Beta
বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৫

‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ যে কারণে ৩১ ডিসেম্বর

SS-july-revolutionproclamation-291224
[publishpress_authors_box]

ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আগামী ৩১ ডিসেম্বর ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যে প্লাটফর্মের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারত চলে যান শেখ হাসিনা।

সেই ঘোষণার বিষয়ে রবিবার বাংলামোটরে নিজেদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

সেখানে তারা বলেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বর দেশে মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে এবং আওয়ামী লীগ দল হিসেবে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে বাংলাদেশে। ওইদিন ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ ঘোষণা করা হবে।

এর আগে শনিবার সন্ধ্যার পরই ফেইসবুকে ‘থার্টি ফার্স্ট ডিসেম্বর, নাউ অর নেভার, প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন’- এমন সব স্ট্যাটাস ছড়িয়ে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এমন পোস্ট দেন।

পোস্ট দেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদও।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ৩১ ডিসেম্বর জুলাই বিপ্লবের যে ঘোষণাপত্র ঘোষণা করার কথা রয়েছে তার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনও সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। রবিবার তিনি আরও জানিয়েছেন, সরকার বিষয়টিকে ‘প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবেই দেখতে চায়।

গত জুলাইয়ের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন মাসের মাঝামাঝি সময়ে চূড়ান্ত রূপ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্ট পতন হয় টানা দেড় দশক ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার সরকারের।

গত ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া দুই সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ স্থান পান। পরে যুক্ত হন মাহফুজ আলম, যাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আন্দোলনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন সরকারপ্রধান ড. ইউনূস।

আওয়ামী লীগ সরকারের এই পতনকে ‘ফ্যাসিবাদী’ ব্যবস্থার পতন হিসাবে দেখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীরা। এই ছাত্ররাই সরকারের নিয়োগকর্তা বলে জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেন ড. ইউনূস।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হওয়া সামষ্টিক অভিপ্রায় ও আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে রাষ্ট্রের সংস্কার, পুনর্গঠন ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্যে ৮ সেপ্টেম্বর গঠিত হয় ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’। এর আহ্বায়ক করা হয় নাসির উদ্দিন পাটোয়ারীকে এবং সদস্য সচিব করা হয় আখতার হোসেনকে।

রবিবার জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “এই ঘোষণাপত্র পাঁচই অগাস্টেই হওয়া উচিত ছিল। না হওয়ার ফলে ফ্যাসিবাদের পক্ষের শক্তিগুলো ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে। দুই হাজারের ঊর্ধ্বে শহীদ এবং ২০ হাজারের ঊর্ধ্বে আহতদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে তারা এই আন্দোলনের লেজিটেমেসিকে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।

“জুলাই অভ্যুত্থান, যে গণঅভ্যুত্থানটি হয়েছে…তার মধ্য দিয়ে মানুষ মুজিববাদী সংবিধানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এই যে মানুষ মুজিববাদী সংবিধানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, তার একটি লিগ্যাল ডকুমেন্টেশন থাকা উচিত।”

“সে জায়গা থেকে ৩১শে ডিসেম্বর ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে… ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান ঘিরে আমাদের যে গণ-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, ‘৭২ এর সংবিধানের বিপরীতে গিয়ে মানুষ যে রাস্তায় নেমে এসেছে এ অভ্যুত্থানে- সেটির প্রাতিষ্ঠানিক, দালিলিক স্বীকৃতি ঘোষণা করার জন্য আমরা ৩১ ডিসেম্বর ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে শহীদ মিনার থেকে আমাদের প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন ঘোষণা করবো।”

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “আমাদের পরবর্তী বাংলাদেশের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা-অভিপ্রায় এবং ইশতেহার লিপিবদ্ধ থাকবে এই প্রোক্লেমেশনে। এটা কোনও দলের বা শ্রেণির প্রোক্লেমেশন না।”

“এবং ’৭২ এর যে সংবিধানের বিরুদ্ধে মানুষ দাঁড়িয়েছে, মুজিববাদী চেতনার বিরুদ্ধে মানুষ দাঁড়িয়েছে, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে মানুষ দাঁড়িয়েছে- আমরা চাই স্বীকৃতি দেওয়া হোক।”

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধান এ পর্যন্ত ১৭ বার সংশোধন হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, “আমরা চাই এই মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে, যেখান থেকে এক দফা ঘোষণা করা হয়েছিল, সেই শহীদ মিনার থেকেই মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে।

“ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক দল হয়ে পড়বে।”

সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, জুলাই বিপ্লবে মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন একটি ঘোষণাপত্রে লিখিতভাবে লিপিবদ্ধ করা দরকার, সেটাই কিছুটা দেরিতে হলেও এই ঘোষণাপত্রে থাকবে। প্রয়োজনে সামনে এটি আরও সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিমার্জন হতে পারে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই এই ঘোষণাপত্রের খসড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা নিজ নিজ মন্তব্য ও বক্তব্য দিচ্ছেন, যা ৩১ ডিসেম্বর জুলাই প্রোক্লেমেশনে দেখা যাবে।

তাদের এক নেতা আব্দুল হান্নান মাসুদ ৩১ ডিসেম্বর সবাইকে ঢাকায় আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “যারা পাঁচই অগাস্ট ঢাকায় আসতে পারেননি, তারা সবাই ৩১শে ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হবেন।”

নেতারা আরও জানিয়েছেন, এই কর্মসূচি হবে দলীয় ব্যানারহীন। তবে এতে উপস্থিত থাকবেন জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনে নিহত এবং আহতদের পরিবারের সদস্য, ছাত্র, শ্রমিক, রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদসহ সমাজের নানা অংশের মানুষ।

বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সরকারের সম্পৃক্ততা নেই : প্রেস সচিব

রবিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ৩১ ডিসেম্বর জুলাই বিপ্লবের যে ঘোষণাপত্র ঘোষণা করার কথা রয়েছে তার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনও সম্পৃক্ততা নেই।

প্রেস সচিব বলেন, “এটি একটি প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ। আমরা এটিকে প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ হিসেবেই দেখছি। সরকারের সঙ্গে এর কোনও সম্পৃক্ততা নেই। যারা এটিকে সাপোর্ট করছেন, প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ হিসেবেই সাপোর্ট করছেন।”

বিফ্রিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।

ঘোষণা নিয়ে ফেইসবুকে সরব নেতারা

৩১ ডিসেম্বরের কর্মসূচি নিয়ে শনিবার সন্ধ্যার পরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ফেইসবুক পেইজে পরপর একই ধরনের দুটি পোস্ট দেওয়া হয়। প্রথম পোস্টে লেখা হয়, ‘৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, বিপ্লবীরা প্রস্তুত তো? পরের পোস্টে ইংরেজিতে লেখা হয়, ‘প্রক্লেমেশন অব জুলাই রেভল্যুশন’।

কাছাকাছি সময়ে ফেইসবুকে ইংরেজিতে দুটি পোস্ট দেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। প্রথমটিতে লেখা হয়, ‘কমরেডস, নাউ অর নেভার’, দ্বিতীয়টিতে লেখা হয়, ‘প্রক্লেমেশন অব জুলাই রেভল্যুশন’।

পরে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীও ফেইসবুকে দুটি পোস্ট দেন। প্রথমে তিনি লেখেন, ‘অল আইজ অন শহীদ মিনার, ৩১ ডিসেম্বর, সময়: বিকেল তিনটা’, দ্বিতীয় স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘প্রক্লেমেশন অব জুলাই রেভল্যুশন, নাউ অর নেভার’।

কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, ‘এ বছরেই হবে, ৩১ ডিসেম্বর, ইনশা আল্লাহ’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম লেখেন, ‘৩১ ডিসেম্বর! শহীদ মিনার, বিকেল তিনটা; এখনই সময়, বাংলাদেশের জন্য।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ একটি পোস্টে লেখেন, ‘কমরেডস, ৩১ ডিসেম্বর! নাউ অর নেভার’। আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘প্রক্লেমেশন অব জুলাই রেভল্যুশন, ৩১ ডিসেম্বর, শহীদ মিনার, বিকেল তিনটা।’

সদস্যসচিব আরিফ সোহেল তার ফেইসবুকে লেখেন, ‘জুলাই হাজির হবে ইতিহাসে অমলিন হতে, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪।’

রবিবার রাত ৯টার দিকে এক পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেছেন-  

“১/ আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রাজনীতিকে চূড়ান্তভাবে কবর দিতে হবে। আওয়ামী রাজনীতির প্রত্যাবর্তন অসম্ভব করে দিতে হবে।

২/ ভারতীয় আধিপত্যবাদের অবসান ঘটাতে হবে। স্বাধীন, সার্বভৌম, আত্মনির্ভর মর্যাদার নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।

৩/ বাংলাদেশে একটা সাম্য ও ইনসাফের সমাজ গড়তে হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত