নোয়াখালীতে এক সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের বক্তব্যের সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় ‘নব্য ফ্যাসিবাদের দোসরদের’ হাত রয়েছে বলে মন্তব্য করে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ডাকসুর সাবেক এই ভিপি।
নোয়াখালী শহরের হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে শনিবার বিকালে সমাবেশের আয়োজন করে গণঅধিকার পরিষদ। ‘তারুণ্যের গণসমাবেশ’ শীর্ষক সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন নুরুল হক নুর।
তার বক্তব্যের সময় বিকাল ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে হঠাৎ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে মঞ্চে থাকা গণঅধিকার পরিষদের নেতা থেকে শুরু করে সমাবেশস্থলে উপস্থিত লোকজন ক্ষুব্ধ হয়।
দলটির এক নেতা ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরকে সেসময় বলছিলেন, “এটা ভিআইপি লাইন, এটাতে বিদ্যুৎ যায় না। গেলে ৩০ সেকেন্ড লোডশেডিং থাকে।”
একপর্যায়ে ওই নেতাকে মুঠোফোনে একজনকে বলতে শোনা যায়, “ফিরোজ ভাই, আমরা চিঠি দিয়েছি। আমাদের কারেন্ট সবসময় ছিল। ভিপি ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আপনার বিভাগ বিদ্যুৎ নিয়ে গেছে। এটা পরিকল্পিত।”
পাঁচ মিনিট পর ৫টা ২০ মিনিটের দিকে সমাবেশস্থলে বিদ্যুৎ ফিরে আসে।
এই ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত’ উল্লেখ করে সমাবেশে নুরুল হক নুর বলেন, “নোয়াখালীতে গণঅধিকার পরিষদের ঐতিহাসিক সমাবেশ চলছে। এসময়ে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া স্পষ্টতই পরিকল্পিত ঘটনা বলে আমরা মনে করি।
“আমাদের নেতাদের বলব, বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের কাছে এই ঘটনার জবাবদিহি চাইতে। তারা কোন নব্য ফ্যাসিবাদের দোসর সেটি চিহ্নিত করতে হবে। তারা কাদের সুযোগ দেওয়ার জন্য গণঅধিকার পরিষদের এই সমাবেশকে পণ্ড করার জন্য বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করেছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। আমরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টাকে ঢাকায় গিয়ে জবাবদিহিতার আওতায় আনব।”
এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুল বাহার বলেন, “গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সমাবেশস্থলে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার আবেদন করা হয়েছিল।
“সে অনুযায়ী ৫টার কিছুক্ষণ পরে সমাবেশ শেষ হয়ে গেছে মনে করে অন্যত্র লোডশেডিং কমানোর জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে হরিনারায়ণপুর বিদ্যালয় এলাকায় লোডশেডিং দেওয়া হয়। সমাবেশস্থল থেকে কেউ সমাবেশ শেষ হয়নি জানালে অবশ্যই আরও পরে লোডশেডিং দেওয়া হতো। সমাবেশস্থল থেকে জানানোর সঙ্গে সঙ্গে আবার বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়।”
সমাবেশে নুর যা বললেন
নোয়াখালীতে সমাবেশে ডাকসুর সাবেক ভিপি গণঅভ্যুত্থানে গণঅধিকার পরিষদের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেন, “ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যে নায়করা সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ এবং ছাত্র, যুব শ্রমিক অধিকার পরিষদের এই তরুণরা ছিল তার অগ্রভাগে।
“আজকে যখন সারা দেশে গণঅধিকার পরিষদের গণজোয়ার শুরু হয়েছে, পুরনো রাজনীতির বিপরীতে নতুন ধারার রাজনীতির প্রতি মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়েছে, ঠিক সেসময় নোয়াখালীতে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলে যারা দখলদারি, চাঁদাবাজি, লুটপাট ও নৈরাজ্য কায়েম করেছিল, তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে নোয়াখালীকে একটি ত্রাসের শহরে পরিণত করতে চায় নব্য ফ্যাসিবাদীরা। লুটপাট, চাঁদাবাজি, অত্যাচার অব্যাহত রাখতে চায় তারা। তারাই গণঅধিকার পরিষদকে ভয় পায়।”
সংস্কার প্রসঙ্গে নুরুল হক নুর বলেন, “আমাদের রাষ্ট্রের সংস্কার প্রয়োজন, পুলিশের সংস্কার প্রয়োজন। তবে সবকিছুর আগে রাজনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন। সংসদের মেয়াদ ৫ বছর থেকে কমিয়ে ৪ বছরে নিয়ে আসতে হবে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
“রাজনীতির নামে যেন লুটপাট ও চাঁদাবাজি না হয় এবং সাধারণ মানুষ যেন রাজনীতি করতে পারে ও নেতৃত্ব দিতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সরকারিভাবে একটা বরাদ্দ দিতে হবে।”
নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব দূর করা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে ইউনিয়ন নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা লাগে, যা খুবই হতাশাজনক। এমন পরিস্থিতি আর আনতে দেওয়া যাবে না।”