Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

বিজ্ঞানী নিউটনের বিশাল সম্পদের সঙ্গে দাস ব্যবসার যোগ

যুক্তরাষ্ট্রের একটি যাদুঘরে বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের ভাস্কর্য।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি যাদুঘরে বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের ভাস্কর্য।
[publishpress_authors_box]

আধুনিক কালের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানীদের একজন স্যার আইজ্যাক নিউটন। সপ্তদশ শতকের শেষদিকে তার মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব বৈজ্ঞানিক জগতে বিপ্লব ঘটিয়েছিল। তিনি সেসময়ের লন্ডনের আর্থিক জগতেরও শীর্ষে পৌঁছেছিলেন।

‘রিকার্ডো’স ড্রিম’ নামের নতুন একটি বইয়ে দাবি করা হয়েছে, তার বিশাল পরিমাণ সম্পদ উপার্জনের পেছনে ছিল দাস ব্যবসা।

বইটি অর্থনৈতিক তত্ত্বের জনক ডেভিড রিকার্ডোর জীবন ও কাজ নিয়ে। রিকার্ডোও তার সময়ের সবচেয়ে ধনী শেয়ার ব্যবসায়ী ছিলেন।

বইটিতে নিউটনের যুক্তরাজ্যের রাজকীয় টাকশালের প্রধান হিসাবে থাকার সময়টির পুনঃপর্যালোচনা করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, সেখানে থাকার সময়ই তিনি তার রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে বিশাল ব্যক্তিগত ধন সম্পদ অর্জন করেছিলেন।

কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে পদত্যাগের পর নিউটন রয়্যাল মিন্ট বা রাজকীয় টাকশালে যোগ দিয়েছিলেন।

বইটিতে দাবি করা হয়, নিউটন রয়্যাল মিন্টে তার ৩০ বছরের কর্মকালীন প্রধানত ব্রাজিলে দাসদের মাধ্যমে উত্তোলিত স্বর্ণের এক বিশাল প্রবাহের তত্ত্বাবধান করেছিলেন।

মিন্টের প্রধান হিসাবে তিনি প্রতিটি মুদ্রা প্রস্তুত করার জন্য ছোট একটি ফি নিতেন।

বইটির লেখক ন্যাট ডায়ার বলেন, “আংশিকভাবে তার লেখা বিভিন্ন পত্র বিশ্লেষণ করে আমি বিষয়টি প্রমাণ করেছি। ব্রাজিলে দাসদের দিয়ে খনি থেকে আহরণ করা স্বর্ণ থেকে তিনি লাভবান হয়েছেন।”

ডায়ার আরও বলেন, “নিউটন তার সময়কার স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করে ব্যাপক লোকসানের মুখেও পড়েছিলেন। তথাপি তিনি অত্যন্ত ধনী অবস্থায় মারা যান। তার অধিকাংশ ধনসম্পদ আটলান্টিক দাস ব্যবসার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ছিল।”

ওই স্বর্ণ মূলত পর্তুগালের সঙ্গে বাণিজ্যের মাধ্যমে ব্রিটিশ রাজকীয় টাকশালে পৌঁছাত। পর্তুগাল ব্রাজিলের দ্রুত সম্প্রসারমাণ স্বর্ণখনি এন্টারপ্রাইজগুলো নিয়ন্ত্রণ করত।

সাধারণত লিসবনে ব্রিটিশ কাপড় ব্যবসায়ীরা যেসব স্বর্ণে দাম পেতেন, তার একটি বড় অংশ রয়্যাল মিন্টে মুদ্রায় রূপান্তরিত হতো।

১৬৯৬ সালে রয়্যাল মিন্টে যোগদানের আগে নিউটন কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে লুকেশিয়ান গণিতের অধ্যাপক হিসেবে বছরে ১০০ পাউন্ড (আজকের মূল্য ৩৬ হাজার) আয় করতেন। এই সময়েই তিনি সার্বজনীন মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্বটি উদ্ভাবন করেন।

