রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে বাংলাদেশে। এরপর থেকে সবকিছুতে রাজনীতি খোঁজেন অনেকে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক শীতল হওয়ার প্রভাব কি আইপিএল নিলামে পড়ল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই প্রশ্ন উঠতেও সময় লাগেনি। কেননা এবারের নিলামে দলই পাননি বাংলাদেশের ১২ ক্রিকেটারের কেউ।
শুধু তাই নয়, ১২ ক্রিকেটারের মধ্যে নিলামে ডাকা হয়েছে কেবল মোস্তাফিজুর রহমান ও রিশাদ হোসেনকে। তাদের কেনার আগ্রহ দেখায়নি কেউ। বাকি ১০ ক্রিকেটারের কাউকে নিলামে ডাকাই হয়নি!
এতে রাজনীতি খুঁজতে যাওয়াটা বোকামি। কেননা রাজনৈতিক কারণ থাকলে বাংলাদেশের কেউ নাম নিবন্ধন করতে পারতেন না। তাছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরও বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলে এসেছে ভারতে গিয়ে।
অহেতুক রাজনীতির সঙ্গে না মিশিয়ে বাংলাদেশের ১২ ক্রিকেটারের দল না পাওয়ার কারণ খোঁজা যাক। সম্ভাবনায় সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। গত আইপিএলে ছন্দে না থাকলেও মোস্তাফিজকে ২ কোটি রুপিতে কিনে আস্থা রেখেছিল চেন্নাই।
১৪ উইকেট নিয়ে এর প্রতিদানও দেন ‘কাটার মাস্টার’। তিনি দেশে ফেরার সময়ও ছিলেন আইপিএলের যৌথ সেরা উইকেট নেওয়া বোলার। তার সেরা পারফরম্যান্স ২৯ রানে ৪ উইকেট, ইকোনমি ছিল ৯.২৬।
সেই মোস্তাফিজকে এবার নিলামের আগে ছেড়ে দেয় চেন্নাই। শেষ পর্যন্ত তাকে আর কেনেনি চেন্নাই। এর বদলে ২ কোটি ৪০ লাখ রুপিতে ইংলিশ অলরাউন্ডার স্যাম কারেন আর ২ কোটিতে তারা কিনেছে অস্ট্রেলিয়ান পেসার নাথান এলিসকে। চেন্নাইয়ের নিজেদের মাঠ ছাড়া অন্য স্টেডিয়ামে খরুচে হওয়াতেই হয়তো এবার মোস্তাফিজকে নিয়ে আগ্রহ দেখায়নি চেন্নাই।
তাছাড়া এবারের নিলামে বাংলাদেশি সবার ক্রমিক নম্বর ছিল পেছনের দিকে। দল না পাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল তখনই। সবচেয়ে উপরে ১৮১ নম্বরে ছিলেন মোস্তাফিজ আর ১৮৭তে রিশাদ। প্রথম দিন স্বাভাবিকভাবে ডাক পাননি কেউ। নিলামের দ্বিতীয় দিন একটা পর্যায়ে দলগুলো যে ১৪৩ জনের তালিকা দেয় সেখানে নাম ছিল কেবল এই দুজনেরই।
আইপিএল নিলামে বাংলাদেশিদের ক্রমিক নম্বর
ক্রমিক নম্বর | খেলোয়াড় | ভিত্তিমূল্য (রুপি) |
১৮১ | মোস্তাফিজুর রহমান | ২ কোটি |
১৮৭ | রিশাদ হোসেন | ৭৫ লাখ |
২৪৭ | লিটন দাস | ৭৫ লাখ |
২৯৮ | তাওহিদ হৃদয় | ৭৫ লাখ |
৪০৯ | তাসকিন আহমেদ | ১ কোটি |
৪৩৯ | সাকিব আল হাসান | ১ কোটি |
৪৪০ | মেহেদী হাসান মিরাজ | ১ কোটি |
৪৪৪ | শরিফুল ইসলাম | ৭৫ লাখ |
৪৪৭ | তানজিম হাসান | ৭৫ লাখ |
৪৭৫ | মেহেদী হাসান | ৭৫ লাখ |
৪৮২ | হাসান মাহমুদ | ৭৫ লাখ |
৪৮৫ | নাহিদ রানা | ৭৫ লাখ |
ভারতের মাটিতে সবশেষ খেলা তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে মোস্তাফিজ প্রথম ম্যাচে ৩ ওভারে ৩৬ রান, দ্বিতীয় ম্যাচে ৪ ওভারে ৩৬ আর শেষ ম্যাচে ৪ ওভারে খরচ করেন ৫২ রান। তাকে নিয়ে অন্য দলগুলোর আগ্রহ তৈরি না হওয়ায় পেছনে এমন সাদামাটা পারফরম্যান্সও প্রভাব রাখতে পারে।
গত ১৮ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে একজন ক্রিকেটারের শ্যাডো ছবি দিয়ে পোস্ট করেছিল চেন্নাই। ক্যাপশনে লিখেছিল জাদেজার জমজ অলরাউন্ডার কে? এই ছবি আর ক্যাপশনের সঙ্গে অনেকেই সাকিব আল হাসানের মিল খুঁজে পাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত নিলামেই তোলা হয়নি দুবার কলকাতার হয়ে আইপিএল জেতা সাকিবকে।
তাসকিন আহমেদ অবশ্য দল পেতেই পারতেন। সবশেষ সিরিজে দিল্লিতে ভারত ২২১ রান তুললেও এই ঝড়ের মাঝে তাসকিন ৪ ওভারে দেন মাত্র ১৬ রান।
এমনকি সোমবার নিলামের দ্বিতীয় দিনও অ্যান্টিগা টেস্টে নিয়েছেন ৬ উইকেট। তার মানের পেসারের মাত্র ১ কোটি রুপিতে বিক্রি না হওয়াটা বিস্ময়করই।
তেমনি দল পেতে পারতেন রিশাদ হোসেনও। আইপিএলে লেগ স্পিনারদের কদর থাকে সবসময়। গত বিশ্বকাপে নজরকাড়া পারফরম্যান্সের পর বিগ ব্যাশে দল পেয়েছেন রিশাদ। গত ভারত সফরে প্রথম ম্যাচে ৩ ওভারে কেবল ২৬ রান দেওয়ার পাশাপাশি দ্বিতীয় ম্যাচে নেন ৩ উইকেট। তবে খরচ করেছিলেন ৫৫ রান। শেষ ম্যাচে খরচ করেছিলেন ৪৬ রান। এজন্যই হয়তো তাকে নিয়ে আর আগ্রহ দেখায়নি কোনো দল।
লিটন দাস, তাওহিদ হৃদয়দের কথা না বলাই ভালো। আইপিএলে এখন ২০০ স্ট্রাইক রেটে রান করাটা ডালভাত। সেখানে লিটনের টি-টোয়েন্টি স্ট্রাইক রেট ১২৫.৫৭ আর হৃদয়ের ১২৯.০৫।
এমন ধীর গতির ব্যাটার আইপিএলে অচল, এটাই বাস্তবতা। আর এজন্যই বাংলাদেশি ব্যাটারদের দিকে ফিরেও তাকায়নি ১০ ফ্র্যাঞ্চাইজির কেউ। নিলামে তাদের নামও উঠেনি তাই।
দেশের কোনো খেলোয়াড় না থাকায় আইপিএল নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছুটা আগ্রহ কমবে বাংলাদেশে। তাতে ভারতের ক্ষতি কোথায়?