মিশন লন্ডন! সিলেট অঞ্চলের অনেক মানুষই পাড়ি জমান উন্নত এই শহরে। তারা থেকেও যান সেখানে। একই ভাগ্য হতে পারত মৌলভীবাজারে জন্ম নেওয়া ইকবাল হোসেন ইমনের।
পরিবার চাইছিল বিদেশে বিশেষ করে লন্ডনে গিয়ে যেন ক্যারিয়ার গড়ে ইকবাল। তবে জেদী ছেলেটা বিলেতে না গিয়ে দুই বছর সময় চেয়ে নেন পরিবারের কাচে। শেষ চেষ্টা করেন ক্রিকেটার হওয়ার।
সেই অদম্য জেদেই সফল ইকবাল। তিনি ডাক পান অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। খেলেছেন গতবার যুব এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলে। তবে চার ম্যাচে ৪ উইকেট নেওয়ায় সাদামাটাই ছিলেন ইকবাল।
সেই ইকবাল গতির সঙ্গে সুইং মিশিয়ে যুব এশিয়া কাপের সেরাই হলেন এবার। ৫ ম্যাচে এই মিডিয়াম পেসার নিলেন ১৩ উইকেট, যা এবারের টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ উইকেটও বাংলাদেশি আরেক পেসার আল ফাহাদের। ভারতের চেতন শর্মা নিয়েছেন তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯ উইকেট।
ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার জিতেছেন ইকবাল। পাশাপাশি ১৩ উইকেট নিয়ে জিতেছেন টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারও। অথচ পরিবারের কথা শুনে লন্ডন পাড়ি জমালে হয়তো টিভিতে বসে দেখতে হতো রবিবারের ফাইনালটা!
এবারের অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে নিজের অগ্রযাত্রার শুরু ইকবালের। এরপর নেপালের বিপক্ষে ২ আর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে নেন ১ উইকেট। সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। পাকিস্তান সেই ম্যাচে গুটিয়ে যায় কেবল ১১৬ রানে।
রবিবার দুবাইয়ের ফাইনালে বাংলাদেশ থামে কেবল ১৯৮ রানে। এত অল্প পুঁজি নিয়ে ভারতের মতো দলকে হারাতে দরকার ছিল কারও বিশেষ পারফরম্যান্স। ইকবাল হোসেন ইমন করেছেন সেটাই। ২৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে এনে দিয়েছেন অবিস্মরণীয় জয়।
মৌলভীবাজারে আর দশজন ছেলের মতোই পাড়ায় ক্রিকেট খেলে শুরু ইকবালের। তবে হাত ঘুরিয়ে বল না করে সরাসরি ছুড়তেন ইকবাল ! এজন্য এক বড় ভাই কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘‘তুই তো ঢিল মারিস রে’’। তখনই মাথায় ভালো পেসার হওয়ার জিদ চাপে ইকবালের। এগিয়ে আসেন তারই মামার বন্ধু মৌলভীবাজার ক্রিকেট একাডেমির কোচ রাসেল আহমেদ।
পরিবার থেকে যখন বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার চাপ দেওয়া হচ্ছিল তখনও ভরসা দেন রাসেল আহমেদ। অনূর্ধ্ব-১৬ দলে ডাক না পাওয়ার পরের দুই বছর ফিটনেস ধরে রাখেন শুধুই টেপ টেনিসে বল করে। প্রতিটা বল করার সময় জেদ নিয়ে মনে মনে বলতেন, ‘‘আমি জাতীয় দলে ফিরবই।’’
ফেরার মতোই ফিরেছেন ইকবাল। বাংলাদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে তিনি এখন এশিয়ার যুব ক্রিকেটের সেরা বোলার।