১৭০২ সালের মধ্যে নিউটনের বার্ষিক আয় ছিল প্রায় ৩ হাজার ৫০০ পাউন্ড (আজকের মূল্য ১২ লাখ ৬০ হাজার পাউন্ড)। মৃত্যুর সময় তিনি অনেক সম্পদ রেখে যান।

বইটিতে প্রমাণ সহ উল্লেখ করা হয়েছে, নিউটনের তিন দশকের দায়িত্বকালে ইংল্যান্ডে প্রায় ১৪ মিলিয়ন স্বর্ণমুদ্রা তৈরি হয়। এটি তার আগের ১৩৬ বছরে তৈরি মোট স্বর্ণমুদ্রার পরিমাণের প্রায় সমান।

নিউটনের নিজস্ব চিঠিপত্রে এই স্বর্ণের উৎস সম্পর্কে প্রমাণ পাওয়া যায়। ১৭০১ সালের একটি নোটে তিনি লিখেছিলেন, “আমরা স্পেন ও পর্তুগালের দখলে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ অঞ্চল [দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা] ছাড়া অন্য কোথাও থেকে স্বর্ণের সরবরাহ পাই না।”

১৭১৭ সালে ট্রেজারিতে লেখা একটি চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ইংল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চল “পর্তুগালের স্বর্ণে পূর্ণ”, যা “রয়্যাল মিন্টে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ নিয়ে আসছে।”

ডায়ার বলেন, “নিউটন এই স্বর্ণ প্রবাহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। টাওয়ার অব লন্ডনে যত বেশি স্বর্ণ আসত, ততই তার সম্পদ বাড়ত।”

ডায়ার বলেন, “আমি মনে করি না এটি নিউটন সম্পর্কে আমাদের সমস্ত ধারণা বদলে দেবে। তিনি একটি যুগ নির্ধারণকারী চিন্তাবিদ। তবে সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীরাও তাদের সময়ের অংশ।”

অন্যান্যদের মতে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, নিউটন দাসব্যবস্থার আর্থিক সুবিধাভোগী ছিলেন, যা আটলান্টিক বাণিজ্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল।

ব্রাজিলের ফ্লুমিনেন্স ফেডারেল ইউনিভার্সিটির ইতিহাসবিদ অধ্যাপক লিওনার্দো মার্কেস বলেন, “তৎকালীন সময়ে আইবেরীয় আমেরিকা ছিল স্বর্ণের প্রধান উৎস, এটি খুব সুপ্রতিষ্ঠিত তথ্য।”

মার্কেস আরও উল্লেখ করেন, “আপনি এই তথ্য জন লক, ডেভেন্যান্ট এবং সেই সময়ের অন্যান্য অনেক বাণিজ্যবাদী লেখকদের লেখায়ও পাবেন। তাই এটা জানাটা আমার জন্য বিস্ময়কর নয় যে, নিউটন জানতেন এই স্বর্ণ ব্রাজিল থেকে আসছে।”

কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির এমেরিটাস ফেলো এবং লাইফ আফটার গ্র্যাভিটি বইয়ের লেখক ড. প্যাট্রিসিয়া ফারা বলেছেন, “১৮ শতকের শুরুর দিকে ব্রিটেনের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের সঙ্গে যুক্ত সবাই কোনো না কোনোভাবে দাসপ্রথা ও ব্রাজিলে দাস বাণিজ্যের ইতিহাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।”

ফারা এর আগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গেও নিউটনের সম্পর্ক নিয়ে আলোকপাত করেছেন। একইসঙ্গে, নিউটনের সাউথ সি কোম্পানিতে ব্যর্থ বিনিয়োগ নিয়েও লিখেছেন, যা একটি দাসব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল।

ফারা বলেন, “আমাদের এখনকার নৈতিক মানদণ্ড তিন থেকে চারশো বছর আগে বাস করা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা উচিৎ নয়। নিউটন হয়তো কারও কারও চেয়ে বেশি আবার অনেকের চেয়ে কম দায়ী ছিলেন।

“তবে এটা স্বীকার করা জরুরি যে, যারা আজও ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে সম্মানের আসনে রয়েছেন, তারা দাসপ্রথার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত