বড়দিনে আজারবাইজানের উড়োজাহাজ কীভাবে কাজাখস্তানে বিধ্বস্ত হলো, সেই রহস্যের জট এখনও খোলেনি। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা ফ্লাইট রেকর্ডার এরই মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাদের হাতে এসেছে।
৬৭ আরোহী নিয়ে এমব্রায়ার-১৯০ নামের উড়োজাহাজটি ২৫ ডিসেম্বর রাত ৩টা ৫৫ মিনিটে আজারবাইজানের রাজধানী বাকু থেকে রাশিয়ার চেচনিয়ায় প্রজাতন্ত্রের গ্রোজনি শহরের উদ্দেশে রওনা দেয়।
যাত্রীদের মধ্যে ৩৭ জন আজারবাইজানের নাগরিক। এছাড়া ১৬ জন রাশিয়ার, ৬ জন কাজাখস্তানের এবং ৩ জন কিরগিজস্তানের নাগরিক ছিলেন। বাকিরা ছিলেন পাইলট ও ক্রু।
উড়োজাহাজটিতে গোলযোগ দেখা দিলে সেটি কাজাখস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের আকতাউ শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে জরুরি অবতরণের চেষ্টাকালে বিধ্বস্ত হয়। এতে ৩৮ আরোহী নিহত হয়।
এ ঘটনায় তদন্ত চলমান থাকলেও এরই মধ্যে এই ঘটনার জন্য রাশিয়াকে দুষতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির এক কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, যাত্রীবাহী উড়োজাহাজকে রুশ বিমানবিধ্বংসী ব্যবস্থা ভূপাতিত করে থাকতে পারে।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা রাশিয়ায় তাদের বিমান চলাচল স্থগিত করে দিয়েছে। পুরো পরিস্থিতি চাপে ফেলেছে রুশ কর্তৃপক্ষকে।
শুক্রবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত চলছে। আমরা মনে করি, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে আমাদের মন্তব্য করা উচিত নয়।
“একই সঙ্গে আমাদের নিজস্ব বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ রয়েছে, যারা এ নিয়ে মূল্যায়ন দাঁড় করাতে পারে এবং তথ্য কেবল তাদের কাছ থেকেই আসতে পারে।”
বিমান দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ তদন্ত শেষে জানা যাবে- এমনটা ক্রেমলিনের মুখপাত্র পেসকভ দাবি করলেও সিএনএনের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নেথান হজ তা মনে করছেন না।
রাশিয়া এই দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ কখনোই প্রকাশ্যে আনবে না, ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করবে-এমনটাই সন্দেহ তার।
নেথান হজের এই সন্দেহের পেছনে রয়েছে ২০১৪ সালের একটি ঘটনা। সেবার ইউক্রেনে এমএইচ১৭ নামের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়, যাতে ২৯৮ জন প্রাণ হারান।
সেসময় বিমান দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে রাশিয়ার পক্ষ থেকে নানা ধরনের তথ্য দেওয়া হচ্ছিল। একবার বলা হয়, ইউক্রেনই বিমানটি গুলি করে ভূপাতিত করে। আরেকবার বলা হয়, এমএইচ১৭ নয়, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিমান ছিলই হামলাকারীদের মূল লক্ষ্য।
রুশ কর্তৃপক্ষের এক এক সময় দেওয়া ভিন্ন ভিন্ন তথ্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছিল জনমানসে।
পরে জানা গেল, রাশিয়ার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এটি ছোড়া হয়েছিল ইউক্রেনে রুশ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে।
সেই ঘটনায় দুজন রুশ ও একজন ইউক্রেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী জড়িত থাকার প্রমাণও পাওয়া যায়।
এবারও যে এমন কিছু ঘটবে না, সেই সন্দেহ একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া থেকে শুরু করে দেশটির কর্মকর্তারা।
ঘটনার দিন আজারবাইজান এয়ারলাইন্স জানিয়েছিল, উড়োজাহাজটি আকতাউ বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের চেষ্টা করেছিল। সেটি জরুরি ভিত্তিতে অবতরণ করতে না পেরে বিমানবন্দর থেকে কিছুটা দূরে আকাশে চক্কর খাচ্ছিল।
একটি ভিডিওতে উড়োজাহাজটির মাটির দিকে দ্রুত নেমে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। এরপর এটি আগুনের গোলায় পরিণত হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, উড়োজাহাজটি কখনও উপরের দিকে উঠছিল, পর মুহূর্তেই আবার হুট করে নেমে যাচ্ছিল বেশ খানিকটা। এভাবে কয়েক মিনিট আকাশে বিভ্রান্ত হয়ে ঘুরপাক খেতে খেতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ে উড়োজাহাজটি। মুহূর্তের মধ্যেই তাতে আগুন ধরে যায়।
ঘটনার পর রাশিয়ার বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এক বিবৃতিতে বলে, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, পাখির সঙ্গে আঘাতের পর পাইলট জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।