঙ্গী ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে আপনার মনে ভালোলাগা উঁকি দেয় তাহলে জেনে নিন, আপনি একা নন; এমন আরও অনেকেই আছেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত