Beta
শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫

ছাত্রশিবিরের কৌশল, না ধোঁকা

ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম।
ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে।
[publishpress_authors_box]

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখ দেখিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির, তাতে প্রকাশ পেয়েছে সংগঠনটির নেতাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব এবং নিয়ন্ত্রকের ভূমিকাও। এনিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা-বিতর্ক।

জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠনটির নেতাদের দাবি, সরকারের দমন-পীড়নে চাপের মুখে তাদের অপ্রকাশ্যে থাকার কৌশল নিতে হয়েছিল।

তবে এই কৌশলকে সুবিধাবাদের নামান্তর বলে প্রতিক্রিয়া এসেছে বিএনপি ঘরানা থেকে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বলছে, পরিচয় গোপন করে আসলে ধোঁকা দিয়েছে শিবির।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটার এক মাস পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের সভাপতির নাম প্রকাশ পায়।

গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে ছাত্র সংগঠনগুলোর বৈঠকে ছাত্রশিবিরের পরিচয়ে অংশ নেন সাদিক কায়েম।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী, থাকেন মাস্টারদা সূর্যসেন হলে।

প্রায় এক দশক এক সঙ্গে থাকার পর সাদিকের ছাত্রশিবিরের সংশ্লিষ্টতার খবর জেনে তার সহপাঠিরা হয়েছেন অবাক। কারণ তারা তাকে চিনত পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদ নামে একটি সংগঠনের সাবেক সভাপতি হিসাবে। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক হিসাবে চিনত তাকে। এই পরিচয়ে বঙ্গভবনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানেও ছিলেন তিনি।

এক দিন পর শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদকের পরিচয় প্রকাশ পায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরের ফেইসবুক পোস্টে।

তিনি হলেন এম এম ফরহাদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থী, থাকেন কবি জসিম উদদীন হলে।

সাদিক কায়েমের মতো ফরহাদও চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

ফরহাদকেও শিবির পরিচয়ে কেউ চিনত না। তাকে চিনত বিতার্কিক হিসাবে, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদের সভাপতি হিসাবে।

সেই সঙ্গে ছাত্রলীগের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখা কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদক হিসাবেও ফরহাদের নাম ছিল। সেই পদধারী হিসাবে ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে তার ছবি সোশাল মিডিয়ায় ঘুরলেও ফরহাদ দাবি করছেন, ছাত্রলীগের সঙ্গে তার কোনও সম্পৃক্ততা ছিল না, তিনি সেই কমিটিতে তার নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়ও জানতেন না।

আব্দুল কাদেরের ফেইসবুক পোস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নয় দফা দাবি প্রণয়নে শিবির নেতা হিসাবে ফরহাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি আসে। তার সঙ্গে আলোচনা করেই ৯ দফা তৈরি হয়েছিল বলে জানান কাদের।

একাত্তরে ভূমিকা, ঢাবি ও জাবিতে নিষিদ্ধ

একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে থাকা জামায়াতের ছাত্র সংগঠন শিবিরের ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা রয়েছে।

স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছিল ইসলামী ছাত্র সংঘ। এই সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের নিয়ে আল বদর বাহিনী গঠিত হয়, যারা বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছিল বলে ইতিহাসে স্বীকৃত।

স্বাধীনতার পর জামায়াত ছিল নিষিদ্ধ। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় যাওয়ার পর জামায়াতের রাজনীতির পথ খোলে। এরপর ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দলটির ছাত্র সংগঠন হিসাবে ছাত্রশিবিরের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

এরপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিবিরের হামলায় বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী নিহত হন। অপরাপর সংগঠনগুলোর কাছে শিবির ‘রগকাটা দল’ হিসাবে পরিচিতি পায়।

ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সাপ্তাহিক বিচিত্রায় কর্মরত অবস্থায় জামায়াত-শিবির নিয়ে প্রতিবেদনগুলোও এখন আলোচনায় আসছে। ১৯৮৮ সালে তার এক প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্র সমাজের নেতা আব্দুল হামিদের হাত কেটে তা নিয়ে মিছিলের কথাও ছিল।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের চার দিন আগে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসাবে নিষিদ্ধ করেছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে দেওয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রশাসনের মিথস্ক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম পরিবেশ পরিষদে ১৯৯০ সালে ছাত্রশিবির এবং জাতীয় ছাত্রসমাজকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়। তখন ডাকসুর নিয়ন্ত্রণে ছিল বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

