ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ইরানের সামরিক স্থাপনাগুলোতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে ইরাকের যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত আকাশসীমা ব্যবহার করেছে। এমন দাবি করেছে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী।
এছাড়া ইসরায়েলি হামলায় সেনা নিহতের সংখ্যা দুজন থেকে বেড়ে চারজন হয়েছে বলেও জানিয়েছে ইরান। নিহতদের সবাই সৈনিক।
রবিবার এক বিবৃতিতে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ বলেন, ইরানের সীমান্তের বাইরে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূর থেকে লাইটওয়েট ওয়ারহেডসহ বেশ কয়েকটি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর লক্ষ্য ছিল সীমান্ত প্রদেশ ইলাম ও খুজেস্তানের পাশাপাশি ইরানের রাজধানী তেহরানের আশেপাশের রাডার সিস্টেম।
স্থানীয় সময় রাত আড়াইটার দিকে আক্রমণটি শুরু হয়। ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তেহরানের কাছে অনেক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে, যা বিকট শব্দের সৃষ্টি করে।
ইরানের সশস্ত্র বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা গেলেও কিছু সংখ্যক ‘সীমিত ক্ষতি’ করেছে।
দেশটির সশস্ত্র বাহিনী বলেছে, হামলায় ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্রগুলোতে হালকা ওজনের ওয়ারহেড ছিল যা “ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওয়ারহেডের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ”।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “আমাদের জাতীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার কল্যাণে সীমিত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুধু কয়েকটি রাডার সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু সিস্টেম অবিলম্বে মেরামত করা হয়েছে এবং অন্যগুলো এখনও মেরামত চলছে।”
বিবৃতিতে ইসরায়েলি হামলাকে একটি ‘অবৈধ এবং অযৌক্তিক পদক্ষেপ’ হিসাবে নিন্দা করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র ট্র্যাক করা হয়েছে এবং বাধা দেওয়া হয়েছে’ এবং সেগুলোকে ইরানের আকাশসীমার গভীরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
বিবৃতিতে ইরানি সশস্ত্র বাহিনী ‘গাজা ও লেবাননে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির’ প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি উপযুক্ত সময়ে আইনানুগ ও বৈধ পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকারের ওপরও জোর দেয়।
ইসরায়েলের ‘অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করছে’ উল্লেখ করে এর প্রতি সমর্থন দেওয়ায় ‘কেন্দ্রীয় ভূমিকা’ পালন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেছে ইরান। ইসরায়েলের শাসনকে বেআইনি আখ্যা দিয়ে এর লাগাম টানার এবং দখলদারদের সৃষ্ট জটিলতার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের না জড়ানোর আহ্বানও জানানো হয়।
এর আগে শনিবার এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস বলেছে, ইরানের উপর ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলার পর উভয় পক্ষের মধ্যে এবার সংঘর্ষ বন্ধ হওয়া উচিৎ। তেহরান আবারও পাল্টা হামলা চালালে পরিণতি ভোগ করতে হবে বলেও সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
জবাবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলি বিমান হামলার নিন্দা জানিয়ে একে ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছে এবং ইরানের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ রয়েছে বলে দাবি করেছে।
জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদে বর্ণিত বৈধ আত্মরক্ষার অধিকারের অধীনে ‘বিদেশি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আত্ম-রক্ষার বৈধ অধিকার পুনর্ব্যক্ত করেছে ইরান।
ইরান এর আগে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, ইসরায়েলের যেকোনও হামলার ‘কড়া জবাব’ দেওয়া হবে।
ইরানের সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েলের এই সরাসরি হামলা ছিল গত ১ অক্টোবর দেশটিতে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব। তারে আগের দিন মধ্যরাতের পর লেবাননে স্থল আগ্রাসন শুরু করেছিল ইসরায়েল।
হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহ ও ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস কমান্ডার আব্বাস নীলফরউশানের মৃত্যুর প্রতিশোধ হিসেবে ইরান ওই হামলা চালায়।
এটি ইসরায়েলে ইরানের দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ছিল। এর আগে গত এপ্রিলে ইসরায়েলে প্রথমবারের মতো সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। উভয় হামলায় শতশত ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয় ইসরায়েলে।
তথ্যসূত্র: আনাদুলু নিউজ এজেন্সি