Beta
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪

এলএনজি সরবরাহ অর্ধেক, বিদ্যুৎ সামলাতে কয়লায় ভর

ss-LNG-coal-electricity-020624
Picture of আসিফ সিদ্দিকী

আসিফ সিদ্দিকী

কক্সবাজারের মহেশখালীর ভাসমান যে দুটি টার্মিনাল থেকে আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ করা হয়, তার মধ্যে সামিটের টার্মিনলটি বন্ধ হওয়ায় দেশের গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেকটাই কমেছে। বন্ধ রাখতে হয়েছে বেশ কয়েকটি সার কারখানাও।

তবে লোডশেডিং সামাল দিতে সরকার বেশি খরচের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করছে বলে জ্বালানি বিভাগ জানিয়েছে।  

দেশের মোট গ্যাস উৎপাদন সক্ষমতা হচ্ছে দিনে ৩ হাজার ৮২৯ মিলিয়ন ঘনফুট। পেট্রোবাংলার হিসাবে, ১ থেকে ২ জুন সরবরাহ দেওয়া হচ্ছিল ২ হাজার ৬৩১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। সেই হিসাবে দিনে প্রায় ১২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কম সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে।

শুধু সামিটের টার্মিনালের মাধ্যমেই সরবরাহ দেওয়া হতো ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। গত ২৯ মে সন্ধ্যায় ভেসে আসা একটি পল্টুন ভাসমান টার্মিনালটিতে ধাক্কা দিলে ইউনিটের ব্যালাস্ট ওয়াটার ট্যাঙ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওইদিন রাতেই টার্মিনালটি থেকে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

সামিটের মহাব্যবস্থাপক (পাবলিক রিলেশনস অ্যান্ড মিডিয়া) মোহসেনা হাসান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিশেষজ্ঞ দলের সম্পূর্ণ মূল্যায়নের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

তবে এই টার্মিনাল কবে থেকে এলএনজি সরবরাহে ফিরতে পারবে তা জানা যায়নি।

এখন কেবল যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জির ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এই টার্মিনাল দিয়ে সর্বোচ্চ ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের সুযোগ আছে।

ফলে ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার অর্ধেক এলএনজি এখন সরবরাহ করা হচ্ছে।

পেট্রোবাংলার সর্বশেষ ২ জুনের তথ্য বলছে, গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ অনেকটাই কমেছে। ১ জুন সব গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের চাহিদা ছিল ২ হাজার ৩১৬ মিলিয়ন ঘনফুট। বিপরীতে সরবরাহ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৯৭০ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ চাহিদা প্রায় ৪২ শতাংশই ঘাটতি ছিল। এর ফলে চট্টগ্রামের ৪টিসহ দেশের অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রই বন্ধ রাখতে হয়েছে।

সামিটের টার্মিনাল বন্ধ হওয়ার পর চার দিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (সিইউএফএল)। এই কারখানার উৎপাদন সচল রাখতে দরকার ছিল ৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। কিন্তু গ্যাস না মেলায় বন্ধ রাখা হয়েছে কারখানাটি।

সিইউএফএলের পাশেই অবস্থিত বহুজাতিক সার কারখানা কর্ণফুলী এগ্রিকালচার ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো)। এই কারখানাটির চাহিদা আছে ৬৩ মিলিয়ন ঘনফুট, পাচ্ছে ৪৭ মিলিয়ন ঘনফুট।

বন্ধ রাখা হয়েছে তিতাস গ্যাসের অধীন একটি সার কারখানা, বাখরাবাদ গ্যাসের অধীন একটি সার কারখানা এবং সিলেট জালালাবাদ গ্যাসের অধীন একটি সার কারখানা।

গ্যাসনির্ভর বিদ্যুত উৎপাদন কমলেও বাড়েনি লোডশেডিং

সরকার সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনে দুই ধরনের জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে। একটি হচ্ছে গ্যাসনির্ভর, অন্যটি কয়লানির্ভর। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বেশি খরচ হওয়ায় সেদিক থেকে নজর কমাচ্ছে সরকার।

সামিটের এলএনজি সরবরাহ বন্ধ এবং দেশি কিছু কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন কমে যাওয়ার পর দেখা গেছে দেশে লোডশেডিং সেভাবে হয়নি। এর মূল কারণ গ্যাস বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। ফলে জ্বালানি বিভাগকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপর্যয়ে পড়তে হয়নি।

গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিদিন এখন গ্যাসের দরকার ২ হাজার ৩১৬ মিলিয়ন ঘনফুট। এই চাহিদার বিপরীতে ১ জুন মিলেছে মাত্র ৯৭০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক আছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ২ জুনের যে হিসাব দিয়েছে, তাতে দেখা যায়, ১ জুন বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে চাহিদার সমান। সেদিন বিদ্যুতের পিক আওয়ারে চাহিদা ছিল ১৫ হাজার ৩৩৬ মেগাওয়াট। চাহিদার সমান সরবরাহও ছিল। ফলে কোনও লোডশেডিং হয়নি তাদের হিসাবে।

জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “১৫ হাজার যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি, তার মধ্যে পানি বিদুৎ ছাড়া বাকি বিদ্যুৎ উৎপাদনে একদিনে আমাদের খরচ হয়েছে ২১৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে তেলে খরচ হয়েছে সবচেয়ে বেশি ১০০ কোটি টাকা। গ্যাসে খরচ হয়েছে ৪১ কোটি টাকা। আর কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৭৫ কোটি টাকা।  

“আপনি দেখবেন দেশের মানুষের দুর্ভোগ কমাতে আমরা বেশি খরচ হলেও তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কার্পণ্য করিনি। এই কারণে মোট বিদ্যুতের ৪৯০ মেগাওয়াট এসেছে মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। বাঁশখালীর কয়লাভিত্তিক এসএস পাওয়ার থেকে এসেছে ৯৬৬ মেগাওয়াট। আর রামপাল থেকে এসেছে ১ হাজার ২৫ মেগাওয়াট।

তার কথার সত্যতাও মিলেছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের তথ্যে।

মহেশখালীতে সামিটের এলএনজি বন্ধ হওয়ার আগে ২৮ মে পর্যন্ত বাঁশখালীর এসএস পাওয়ার থেকে বিদ্যুৎ এসেছিল দিনে ৪৫৫ মেগাওয়াট। মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আসতো দিনে ৩০২ মেগাওয়াট। আর রামপাল থেকে আসতো ৫৫০ মেগাওয়াট। ফলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েই সংকট সামাল দিতে চাইছে সরকার।



আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত