৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের জন্য গোয়েন্দা ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং সাবেক প্রবাসী কল্যণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী।
বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার পূর্ব লন্ডনের কলিংউড হলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্যে এই দাবি করেন তিনি।
শফিকুর বলেন, “আগস্টের ৪ তারিখ পর্যন্ত আমরা অনুভব করতে পারি নাই। আামাদের যে বিভিন্ন সংস্থা ছিল, জানি না তারা কী করেছে, না করেছে। আমার প্রশ্ন- তারা কোথায় ছিল? কী দায়িত্ব পালন করেছে।”
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাইয়ের শুরুতে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, মাস গড়ানোর আগেই তা গণবিক্ষোভে রূপ নেয়। সরকারের কঠোর অবস্থান ও দমন পীড়নের মধ্যেও ৫ আগস্ট গণবিস্ফোরণে পতন ঘটে দেড় দশকের আওয়ামী লীগ সরকারের।
সেদিন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। ক্ষোভের আগুনে সারাদেশে জ্বলে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ও নেতা-কর্মীদের বাড়ি। অপ্রস্তত অবস্থায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ধরা পড়েন, কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে যান। সিলেটের নেতাদের অনেকে আছেন যুক্তরাজ্যে।
সিলেট ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর বলেন, সরকার হটানোর চক্রান্ত আগে থেকে চললেও গোয়েন্দা সংস্থা সতর্ক করেনি।
“ছাত্ররা যে স্লোগান দিল- তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার। এদের জন্মওতো একাত্তরে হয়নি। ওদেরকে দিয়ে স্লোগান দেওয়ানো হয়েছে। মাস্টারমাইন্ড ইউনূস (প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস) ছয় বছর আগে থেকে প্ল্যান করেছিল। কিন্তু আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা বুঝতে পারে নাই। নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করেছে, সেটা জানি না।”
শেখ হাসিনার দেশ ছাড়া নিয়ে শফিকুর বলেন, “আমাদের নেত্রী শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যুদ্ধ করেছেন, বাংলাদেশ ছেড়ে যাবেন না। তিনি যদি না যেতেন, ১৫ আগস্টের মতো আরেকটি নৃশংস ঘটনা ঘটত।”
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোন ভুল হলে সেজন্য ক্ষমা চেয়েছেন শফিকুর।
তিনি বলেন, “আমরা কেউ ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নই। আমি ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা চাই।
“বর্তমানে বাংলাদেশকে একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। বয়স্ক ভাতা,বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে এসব অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে হবে।”
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
আনোয়ার কয়েকমাস থেকে লন্ডনে অবস্থান করে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও বার্তায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে শফিকুর রহমান আত্মগোপনে ছিলেন। এক পর্যায়ে ভারত হয়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান তিনি।
তারপর এই প্রথম প্রকাশ্যে কোনও সভায় বক্তব্য রাখলেন শফিকুর। তবে গত ৮ ডিসেম্বর লন্ডনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে তাকে দর্শক সারিতে বসা দেখা গিয়েছিল। দিল্লিতে থাকা শেখ হাসিনা টেলিফোনে যুক্ত হয়ে ওই সভায় বক্তব্য রেখেছিলেন।