সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কাছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো কোনও গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
একই সঙ্গে আইএসপিআর জানিয়েছে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কাছাকাছি বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ডের একাধিক টহল দিচ্ছে। এসব জাহাজ থেকে মিয়ানমারের জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
রবিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়।
আইএসপিআরের সহকারী পরিচালক সাইদা তাপসী রাবেয়া লোপার সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে। দেশটির সামরিক বাহিনী ও আরাকান আর্মির এই সংঘর্ষের কারণে নাফ নদী ও নদী সংলগ্ন মোহনা এলাকায় বাংলাদেশি নৌযানের ওপর অনাকাঙ্ক্ষিত গুলির ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং ১২ জুন এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংঘর্ষের ধারাবাহিকতায় মিয়ানমার নৌবাহিনী সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অদূরে তাদের দেশের সমুদ্রসীমায় এবং নাফ নদীর মিয়ানমার সীমানায় থেকে মিয়ানমারের দিকে আরাকান আর্মির অবস্থান লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করে। একই সঙ্গে আরাকান আর্মিও মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ ও বোট লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করছে।
বর্তমানে মিয়ানমার সীমান্তে দেশটির নৌবাহিনীর একাধিক যুদ্ধজাহাজ এই অভিযান চালাচ্ছে উল্লেখ করে আইএসপিআর জানিয়েছে, সেন্ট মার্টিনের কাছাকাছি এলাকায় চালানো এই অভিযানের কথা তারা বাংলাদেশ নৌবাহিনীকেও জানিয়েছে।
মিয়ানমারের মূল ভূখণ্ড ও সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় তাদের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ চলমান জানিয়ে আইএসপিআর বলেছে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কাছাকাছি বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ডের একাধিক টহল দিচ্ছে। এসব জাহাজ থেকে মিয়ানমারের জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় থেকে নিয়মিত টহলও পরিচালনা জাহাজগুলো।
আইএসপিআর বলছে, মিয়ানমারের চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ সেন্ট মার্টিনের কাছে হওয়ায় এই সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্বীপটির নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল গুজব ছড়াচ্ছে। এতে বিভ্রান্ত না হতে সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এর আগে গত বুধবার দুপুর থেকে টেকনাফের নাফ নদ ও নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে মিয়ানমারের একটি জাহাজের দেখা মেলে। সেইসঙ্গে মিয়ানমারের ওপার থেকে ভেসে আসতে থাকে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ। শুক্রবার রাত পর্যন্ত জাহাজটি দেখা গেলেও শনিবার সেটি সরে যায়।
বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে সেন্ট মার্টিনে নৌযান চলাচল করে টেকনাফ থেকে নাফ নদী দিয়ে। নাফ নদীর এক পাশে বাংলাদেশ, আরেক পাশে মিয়ানমার।
মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘাতের মধ্যে সম্প্রতি নাফ নদীতে চলাচলরত নৌযান লক্ষ্য করে গোলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় দ্বীপবাসী পড়ে খাবার সংকটে, বন্ধ হয়ে যায় মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ।
এ অবস্থায় গত শুক্রবার দুপুরের পর কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বাঁকখালী নদীর বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে সেন্ট মার্টিনে যায় এমভি বার আউলিয়া নামে একটি জাহাজ। যেখানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঠানো হয় ২০০ মেট্রিক টন চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী।