দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার আসামিদের থেকে ঘুষ গ্রহণ, জালিয়াতির মাধ্যমে প্লট বরাদ্দ নেওয়া এবং দুটি বড় টেলিকম অপারেটর থেকে শত কোটি টাকার ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি।
বুধবার এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, সাবেক কমিশনার জহুরুল হকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের পরিচালক এস এম এম আখতার হামিদ ভূঞাকে প্রধান করে গত রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন ইসলাম ও উপসহকারী পরিচালক মো. জাকির হোসেন।
সাবেক কমিশনার জহুরুল হকের বিরুদ্ধে দুদকে জমা হওয়া অভিযোগে বলা হয়, তিনি ঘুষ গ্রহণ ছাড়াও ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুদকের তদন্তাধীন মামলার আসামি থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন। জালিয়াতির মাধ্যমে রাজউক থেকে স্বামী-স্ত্রীর নামে ৫ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।
তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান থাকার সময় বড় দুটি টেলিকম অপারেটর থেকে শত শত কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণ করে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে বিভিন্ন দেশে একাধিক বাড়ি নির্মাণসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগও পেয়েছে দুদক।
এসব অভিযোগের বিধি মোতাবেক অনুসন্ধান কার্যক্রম সম্পন্ন করে নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে কমিটিতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
অনুসন্ধানকালে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কোনও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধকরণ অথবা কোনও সম্পত্তি ক্রোক করা হলে তা অনতিবিলম্বে লিখিতভাবে দুদকের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কমিটিকে।
অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়ে জানতে সংস্থাটির সাবেক কমিশনার জহুরুল হকের ফোনে একাধিকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
ইতোমধ্যে জহুরুল হকের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
তার পাসপোর্ট বাতিল করে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে গত ২৪ ডিসেম্বর ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরির্দশকে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি ক্রমশ জোরাল হয়ে ওঠে।
এরপর ব্যাপক রদবদল দেখে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা। সেই ধাক্কায় গত ২৯ অক্টোবর পদত্যাগ করেন দুদকের আগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং দুই কমিশনার সাবেক জেলা জজ জহুরুল হক ও সাবেক সচিব আছিয়া খাতুন।
২০২১ সালের ৩ মার্চ ৫ বছরের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন জহুরুল হক। ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর গ্রহণের পর ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি তাকে বিটিআরসির চেয়ারম্যান করেছিল সরকার।
মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ নেতৃত্বাধীন কমিশনের পদত্যাগের প্রায় দেড় মাস পর গত ১০ ডিসেম্বর সাবেক সচিব মোহাম্মদ আব্দুল মোমেনকে চেয়ারম্যান করে তিন সদস্যের কমিশন নিয়োগ দেওয়া হয়।
নতুন কমিশন যোগ দেওয়ার মাসেই গত ২৯ ডিসেম্বর আগের কমিশনের কমিশনার জহুরুল হকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়।