Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আপিলেও খালাস খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
[publishpress_authors_box]

সব শেষ মামলা হিসেবে জিয়া অরফানেজ (এতিমখানা) ট্রাস্ট মামলাতেও খালাস পেলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর ফলে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আর কোনও মামলায় দণ্ডাদেশ থাকল না।

এ মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে খালেদার আপিল চূড়ান্ত শুনানি শেষে তা যথাযথ বলে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমদ নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ বুধবার খালেদা জিয়াসহ ছয় আসামির সবাইকে খালাস দিয়ে রায় দেয়। একই সঙ্গে এ মামলায় বিচারিক আদালত ও হাই কোর্টের রায় বাতিল ঘোষণা করেছে সর্বোচ্চ আদালত।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আরও পাঁচজনের ১০ বছর করে কারাদণ্ড হয়েছিল। এ রায়ের ফলে সবাই সাজা থেকে খালাস পেলেন। তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও আর কোনও মামলায় দণ্ড থাকল না।

রায়ের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, “এ রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”

যদিও এ মামলায় রাষ্ট্রপতি আগেই দণ্ড মওকুফ করায় খালেদা জিয়া মুক্ত; বুধবার রায় ঘোষণার দিন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। সেখানে ছেলে তারেক রহমান তার দেখভাল করছেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা এই মামলায় আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল ঢাকার জজ আদালত।

সেদিনই শুরু হয়েছিল খালেদা জিয়ার কারাবাস। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল (দাতব্য) ট্রাস্ট মামলায়ও তার দণ্ডাদেশ হয় বিচারিক আদালতে। অরফানেজ দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া আপিল করলে হাই কোর্টে রায়ে সাজা বেড়ে যায়। ওই বছরেরই ৩০ অক্টোবর দেওয়া সেই রায়ে তাকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বন্দি খালেদা জিয়াকে ২০২০ সালে কোভিড মহামারির সময় শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল সরকার। তারপর থেকে তিনি গুলশানের বাড়িতে ছিলেন। ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে চেয়েছিলেন, তবে দেওয়া হচ্ছিল না।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন রাষ্ট্রপতি। এতে তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে গত সপ্তাহেই যুক্তরাজ্যে যান চিকিৎসার জন্য।

এদিকে দণ্ড মওকুফ হলেও সাজার রায় বাতিলে আইনি লড়াই চালিয়ে যান খালেদা জিয়া। তাতে গত ২৭ নভেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড থেকে তাকে খালাস দেয় হাই কোর্ট। ওই মামলায়ও বিচারিক আদালতে রায় হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় গত ১১ নভেম্বর হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) মঞ্জুর করে আপিল বিভাগ। সেদিন সাজাও স্থগিত করা হয়।

এরপর গত ৭ জানুয়ারি থেকে এ মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়। টানা কয়েক দিন শুনানির পর মঙ্গলবার শুনানি শেষ হয়।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল। তাদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মাকসুদ উল্লাহ। আরেক আপিলকারী ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও অনির আর হক। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসিফ হাসান।

ট্রাস্ট্রের অর্থ আত্মসাতের যে অভিযোগ করা হয়েছিল মামলায়, তা খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বরাবরই অস্বীকার করে আসছিলেন। তারা বলে আসছিলেন, ট্রাস্টের এক টাকাও আত্মসাৎ বা তছরুপ হয়নি। নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা আছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তা বিরুদ্ধে এই মামলা হয়েছে।

শুনানিতে খোদ দুদকের আইনজীবী মো. আসিফ হাসান বলেন, “এই ট্রাস্টের টাকা কিন্তু আত্মসাৎ হয়নি। জাস্ট ফান্ডটা মুভ হয়েছে। তবে সুদে আসলে অ্যাকাউন্টেই টাকাটা জমা আছে। কোনও টাকা ব্যয় হয়নি।”

খালেদার আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, “দুদকের আইনে নেই বিচারিক আদালতের দেওয়া ৫ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করা যাবে। তারপরও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে একতরফা শুনানি করে হাই কোর্ট দুঃখজনকভাবে খালেদা জিয়াকে ১০ বছরের সাজা দেন।”

অনাথ শিশুদের জন্য অনুদান হিসেবে আসা ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এই মামলাটি হয়েছিল ২০০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ছেলে তারেক রহমানসহ আরও চারজনকে আসামি করা হয়।

বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ছয় আসামির সবাইকে মোট ২ কোটি ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডও করা হয়।

তারেক রহমান ২০০৮ সালে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানোর পর সেখানেই রয়েছেন। এখন মা লন্ডন যাওয়ার পর তার চিকিৎসার দেখভাল করছেন তিনি। মামলার বাধা কাটিয়ে তিনি অচিরেই দেশে ফিরবেন বলে বিএনপি নেতারা বলছেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত