Beta
শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫

কেয়া গ্রুপের পোশাক কারখানা বন্ধ, নেপথ্যে কী

SS-Keya-Group-factory-in-Jarun-area-of _-Gazipur-city-050125
[publishpress_authors_box]

দুই দশক ধরে দেশের প্রসাধন ও টয়লেট্রিজ পণ্যের বাজারে সরব শিল্পগোষ্ঠী কেয়া গ্রুপ তাদের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসা আর চালাবে না।

চলতি বছরের ১ মে থেকে কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের নিট কম্পোজিট ডিভিশন, স্পিনিং ডিভিশন, কটন ডিভিশন এবং কেয়া ইয়ার্ন মিলস লিমিটেডের কারখানার সব কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে কেয়া গ্রুপ।

গত ৩১ ডিসেম্বর কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চেয়ারম্যান (নিট কম্পোজিট ডিভিশন) স্বাক্ষরিত এক নোটিসে কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।

নোটিসে জানানো হয়েছে, শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাংলাদেশ শ্রম আইনের বিধি অনুযায়ী সব পাওনা কারখানা বন্ধের পরবর্তী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে।

কারখানা বন্ধের কারণ হিসেবে কেয়া গ্রুপ তাদের নোটিসে বাজারে অস্থিতিশীলতা, ব্যাংকের সঙ্গে হিসাবের অমিল, কাঁচামাল অপর্যাপ্ততা ও কারখানার উৎপাদন কার্যক্রমের অপ্রতুলতার কথা উল্লেখ করেছে।  

কেয়া গ্রুপের প্রশাসনিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গ্রুপটির চার কারখানায় চার হাজার শ্রমিক কাজ করে।  

গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে গাজীপুর নগরের জরুন এলাকায় অবস্থিত কেয়া গ্রুপের কারখানার শ্রমিকরা নভেম্বর মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করছে। কয়েক হাজার শ্রমিক কারখানার সামনে কোনাবাড়ি এলাকায় কাশিমপুর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সেদিন বেতন না পেয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা।

পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় মালিক-শ্রমিকপক্ষের আলোচনার মাধ্যমে দাবি মেনে নেয় মালিকপক্ষ। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সাময়িক বন্ধ থাকা কারখানা ১ জানুয়ারি খুলে দিয়ে আবার নতুন করে স্থায়ীভাবে বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে কেয়া গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক সাবিনা ইয়াসমিন গণমাধ্যমে বলেন, “আগামী ১ মে থেকে কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি ধাপে শ্রমিকদের সব পাওনা শ্রম আইন অনুযায়ী পরিশোধ করা হবে।”

এদিকে ২ জানুয়ারি সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে ঋণের নামে ৫২৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক পাঠানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ সংস্থাটির উপপরিচালক আজিজুল হক বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন। এ তথ্য জানান দুদকের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আক্তার হোসেন।

সাউথইস্ট ব্যাংকের ২০১৬ সালের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে কেয়া গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ ছিল ৯১২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ফান্ডেড ঋণ ৩৫১ কোটি ২১ লাখ ও নন-ফান্ডেড ৫৬১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

একটি মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান কার্যালয় থেকে কোনও প্রকার ঋণ অনুমোদন ছাড়াই ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে কেয়া গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ৪৯৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা উত্তোলন করে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ করে।

এ ঘটনায় কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক পাঠান, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের তৎকালীন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও গুলশান শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ক্রেডিট ইনচার্জ মো. মোর্শেদ আলম মামুন, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখা প্রধান মো. রেজওয়ানুল কবির, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও এক্সপোর্ট ইনচার্জ অমীয় কুমার মল্লিক ও এসএভিপি অ্যান্ড এক্সপোর্ট ইনচার্জ মো. আশরাফুল ইসলামকে আসামি করা হয়।

আরেক মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাউথইস্ট ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ২৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে।

এ মামলাতেও কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক পাঠানের পাশাপাশি অন্যদের মধ্যে সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের তৎকালীন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও গুলশান শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ক্রেডিট ইনচার্জ মো. মোর্শেদ আলম মামুন ও এসএভিপি অ্যান্ড এক্সপোর্ট ইনচার্জ মো. আশরাফুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।

দুই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০/৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাগুলো করা হয়েছে।

এর আগে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ১৮৩ কোটি ৮৪ লাখ ৮০ হাজার ২৬৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৯৬ কোটি ২৯ লাখ ৭২ হাজার ৭৩৯ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক পাঠান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা করে দুদক।

কারখানা বন্ধ ও মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে আব্দুল খালেক পাঠানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের সময় তা বন্ধ পাওয়া যায়। এই গ্রুপের গাজীপুরের কারখানা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক পাঠান ও তার পরিবারের সব সদস্যই দেশের বাইরে থাকে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত