কে হিটলারি কায়দায় অভিবাদন জানালে তাকে নাৎসিবাদী বলা যাবে না? এক কথায় উত্তর : ইলন মাস্ক।
প্রযুক্তি জগতের এই বাদশা জার্মানির নাৎসি নেতা অ্যাডল্ফ হিটলারের মতো জনতার উদ্দেশে হাত তুলে অভিবাদন জানাতেই পারেন। কিন্তু তার মানে এই নয়, তিনি নাৎসিবাদের সমর্থক।
মাস্কের সাম্প্রতিক এক কর্মকাণ্ড ঘিরে সমালোচনার জবাবে এ যুক্তিই দিচ্ছেন তার ভক্তরা।
ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তার উদ্বোধনী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক।
সমাবেশে ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানানোর সময় হঠাৎ হিটলারি কায়দায় অভিবাদন জানান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এই ব্যক্তি।
সঙ্গে সঙ্গে বিভক্ত হয়ে পড়ে নেটিজেনরা। একদল মাস্কের পক্ষ নিয়ে বলছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিরা যেভাবে অভিবাদন জানাতো, এটা সেরকম নয়। নাৎসিদের অনুপ্রেরণায় তিনি এমন অঙ্গভঙ্গি করেননি।
অন্যদিকে সমালোচকরা বলছেন, এক হাত উপরে তুলে মাস্ক যেভাবে অভিবাদন জানিয়েছেন, তার সঙ্গে গত শতকের চল্লিশের দশকে হিটলারের নাৎসি মতাদর্শের প্রতি সমর্থন জানিয়ে করা অভিবাদনের পার্থক্য কোথায়?
এই সমালোচকদের মধ্যে আছেন নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক রুথ বেন-গিয়াত। ফ্যাসিবাদ ও কর্তৃত্ববাদ নিয়ে লেখালেখি করেন তিনি।
ট্রাম্পের অভিষেকের দিন মাস্কের বিতর্কিত ওই অঙ্গভঙ্গি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রুথ বেন-গিয়াত বলেছেন, “মাস্কের ভঙ্গিটি নাৎসিদের মতোই ছিল। এর মধ্যে যুদ্ধংদেহী ভাবও ছিল।”
এই অধ্যাপকের মতোই ইহুদি প্রগতিশীল সংগঠন ইফনটনাও মাস্কের অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে নাৎসি অভিবাদনের মিল খুঁজে পেয়েছে।
সংগঠনটির মুখপাত্র মাতান আরাদ-নিম্যান বলেন, “জার্মানিতে ইহুদি নিধনযজ্ঞের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষদের বংশধর আমি। আমি জানি, কোনটা নাৎসি অভিবাদন আর কোনটা নয়। ইলন মাস্কের অভিবাদন নাৎসিদের মতোই ছিল।”
মাস্কের পক্ষে কথা বলার লোকেরও অভাব নেই। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য এলিস স্টেফানিক। মাসখানেক আগে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাকে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন।
এছাড়া আছে ইসরায়েলপন্থি সংগঠন অ্যান্টি-ডেফামেশন লিগ (এডিএল)। তাদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের অসম্মান করার অভিযোগ রয়েছে।
সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে মাস্কের পক্ষ নিয়ে এডিএল বলেছে, সমাবেশে আনন্দের আতিশয্যে তিনি এমন ভঙ্গি করেছেন।
মাস্কের পক্ষ নেওয়া ব্যক্তি-সংগঠন নিয়ে মজাও করছেন সমালোচকরা।
তারা বলছেন, মাস্কের অঙ্গভঙ্গি যদি নাৎসিদের অনুপ্রেরণায় না হয়ে থাকে, তাহলে তার ভক্তদের নিশ্চয়ই একই ভঙ্গি করে ছবি তুলতে এবং সেগুলো সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে কোনও সমস্যা হবে না?
মাস্কের ভক্তদের অবশ্য এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে এমন কোনও কাজ এখন পর্যন্ত করতে দেখা যায়নি।
মাস্ক কী বলেছেন
ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্বোধনী সমাবেশে তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ী করার জন্য জনতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে টেসলার সিইও ইলন মাস্ক বলেন, “আপনাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আপনাদের ধন্যবাদও জানাচ্ছি। কারণ আপনাদের কারণেই সভ্যতার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হয়েছে।”
এই বলেই ওই ভঙ্গি করেন তিনি।
মাস্কের অঙ্গভঙ্গি নিয়ে আল জাজিরার সঙ্গে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি, আরব-আমেরিকান ইস্যু, নাগরিক অধিকার ও রাজনীতি নিয়ে লেখালেখি করা দেশটির নাগরিক আলি হারব।
তিনি বলেন, “সমাবেশে উপস্থিত জনতাকে অভিবাদন জানাতে গিয়ে রাজনীতিবিদদের হাত বাড়িয়ে দেওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা।
“কিন্তু মাস্কের ‘সভ্যতা’ নিয়ে বক্তব্য এবং এর সঙ্গে তোলা হাত- এ দুটো একসাথে দেখে-শুনে অনেকের ভ্রু কুচকে গেছে।”
যে অঙ্গভঙ্গি নিয়ে এত কথা, তা নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা দেননি ৫৩ বছর বয়সী মাস্ক। তবে তিনি সমালোচকদের উদ্দেশে বলেছেন, তাদের আরও ভালো ছলের আশ্রয় নেওয়া দরকার।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘সবাই হিটলার’ এই বলে আক্রমণ বড়ই একঘেয়ে হয়ে গেছে।