আওয়ামী লীগ সরকার বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমকে কর্তৃত্ববাদের হাতিয়ারে পরিণত করেছিল বলে মনে করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ১৬ বছর আগে দলটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলেও ধীরে ধীরে কর্তৃত্ববাদের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছিল।
শনিবার ঢাকার ধানমণ্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত সুপ্রিম কোর্ট রিপোর্টার্স ফোরামের (এসআরএফ) সদস্যদের নিয়ে ‘ইনভেস্টিগেটিভ ল রিপোর্টিং’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এসব কথা বলেন তিনি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “২০০৮ সালে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে মাধ্যমে ওই সরকার নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতা এসেছিল। সেই সরকার কেন কর্তৃত্ববাদের চূড়ান্ত পর্যায়ে গেল? তার অন্যতম কারণ ছিল ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, অর্থপাচার রাষ্ট্রীয় সম্পদের আত্মসাৎ। এগুলোকে এক ধরনের বিচারহীনতা দেওয়ার এজেন্ডা ছিল।”
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে করায়ত্ত্ব করার পাশাপাশি দলীয়করণ করা হয়েছিল অভিযোগ করে তিনি বলেন, “যার ফলে যে প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব ছিল সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা, গণতন্ত্রের অন্যতম উপাদান ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, সে পথগুলোকে সম্পূর্ণভাবে রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এটা করার জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে।”
বিশেষ করে বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যম ‘ন্যাক্কারজনকভাবে’ অকার্যর করে দেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ ইফতেখারুজ্জামানের।
তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি গণমাধ্যমকে বলপ্রয়োগ করে বা বিভিন্ন ধরনের প্ররোচনা দিয়ে, এমনভাবে কলুষিত করা হয়েছিল যে, যার ফলে গণমাধ্যমও কিন্তু কর্তৃত্ববাদের বিকাশের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে। বিচার বিভাগেরও ক্ষেত্রে সেটা আমরা দেখেছি।”
তবে এ দুটি প্রতিষ্ঠানের অনেকেই সততা, শুদ্ধাচার এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে পেশাগত উৎকর্ষ বজায় রেখে কাজ করার চেষ্টা করেছেন জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “কেউ কেউ অনেক মূল্যের বিনিময়ে কাজ করেছেন। তাদেরকে হয়রানি করা হয়েছে, মামলার শিকার হতে হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদেরকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
“বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পাশাপাশি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য যে মাধ্যমটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে গণমাধ্যমে যথাযথ ভূমিকা। গণমাধ্যম অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে বিচার বিভাগের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে অনুঘটকের মত দায়িত্ব পালন করতে পারে।”
গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও সীমাহীন নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং তার জবাবদিহীতা নিশ্চিত করার জন্য বাইরের শক্তির প্রয়োজন হয় না। বরং নিজেই নিজের স্বাধীনতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে এবং সেটাই করা উচিত।”
গণমাধ্যমকে প্রতিমুহূর্তে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয় জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “ভালো গণমাধ্যম হয়ে টিকে থাকতে চাইলে পেশাগত উৎকর্ষ বজায় রাখতে হবে। না হলে মানুষ প্রত্যাখ্যান করবে।”
কর্মশালায় প্রশিক্ষক ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনিক আর হক ও অনুসন্ধানী সাংবাদিক বদরুদ্দোজা বাবু। অনুষ্ঠানে এসআরএফ সভাপতি মাসউদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী বক্তব্য দেন।