আগরতলা অভিমুখী লংমার্চের সমাপনী সমাবেশ থেকে ভারতের আধিপত্যকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির তিন সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতারা।
তারা বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ কোনও দেশের প্রভুত্ব মেনে নেয়নি, ভারতের প্রভুত্বও মেনে নেবে না। দেশ নিয়ে কোনও ষড়যন্ত্র করতে চাইলে তা দলের নেতা-কর্মীরা প্রতিহত করবে।
লাখো মানুষ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউরায় সমাপনী সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বিএনপির এই তিন সংগঠনের ভারতের ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা অভিমুখী লংমার্চ।
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলা, জাতীয় পতাকা অবমাননা ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বুধবার এ কর্মসূচি পালন করল বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন।
এদিন সকাল ৯টায় ঢাকার নায়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সামনে থেকে লংমার্চ শুরু হয়। লংমার্চ শুরুর আগে নয়াপল্টনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে হয়। সেখানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আখাউড়া সীমান্তে সমাবেশের মধ্যে দিয়ে লং মার্চ শেষ হয়।
নয়াপল্টনে উদ্বোধনী বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা কিনেছি, এই স্বাধীনতা আমরা বিক্রি করে দেব? আমরা পিন্ডির কাছে থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি, এটা দিল্লির কাছে আমরা আত্মসমর্পণ করব? এই রক্ত আমাদের নেই।
“আজকে দিল্লির যারা সাম্প্রদায়িক শাসকগোষ্ঠী তারা মনে রেখ, তোমরা একজন ভয়ঙ্কর রক্তপিপাসু লেডি ফেরাউনকে টিকিয়ে রাখার জন্য সমর্থন দিয়েছিলে। আজকে ভারতের শাসকগোষ্ঠী গোটা পৃথিবীর গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কাছে সমালোচিত। অথচ ভারত গণতান্ত্রিক দেশ। ওরা (ভারত) বাংলাদেশের মানুষের রক্তের যে তেজ, আত্মশক্তি, বিরত্ব- এটা দিল্লীর শাসকরা বুঝতে পারেনি।”
পরে লংমার্চের গাড়ি বহর দুপুর সাড়ে ১২টায় ভৈরব পৌঁছায়। সেখানে সংক্ষিপ্ত পথ সভা শেষে আবার রওনা দেওয়া হয়।
বিকাল সোয়া ৪টার দিকে আখাউড়া সমাবেশ শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। আগরতলা সীমান্ত থেকে ১০০ মিটার দূরে স্থলবন্দর মাঠে এই সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আখাউরা পৌঁছেই নেতাকর্মীরা শিগগিরই শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।
সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুবদল সভাপতি মোনায়েম মুন্না বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত স্বাধীনচেতা জাতি। আমরা বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ। ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব ভারতের। তারা সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আর বাংলাদেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে হবে। আমাদের কোনও প্রভু নেই।
“আমরা ভারতকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে দেখি। আর শেখ হাসিনা সরকারকে ভারত আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। আপনারা ভারতকে বলেন, শেখ হাসিনাসহ তাদের দোসরদের ফিরিয়ে দিতে।”
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান বলেন, “দাসত্ব নয়, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য জীবনকে বাজি রাখতে হবে। প্রয়োজনে দেশের সম্মান রক্ষায় আবারও রক্ত দেব। তবুও দিল্লির দাসত্ব মানবে না এদেশের জনগণ।”
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, “এই লংমার্চ সফল হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে এই লংমার্চ শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারতকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছি, শেখ হাসিনা আপনাদের পৃষ্ঠপোষকতায় হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গুম ও খুন করা হয়েছে। সুতরাং যতই ষড়যন্ত্র করুন না কেন—তা সফল হবে না।”
আগরতলা সীমান্তে সতর্কতা বাড়িয়েছে ভারত
বিএনপির আগরতলামুখী লংমার্চের পরিপ্রেক্ষিতে ওই সীমান্তে সতকর্তা বাড়িয়েছে ভারত। আগরতলায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত চেক পোস্টে বাড়তি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার পুলিশ সুপারিনটেন্ডেন্ট কিরণ কুমার কে।
তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “গত এক সপ্তাহ ধরেই আমরা বাড়তি পুলিশ বসিয়েছি এখানে। ২৪ ঘণ্টা সতর্কতা রয়েছে। বিএসএফের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি আমরা। সীমান্তবর্তী অঞ্চল ও সাম্প্রদায়িকভাবে সংবেদনশীল এলাকাগুলোতে টহল চলছে। সীমান্তেও প্রহরা বাড়ানো হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে।”
সীমান্ত চেকপোস্টে দেখা যায়, সেখানে সীমান্তের কাছে বিএসএফ যেমন বাড়তি বাহিনী মোতায়েন করেছে, তার সঙ্গেই কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী এবং ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলসের সদস্যরাও রয়েছেন। তবে সীমান্ত বন্ধ করা হয়নি।