বক্সিং ডে টেস্টের ‘বক্স অফিস’ কেমন? সুপারহিট সিনেমা ‘বাহুবলি’র সঙ্গে তুলনা টানা যায় অনায়াসে। বাহুবলি যেমন ভেঙেছিল একের পর এক রেকর্ড তেমনি অস্ট্রেলিয়া-ভারতের বক্সিং ডে টেস্টেও ভেঙেছে দর্শক উপস্থিতির নজির।
১৯৩৭ সালে এমসিজিতে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের অ্যাশেজে পাঁচ দিন মিলিয়ে দর্শক হয়েছিল ৩ লাখ ৫০ হাজার ৫৩৪ জন। অস্ট্রেলিয়ায় হওয়া কোন টেস্টে সর্বোচ্চ দর্শক উপস্থিতির রেকর্ড ছিল সেটা। আজ (সোমবার) পেছনে পড়েছে সেই কীর্তি। পাঁচ দিনে এমসিজিতে মাঠে এসেছেন ৩ লাখ ৫১ হাজার ১০৪ জন দর্শক।
দর্শক রেকর্ডের এই টেস্টে ১৮৪ রানে হেরেছে ভারত। জয়ের জন্য ভারতের দরকার ছিল ৩৪০ রান। কিন্তু তারা গুটিয়ে যায় ১৫৫ রানে। এই হারে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের দৌড় থেকে একপ্রকার ছিটকে পড়ল ভারত। যশস্বী জয়সওয়ালকে আউট দেওয়া নিয়ে বেশ আলোচনাই হয়েছে তৃতীয় আম্পায়ারের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশের শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদকে নিয়ে।
প্রথম দিনে দর্শক উপস্থিতি ছিল ৮৭,২৪২ জন। দ্বিতীয় দিনে ৮৫,১৪৭ জন, তৃতীয় দিনে ৮৩,০৭৩ জন, চতুর্থ দিনে ৪৩,৮৬৭ জন আর পঞ্চম দিনে প্রথম সেশন পর্যন্ত ৫২ হাজারের বেশি জন। সেটা বাড়তে পারে আরও। সাধারণ মানুষের পার্কিংয়ের জন্য ইয়ারা পার্ক খুলে দেওয়া হয়েছিল আজ, মেলবোর্ন টেস্টে বিরল ব্যাপারই এটা।
পাঁচ দিনের টেস্টে সর্বোচ্চ দর্শক উপস্থিতির রেকর্ড ১৯৯৯ সালে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে। এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সে ম্যাচে ৪,৬৫,০০০ দর্শক উপস্থিত হয়েছিলেন কলকাতার ইডেন গার্ডেনে।
দর্শক উন্মাদনার এই টেস্টে অস্ট্রেলিয়া চতুর্থ দিন শেষ করেছিল ৯ উইকেটে ২২৮ রানে। আজ পঞ্চম দিন তারা অলআউট ২৩৪-এ। ৪১ করা নাথান লায়নকে বোল্ড করে অস্ট্রেলিয়াকে গুটিয়ে দেন জাসপ্রিত বুমরা। ৫৭ রানে বুমরা নেন ৫ উইকেট।টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৩তমবার ৫ বা বেশি উইকেট নিলেন।
গত ৬ বছরে ছেলেদের টেস্টে আর কোনো বোলার বুমরার চেয়ে বেশি ইনিংসে ৫ উইকেট নিতে পাননি। ৬ বছরে ইনিংসে সমান ১২ বার করে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন নাথান লায়ন, প্যাট কামিন্স ও তাইজুল ইসলাম। এজন্য বল করেছেন নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি ২৪.৪ ওভার।
জয়ের জন্য ভারতের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৪০ রান। মেলবোর্ন টেস্টে এত বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই কারও।
ভারতও রেকর্ডের পেছনে না ছুটে ম্যাচ বাঁচাতেই নেমেছিল পঞ্চম দিন। তবে ৭৬ ওভারে ১৫০ রানে ৮ উইকেটে পরিণত হয়েছে তারা। রোহিত শর্মা ৯, লোকেশ রাহুল ০, বিরাট কোহলি ৫, ঋষভ পন্ত ৩০ আর রবীন্দ্র জাদেজা ২ ও প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান নীতীশ কুমার আউট হয়েছেন ১ রানে। ম্যাচ বাঁচানোর চ্যালেঞ্জটা সহজ ছিল না তাদের জন্য।
একটা প্রান্ত আগলে একাই লড়াই করছিলেন যশস্বী জয়সওয়াল। তবে ৮৪ রানে থাকা জয়সওয়ালকে অ্যালেক্স ক্যারির ক্যাচ বানিয়ে ফেরান প্যাট কামিন্স। স্নিকো কট বিহাইন্ড না ধরতে পারলেও জয়সোয়ালকে আউটের সিদ্ধান্ত দেন শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ।
রিভিউ নেওয়ার পর রিপ্লেতে দেখা যায় বল ব্যাট ও গ্লাভস ছুঁয়েছে। শরফুদ্দৌলাও জানান, তিনি বলের গতিপথ পরিবর্তন হযছে দেখেছেন। তবে স্নিকোতে লাইনগুলো বড় হয়ে ওঠেনি! এরপরও শরফুদ্দৌলা আউটের সিদ্ধান্ত দিলে আম্পায়ারদের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন জয়সওয়াল।
ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে ও মার্ক নিকোলাসরা অবশ্য এটাকে সাহসী ও ন্যায় সিদ্ধান্তই বলেছেন। চতুর্থ দিন মোহাম্মদ সিরাজকে শরফুদ্দৌলার আউট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েও আলোচনা হয়েছিল যথেষ্ট। জয়সওয়ালের ফেরার পরই ভারতের হার হয়ে উঠে সময়ের অপেক্ষা। অবশেষে ১৫৫ রানে গুটিয়ে যায় তারা।
প্যাট কামিন্স ও স্কট বোল্যান্ড নেন ২টি করে উইকেট। সিরিজে অস্ট্রেলিয়া এখন এগিয়ে ২-১’এ। ভারত শেষ টেস্ট জিতলেও বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজ এবার শেষ হবে সমতায়।