অন্যদিকে ১৯৮৯ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের হামলায় ছাত্রদল নেতা হাবীবুর রহমান কবির নিহত হওয়ার পর এ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের ওপর নিষেধাজ্ঞার বৈধতার প্রশ্ন তুলে সাদিক কায়েম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “পরিবেশ পরিষদের কোনও আইনগত ভিত্তি নেই। ছাত্র সংগঠনগুলো মিলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটা একটা ফ্যাসিস্ট চিন্তা।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ চালাতে গিয়ে শিবির নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন সময় আক্রান্ত হয়েছিল বলে দাবি করেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি মুহাম্মাদ মতিউর রহমান আকন্দ, যিনি এখন জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “১৯৮১ থেকে ৮২ সালের দিকে বোমা নিক্ষেপের মাধ্যমে তোফাজ্জল হোসেন ও সাইফুল ভাইয়ের পা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের ডাকে আসলে তার ওপর হামলা করা হয়। তৎকালীন ছাত্রলীগসহ অন্যান্য দল মিলে হামলা করে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও হামলায় ছাত্রশিবিরের কোনও নেতা-কর্মী প্রাণ হারিয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি পাকিস্তান আমলের একটি ঘটনার কথা বলেন- “১৯৭০ সালে প্রাণ রসায়ন বিভাগের ছাত্র আবদুল মালেক নিহত হন।”

চাপ ছিল, তাই কৌশল

আওয়ামী লীগের শাসনকালে চাপে ছিল জামায়াত ও শিবির। বিশেষ করে ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে দলটির নেতাদের ফাঁসির রায়ের পর প্রতিবাদ দমনে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কর্মসূচি পালনও তাদের জন্য কঠিন ছিল।

নিজেদের অপ্রকাশ্যে রেখে কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগের দমন নীতিকে কারণ দেখাচ্ছেন ছাত্রশিবিরের সাবেক ও বর্তমান নেতারা।

ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, “ছাত্রশিবির সব সময় কাজ করেছে। সাংগঠনিক কাজ সব সময় ছিল। শিবিরকে যখন কোণঠাসা করা হয়েছিল, সেই সময় থেকে শিবির প্রকাশ্যে ছিল না।”

মতিউর ১৯৯৮ সাল থেকে দুই বছর ২০০০ সাল পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

সংঘাত এড়ানোর জন্য অপ্রকাশ্যে থাকাটাকে ‘কৌশল’ হিসাবে বর্ণনা করেন তিনি। তার দাবি, যেসব ছাত্র সংগঠন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য করে, তারাই ছাত্রশিবিরের কাজে বাধা দিয়েছে।

শিবিরের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন ছাত্র সংগঠন থেকে বাধা আসত- প্রশ্নে তিনি ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রমৈত্রীর নাম বলেন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলও শিবিরের বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখেছে বলে দাবি করেন তিনি।

ছাত্রদলকে এখন বন্ধু সংগঠন হিসাবে দেখতে চান বলে জানিয়েছেন ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম; যদিও ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির নেতারা ক্যাম্পাসে শিবিরকে বৈঠকে ডাকার প্রতিবাদ জানিয়েছে।  

সাদিক কায়েম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তারা এতদিন ভয়ে প্রকাশ্যে আসতে পারেননি।

“তখন আমরা ভয়ের কারণেই প্রকাশ্যে ছিলাম না। ছাত্রলীগ টেরর অর্গানাইজেশন, তারা সবার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারা ফ্যাসিস্ট।”

তবে যখনই ছাত্রশিবির সুযোগ পেয়েছে, তখনই সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়েছে দাবি করে সাদিক বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে শিবিরকে ‘দানবীয়ভাবে’ উপস্থাপন করা হয়েছিল।

‘শিবির ট্যাগ দিয়ে’ মারা হতো দাবি করে সাদিক বলেন, “শিবিরকে মারার অধিকার দিয়েছে কে? দেশের সুশীল বুদ্ধিজীবী যারা রয়েছে, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের সঙ্গে ছাত্রশিবির নেতা সাদিক কায়েম (সর্বডানে)

সুবিধাবাদ অথবা ধোঁকা

সাদিক কায়েমের বর্তমান পরিচয় জেনে অবাক হওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন শায়ের; যদিও আন্দোলনের সময় তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল সাদিকের।

সায়ের ফেইসবুকে লিখেছেন, সাদিক কায়েম যখন তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, তখন তিনি তাকে সালমান নামে চিনতেন।

বিরূপ পরিস্থিতিতে অপ্রকাশ্যে থেকে কিংবা অন্য সংগঠনে ঢুকে কাজ করাকে সুবিধাবাদী আচরণ হিসাবে দেখছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ১৯৯১ সালের সদস্য, বর্তমানে বিএনপিতে যুক্ত এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান।

তার স্কুলজীবনের একটি ঘটনার উল্লেখ করে তিনি ফেইসবুকে লিখেছেন, “একদিন স্কুলে ছাত্রশিবিরের নেতারা আসলেন। তারা আমাদের অনেক সুন্দর লেকচার দিলেন এবং ফর্ম দিয়ে সেগুলো ফিলাপ করতে অনুরোধ করলেন। ছাত্রশিবির যে কত ভালো সংগঠন, এটা বোঝানোর জন্য বললেন, ছাত্র ইউনিয়ন থেকে এক বিরাট নেতা ছাত্রশিবিরে যোগ দিয়েছেন। বিষয়টি আমার কাছে উদ্ভট লাগার কারণে ফরম ফিলাপ করা থেকে বিরত থাকলাম।

“চর চনপাড়া থেকে আসা আমার এক সহপাঠী ছিল, সে ছাত্রশিবির করতো। টিফিন পিরিয়ডে সে আমাকে বোঝালো, ছাত্র ইউনিয়ন করা ওই ভাইটি আসলে শুরু থেকেই ছাত্রশিবির ছিল! সে নাম পরিবর্তন করে ছাত্র ইউনিয়নে ঢুকেছিল। পরে সময়মতো পক্ষ পরিবর্তন করে আবার ছাত্রশিবিরে যোগ দিয়েছে।”

বর্তমান সময় নিয়ে ওয়াহিদুজ্জামান লিখেছেন, “এখন জানতে পারছি, ছাত্রলীগের জ্ঞানী, মেধাবী এবং ভদ্র ছেলেদের একটা বড় অংশই আসলে ছাত্রশিবির করে! তারা ক্যাম্পাসে নিরাপদে থাকা এবং ন্যূনতম রাজনৈতিক স্পেস পাওয়ার সুবিধার্থে ছাত্রলীগ করত। সময়মতো এরা ছাত্রলীগ ত্যাগ করে প্রথমে ‘বৈষম্য বিরোধী’ ছাত্র আন্দোলন এ যোগ দিয়েছে, আর এখন সরাসরি ছাত্রশিবিরে ফিরে এসেছে।”

একে সুবিধাবাদ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন বিএনপির এই নেতা, যার দলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জোট করে ছিল শিবিরের মূল সংগঠন জামায়াতে ইসলামী।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা মনে করছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে আড়াল হিসাবে নিয়ে শিবির শিক্ষার্থীদের ধোঁকা দিয়েছে। শেখ হাসিনা যে বলছিলেন, এই আন্দোলন জামায়াত-শিবিরের, এখন তা প্রমাণিত।

আওয়ামী লীগ সমর্থক অমি রহমান পিয়াল ছাত্রশিবির হ্যাশট্যাগ দিয়ে ফেইসবুকে লিখেছেন, “মানুষ তার পরিচয় লুকায় যদি তার কোনো ঘৃণ‍্য অতীত থাকে! লজ্জায় কিংবা অপমান হওয়ার ভয়ে সে তটস্থ থাকে বলেই ছদ্মবেশ নেয়…”

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারও লিখেছেন, “আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীর পরিচয় দিয়ে শিবির দেশের জনগণের সাথে মুনাফেকি করেছে।”

প্রবাসী কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমানও ফেইসবুকে লিখেছেন, “শিবির জানে তাদের ইতিহাস ও নৃশংসতার কলঙ্ক জনগণের কাছে ঘৃণার বিষয়। প্রতিবারই জনগণের সরলতার সুযোগ নিয়ে জনগণকে ক্ষেপিয়ে ফসল তুলতে গিয়ে প্রতিবারই ধরা খায় শিবির। এই যে লুকিয়ে, পরিচয় গোপন করে সাধারণ জনগণকে বোকা বানিয়ে দেশ ধ্বংস করলো শিবির, মার্কিনী ফেসবুকের সহায়তায়, এটা জনগণ ধীরে ধীরে উপলব্ধি করছে।”

শিবির নেতাদের প্রকাশ্য হওয়ায় অস্বস্তি তৈরি হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যেও; যদিও কাদের বলেছেন যে তিনি জানতেন।

সাদিক কায়েম যে শিবির করেন, তা জানতেনই না বলে জানালেন আরেক সমন্বয়ক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “উনি যে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, সেটা সম্পর্কে আমার কোনও ধারণা ছিল না। খবরটি পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের সঙ্গেও আমি যোগাযোগ করেছি। তারাও কিছু জানতো না বলে জানিয়েছে।”

সাদিকের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন করাটা ঠিক হয়নি বলে মনে করেন আরিফ সোহেল।

“বিষয়টা নিয়ে আমরা সবাই বেশ অস্বস্তিতে পড়েছি, কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় বলতে পারেন।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত