টানা দুবার নারী সাফে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। অথচ সেই দেশেরই নারী ফুটবল লিগের কাঠামো সবচেয়ে দুর্বল। কোনও রকমে নামকা ওয়াস্তে একটা লিগের আয়োজন করে ফুটবল ফেডারেশন। যেখানে বেশিরভাগ ম্যাচগুলো হয় একপেশে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ম্যাচের পাশাপাশি শুরু থেকেই অনুমান করা যায় সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন দলের নাম। এমনকি দেশের সেরা দলগুলোর বেশিরভাগই অংশ নেয়না এই নারী লিগে। এবার সেই লিগের পরিবর্তন আনতে চায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
বাফুফে ভবনে রবিবার দেশের শীর্ষ সারির ১০টি ক্লাব ও বিভিন্ন সময়ে অংশ নেওয়া নারী ফুটবল দলগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করেছন নারী ফুটবল লিগ কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। যে সভার মূল আলোচ্য ছিল নারী লিগের উন্নতি।
যদিও এই সভায় উপস্থিত ছিল না প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস, আবাহনী, মোহামেডানের মতো বড় দলগুলোর কোনও প্রতিনিধি। তবে চট্টগ্রাম আবাহনী, ফরাশগঞ্জ, রহমতগঞ্জ, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নাসরিন ফুটবল একাডেমিসহ বেশ কিছু ক্লাবের প্রতিনিধি এসেছিলেন।
বলা হচ্ছে দেশের সেরা ক্লাবগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু বাফুফের প্রিমিয়ার লিগ কমিটির চেয়ারম্যানই এই বিষয়ে অবগত নন!
এ নিয়ে সভা শেষে প্রশ্ন করা হলে কিরণের যুক্তি ছিল, “আমি প্রফেশনাল লিগ কমিটির কোনও ক্লাবকে ডাকিনি। ডেকেছি বাংলাদেশের টপ ১০টা ক্লাবকে। প্রফেশনাল লিগ কমিটির যদি কোনও ইস্যু এখানে থাকতো তাহলে অবশ্যই প্রফেশনাল লিগ কমিটির চেয়ারম্যান বা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এটা করতাম। আমি এখানে ডেকেছি বর্তমান নারী দল ও দেশের টপ ১০টা ক্লাবকে। তারা বিসিএল না বিপিএল খেলে ডাজ নট মেটার। আমার সেটা দেখার বিষয় না।”
বিভিন্ন সময়ে নারী ফুটবলের উন্নতির কথা মুখে বললেও আদৌ কি সেই উন্নতি চান মহিলা ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান? তার একগুয়েমির কারণেই গত বছর এএফসি ওমেন্স চ্যাম্পিয়নস লিগে বাংলাদেশের ক্লাব অংশ নিতে পারেনি। সিরাত জাহান স্বপ্নাসহ অনেক ফুটবলার একাধিকবার দেশের বাইরের লিগে খেলার অনুমতি চেয়েও পাননি। হতাশায় অনেক ফুটবলার অবসরেই চলে গেছেন।
এবারের নারী লিগটা যদিও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও মানসম্পন্ন করতে উদ্যোগ নিয়েছেন কিরণ। তবে এর পেছনে বড় কারণ হিসেবে তিনি ফিফার চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়েছেন, “ফিফার যে মানদন্ড আছে সেটা যদি সম্পন্ন করতে হয় তাহলে আমাদের লিগ ৬ মাস ধারাবাহিক করতে হবে। এবং কমপক্ষে ৯০টি ম্যাচ হতে হবে লিগে। সেই মানদন্ড সামনে রেখে এবার লিগটা সাজাতে চাই।” এই মানদন্ড অনুযায়ী না হলে ফিফার ফান্ডেও টান পড়তে পারে। তাই কিরণের এই তৎপরতা।
সেক্ষেত্রে ক্লাবগুলোর কাছে জানতে চেয়েছেন তাদের চাওয়াগুলো, “আমরা জানতে চেয়েছি তাদের কোনও সুবিধা-অসুবিধা আছে কিনা। তারা কোন দিক থেকে ফেডারেশনের কাছে সহযোগিতা চাইছে। তাদের কি কি সীমাবদ্ধতা আছে।”
ক্লাবগুলোর সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা আর্থিক। সেই সমস্যা সমাধানের কথাই বলেছেন সভায় অংশ নেওয়া ফরাশগঞ্জের প্রতিনিধি মানস বোস বাবুরাম, “৬ মাসের লিগ করতে হলে অন্তত ১০ লাখ করে টাকা করে প্রতি মাসে আমাদের দিতে হবে। অথবা আমাদের জন্য যেন কোনও স্পনসরের ব্যবস্থা করে দেয় ফেডারেশন। এটাই ছিল আমাদের চাওয়া।”
যদিও এর আগে দু-তিনটা ক্লাব বাফুফে ভবনের ডরমেটরিতে থেকে-খেয়ে লিগ খেলেছে। ট্রেনিং করেছে বাফুফের কোচের অধীনে। বাফুফের খেয়ে-দেয়ে, বাফুফের কোচ ব্যবহার করে চ্যাম্পিয়ন, রানার্স আপ হয়েছে। এবার কি একই নিয়ম অনুসরণ করবে বাফুফে? উত্তরে বাবুরাম জানান, “এসব বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি এই সভায়।”
এবারের লিগে মেয়েদের জন্য পুলপ্রথা করতে চান কিরণ। তিনি বলেন, “পুলপ্রথা সাপোর্ট করেনি আগের কমিটি। কারণ আগের প্রেসিডেন্ট ফুটবলার ও কোচ ছিলেন। উনি সব সময় ফুটবলারদের ভালো চিন্তা করতেন। পুল করলে মেয়েরা টাকা কম পায়। যে কারণে তখন পুল রাখিনি। তখন দেখেছি যাদের টাকা আছে তারা সব প্লেয়ার নিয়ে জড়ো করে রাখে। অন্য ক্লাবগুলোতে খেলার সুযোগ পায় না। এ বছর সেটা করবো না। এ বছর পুল করবো। কারণ আমরা চাই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক লিগ।”
মোহামেডান, আবাহনী, বসুন্ধরা কিংসের নারী লিগে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে এখনই আশাবাদী হতে চান না তিনি, “এই ক্লাবগুলোকে নিয়ে তখন আশাবাদী হবো যদি তাদের আর্থিক সহযোগিতা দিতে পারি। তাহলে হয়তো এই ক্লাবগুলোও অংশ নেবে।”