অর্থ পাচার মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে ৭ বছর করে কারাদণ্ড দিয়ে হাই কোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের আপিল বিভাগের বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।
আদালতে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন, তারেক রহমানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কায়সার কামাল এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান।
গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ৬ আগস্ট জেল থেকে মুক্তি পেয়ে ব্যবসায়ী মামুন হাই কোর্টের রায় বাতিল চেয়ে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আর আবেদন মঞ্জুর করে। পাশাপাশি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিতে বলে।
বিদেশে ২০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ২০০৯ সালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানায় তারেক-মামুনের বিরুদ্ধে মামলাটি করে দুদক।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ নির্মাণ কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন মামুন। ২০০৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে ওই টাকা বিভিন্ন পদ্ধতিতে সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংকে মামুনের ব্যাংক হিসাবে পাচার করা হয়। ওই টাকার মধ্যে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা তুলে খরচ করেন তারেক রহমান।
মামলাটির বিচার শেষে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর তারেককে বেকসুর খালাস এবং গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে ৭ বছর কারাদণ্ড এবং ৪০ কোটি টাকা জরিমানা করে রায় দেন তৎকালীন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মো. মোতাহার হোসেন।
তারেক-মামুনের মামলার রায় দেওয়ার পরদিন বিচারক মোতাহার হোসেন পাঁচ দিনের ছুটির আবেদন করেন। এর দেড় মাসের মাথায় ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি তিনি অবসরে যান।
পরে দুদকের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ২১ জুলাই খালাসের সেই রায় বাতিল করে হাই কোর্ট তারেক রহমানকে ৭ বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকার অর্থদণ্ড দেয়। পাশাপাশি মামুনের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড বহাল রাখে।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী মামুন আপিল করেন জানিয়ে দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, “মামুন জেল থেকে বের হয়ে আপিল করেন। শুনানি নিয়ে আদালত তার লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেছে, রায় স্থগিত করেছে এবং ৩ হাজার ৪৯ দিন বিলম্ব মার্জনা করেছে।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় তারেক রহমানের ‘ইমেজ’ নষ্ট করতে দুদকের মাধ্যমে মামলাটি করা হয় এবং পরবর্তীতে বিচার হয় বলে অভিযোগ করেন বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আদালতকে কুক্ষিগত করার মাধ্যমে শেখ হাসিনা এ মামলাটি ট্রায়াল করালেন। তার খায়েশ ছিল মিডিয়া ট্রায়াল করার মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তারেক রহমানের ইমেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।”
অভিযোগের সঙ্গে কোনও সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তারেক রহমানকে বিচারক মোতাহার হোসেন খালাস দেন দাবি করে তিনি বলেন, “এই খালাস দেওয়ার জন্য দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিচারক মোতাহার সাহেবকে দেশান্তরিত হতে হয়।”
ভারতীয় উপমহাদেশে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দণ্ড দেওয়ার নজির নগণ্য হলেও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা গেছে বলেও জানান তারেক রহমানের আইনজীবী কায়সার কামাল।