বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ অন্যান্য সনাতনীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইসকন বাংলাদেশ।
একই সঙ্গে গ্রেপ্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতনী সম্প্রদায়ের ওপর সংঘটিত হামলা ও সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের বাংলাদেশ শাখা।
সনাতনী সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ জীবনধারা রক্ষায় প্রশাসনসহ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইসকন বাংলাদেশ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছে, “বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র এবং বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস এদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন।
“একজন নাগরিক হিসেবে তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং অন্যদের এই অধিকার রক্ষায় অনুপ্রাণিত করার অধিকার সুরক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। তার প্রতি ন্যায়সঙ্গত আচরণ বাঞ্ছনীয়।”
দেশের নাগরিক হিসেবে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ সনাতনীদের ন্যায়বিচারের অধিকার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “সনাতনীদের প্রতি যেন কোনও ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ না করা হয়, সেই বিষয় আমরা জোরালোভাবে তুলে ধরছি।”
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ফেরার পথে সোমবার বিকালে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গত অক্টোবরে চট্টগ্রামে সনাতন জাগরণ মঞ্চের এক সমাবেশে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলায় তাকে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হলে তার প্রতিবাদে গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে সমাবেশ করে সনাতন জাগরণ মঞ্চ। ওই সমাবেশের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন চিন্ময় ব্রহ্মচারী।
সমাবেশের দিন চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট মোড়ে দেশের জাতীয় পতাকার ওপরে ইসকনের গেরুয়া রঙের পতাকা ওড়ানোর অভিযোগে রাজেশ চৌধুরী ও হৃদয় দাশ নামে দুই সনাতন ধর্মাবলম্বীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল সনাতন জাগরণ মঞ্চ।
এরপর গত ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেন চট্টগ্রাম শহরের মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান। পরে তাকে পদচ্যুত করে বিএনপি।
চিন্ময়কে গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রামের চেরাগি পাহাড় মোড়ে সোমবার বিক্ষোভ সমাবেশ করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। ঢাকার শাহবাগ মোড়েও অবস্থান নেয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। সেখানে তাদের ওপর হামলার অভিযোগও ওঠেছে।
মঙ্গলবারের বিবৃতিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি সনাতনী সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানায় ইসকন বাংলাদেশ।
পাশাপাশি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ সনাতনীদের নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ এবং দেশের সব সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি জানানো হয়।