রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কারামুক্ত খালেদা জিয়া প্রথম রাজনৈতিক কোনও কর্মসূচিতে সরাসরি যোগ দিতে যাচ্ছেন।
আগামী ২১ ডিসেম্বর ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ হবে। শারীরিক কোনও সমস্যা না থাকলে তিনি এই সমাবেশে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক আজিজ উলফাত।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের ওই সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন যদি যোগ দেন, তবে তা হবে ছয় বছর পর কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তার সরাসরি অংশগ্রহণ।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার লো মেরিডিয়াম হোটেলে বিএনপির বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন খালেদা জিয়া। সেটাই ছিল এই পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তার সর্বশেষ অংশগ্রহণ।
ওই সভার তিন দিন পর ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলার রায়ে সাজা পেয়ে কারাগারে যেতে হয়েছিল খালেদা জিয়াকে।
আওয়ামী লীগের শাসনকালে ২০২০ সালের মার্চ মাসে কোভিড মহামারি দেখা দিলে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পেয়ে নিজের বাসায় থাকছিলেন তিনি।
তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করে তাকে মুক্তি দেন।
মুক্ত হলেও অসুস্থতার কারণে রাজনৈতিক কোনও কর্মসূচিতে যাচ্ছেন না ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে ছেলে তারেক রহমানই লন্ডন থেকে দল পরিচালনা করছেন।
এর মধ্যে গত ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে সরাসরি যোগ দিতে সেনা কুঞ্জে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তার আগে অগাস্টে নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন ভার্চুয়ালি। এবার মুক্তিযোদ্ধা দলের সমাবেশে সরাসরি যাচ্ছেন তিনি।
ইশতিয়াক আজিজ রবিবার সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ম্যাডাম আমাদের মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে আসবেন। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ২১ ডিসেম্বর আমরা এই মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের আয়োজন করেছি। সেখানে প্রধান অতিথি থাকবেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া।”
শনিবার রাতে খালেদা জিয়ার বাড়িতে গিয়ে সরাসরি আমন্ত্রণ জানিয়ে আসেন ইশতিয়াক আজিজ। তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম।
ইশতিয়াক বলেন, “ম্যাডাম সম্মতি দিয়েছেন; বলেছেন, শরীর ভালো থাকলে মুক্তিযোদ্ধাদের এই সমাবেশ তিনি আসবেন। আমাদের প্রত্যাশা ম্যাডাম এই সমাবেশ যোগ দেবেন, ইনশাল্লাহ।”
মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি এই সমাবেশে যোগ দেবেন।
এই সমাবেশের আয়োজন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ বলেন, সারাদেশ থেকে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের ঢাকায় আনার উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।
“ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর এই সমাবেশটি দেশনেত্রীকে সামনে রেখে করার প্রেক্ষাপটে এর আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
২০১৮ সালে জেলে যাওয়ার আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মুক্তিযোদ্ধা দলের মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেই সমাবেশটি হয়েছিল ঢাকা মহানগর নাট্য মঞ্চে।
সেই সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে ফায়দা হাসিল করলেও মুক্তিযোদ্ধাদের আসলে ভয় পায়। সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের তারা মূল্যায়ন করে না।
মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার এবং পরবর্তীকালে রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের অবদানের কথাও তুলে ধরেছিলেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া।