কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টুকে নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী কয়েকটি বাড়িতে লুটপাট চালায়, আগুন ধরিয়ে দেয়।
চেয়ারম্যান সেন্টুর মরদহ প্রায় দুই ঘণ্টা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে পড়েছিল। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
পরিবারের সদস্যদের ধারণা, এ হত্যাকাণ্ডে একই এলাকার আলতাফ হোসেনের ছেলে রাসেল জড়িত। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
স্থানীয়রা বলছেন, সেন্টু এক সময় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন না। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ সময় তাকে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা করতে দেখা যায়। এর আগেও তিনি একই ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও নিয়মিতই ইউনিয়ন পরিষদে যেতেন সেন্টু। অন্যান্য দিনের মতো সোমবার সকালেও বাড়ি থেকে সামান্য দূরে অবস্থিত ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদে যান তিনি। সেখানে দাপ্তরিক কাজ করছিলেন তিনি। সেখানে ইউনিয়ন পরিষদে দুই সদস্য ও কয়েকজন গ্রাম পুলিশ ছিলেন।
এসময় পেছনের জানালা দিয়ে চেয়ারম্যানকে লক্ষ্য করে চার-পাঁচ রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালায়। এক পর্যায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা তথ্য সংগ্রহ ও ছবি তুলতে গেলে তাদের ওপর চড়াও হয় উত্তেজিত জনতা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শী গ্রাম পুলিশ সদস্য নাসির উদ্দিন জানান, তিনি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের বাইরে বসে ছিলেন। সাড়ে ১১টার দিকে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের পেছনের জানালা দিয়ে চার-পাঁচ রাউন্ড গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা। গুলির শব্দ শুনে তিনি প্রাণভয়ে পরিষদের একটি কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে চেয়ারম্যান কার্যালয়ে সেন্টুর গুলিবিদ্ধ মরদেহ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ড শেষে পদ্মা নদী দিয়ে ট্রলারে করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
নিহত চেয়ারম্যানের মেয়েজামাই হাসিবুর রহমান বিজয় বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে তার শ্বশুরকে এলাকার একটি গোষ্ঠী হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল। তারাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে। এলাকার আলতাফ হোসেনের ছেলে রাসেল তাকে গুলি করে হত্যা করেছে বলে তাদের ধারণা।
নিহতের পুত্রবধূ শামীমা আক্তার ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিরপুর সার্কেল) আব্দুল খালেক জানান, কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাকে গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।