বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন মঞ্জুর করেছে আপিল বিভাগ। এর ফলে রাজনৈতিক দলটির আপিল সর্বোচ্চ আদালতে পুনরুজ্জীবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জামায়াতের আইনজীবী।
জামায়াতের আপিল পুনরুজ্জীবিত করতে ২৮৬ দিন বিলম্ব মার্জনা চেয়ে করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছে।
আদালতে জামায়াতের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এহসান আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ও মোহাম্মদ শিশির মনির।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৮ আগস্ট জামায়াতের আইনজীবীরা জানান, দলটির নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবীত (রেস্টোরেশন পিটিশন) করতে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।
৩১ আগস্ট সেই আবেদন করা হয়। সেদিন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত আবেদনটি ২১ অক্টোবর শুনানির জন্য ধার্য করে। এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার এ আবেদনের ওপর শুনানি হয়।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনে নির্বাচন কমিশন। সে সময় ৩৮টি দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীও ছিল।
আইন অনুযায়ী শুধু নিবন্ধিত দলগুলোকেই নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়। নিবন্ধন দেওয়ার পরের বছর ২০০৯ সালে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট একটি রুল জারি করে। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি (১) (বি) (২) ও ৯০ (সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না- জানতে চাওয়া হয় রুলে।
রুল জারির পর নিবন্ধন বাঁচাতে দলীয় গঠনতন্ত্রে ব্যাপক সংশোধন আনে জামায়াত। কিন্তু চূড়ান্ত শুনানির পর সে রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেয় হাইকোর্ট। সংবিধানের সঙ্গে জামায়াতের গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক হওয়ায় দলটির নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয় ওই রায়ে।
পরে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেছিল জামায়াত। কিন্তু ২০১৯ সালের ৫ অগাস্ট সে আবেদন খারিজ হয়। এরপর ওই বছর ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে জামায়াতে ইসলামী, যা পরে আপিল হিসেবে গণ্য করা হয়।
হাইকোর্টের রায়ের পর দশম, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি দলটি।
হাইকোর্ট থেকে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণার পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।
এরপর ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর সর্বোচ্চ আদালতের এক আদেশে দলটির আপিল শুনানির সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য ১২ নভেম্বর তারিখ রাখা হয়। এদিন জামায়াতের আইনজীবীরা সময় চাইলে আপিল বিভাগ শুনানি পিছিয়ে দেন। সে ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের আপিলটি ফের শুনানিতে ওঠে।
কিন্তু সেদিন জামায়াতের পক্ষে কোনও আইনজীবী ছিলেন না। তবে জামায়াতের আইনজীবী প্রয়াত এ জে মোহাম্মদ আলীর পক্ষে অন্য এক আইনজীবী সময় আবেদন নিয়ে দাঁড়ান।
আদালত ওই আবেদন গ্রহণ না করে শুনানির সময় কয়েক ঘণ্টা পিছিয়ে দেয়। কিন্তু শুনানির সময় পিছিয়ে দিলেও সেদিন জামায়াতের পক্ষে কোনও আইনজীবী না থাকায় আপিলটি খারিজ করে দেওয়া হয়।
এবার বিলম্ব মার্জনা করে আপিল শুনানির আবেদন গ্রহণ করেছে আপিল বিভাগ।
এ আদেশের বিষয়ে জামায়াতের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, “শুনানিতে আপিলের পক্ষে আইনজীবী না থাকায় তখন (২০১৮ তা ডিসমিস ফর ডিফল্ট) খারিজ করে দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। এই খারিজ আদেশের অর্থ হচ্ছে, শুনানি না হওয়ায় আপিল বা আবেদনটি খারিজ করে দেওয়া।
“ফলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কী যুক্তিতে আপিলটি করা হয়েছিল, তা সর্বোচ্চ আদালত জানেন না। অর্থাৎ জামায়াতের আপিলটি মেরিটে (গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নে) খারিজ করা হয়নি।”
তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট রুলস অনুযায়ী কোনও আপিল এভাবে খারিজ হলে আপিলকারীর আপিলটি পুনরুজ্জীবীত করতে আবেদনের সুযোগ রয়েছে। এ ধরনের আবেদনকে রেস্টোরেশন পিটিশন বলা হয়ে থাকে। আমরা (জামায়াতে ইসলামী) বিলম্ব মার্জনার আরজি জানিয়ে এই আবেদনটি করি।
“শুনানির পর আদালত আমাদের বিলম্ব মার্জনা করেছেন। সেই সঙ্গে আপিলটি শুনানির জন্য পুনরুজ্জীবীত করেছেন। পরবর্তীতে আরেকটি বিকল্প আবেদন করে আপিল শুনানিতে তুলতে আবেদন করা হবে।”