Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

‘লাভ হরমোন’ গভীর করে সামাজিক বন্ধন, প্রতিরোধ করে ডিমেনশিয়া

Love hormone
[publishpress_authors_box]

উষ্ণ আলিঙ্গনের অনুভূতি কিংবা গভীর বন্ধন- এই দুইয়ের সঙ্গে জড়িত হরমোনকে বলা হয় ‘অক্সিটোসিন’। একে ‘লাভ হরমোন’ অথবা ‘কাডল হরমোন’-ও বলা হয়। আস্থা, বিশ্বাস, সহমর্মিতা এবং সামাজিক বন্ধনের জন্য এই হরমোনকে দায়ী করা হয়।

তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে মানবিক সম্পর্ক ছাড়াও এই হরমোন ডিমেনশিয়া (স্মৃতিভ্রষ্টতা) এবং মাদক আসক্তি থেকে রক্ষা পেতেও সহায়তা করে।

আর এই যুগান্তকারী গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন টোকিও ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্সের অধ্যাপক আকিয়োশি সাইতোহ, জুনপেই তাকাহাশি এবং ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ মেরিডিথ বেরি। তাদের এই গবেষণায় ডিমেনশিয়া থেকে রক্ষা পেতে অক্সিটসিনের ভূমিকার কথা জানা গেছে। আশার কথা হলো, মরফিন এবং হিরোইন জাতীয় আসক্তি থেকে রক্ষা করতে এই হরমোন ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে বলে এই গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

স্মৃতি রক্ষায় অক্সিটোসিনের ভূমিকা

সামাজিক আচরণের ক্ষেত্রে অক্সিটোসিনের ভূমিকা জানা গেলেও, জ্ঞাণ অর্জনমূলক কার্যক্রমে এই হরমোন কিভাবে প্রভাব ফেলে তা আজও জানা যায়নি।

তাই অধ্যাপক অধ্যাপক সাইতোহের গবেষণা দল অনুসন্ধান করেছেন, স্মৃতি গঠন ও সংরক্ষণে অক্সিটোসিনের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ইঁদুরের ওপর গবেষণা করে আমরা দেখিয়েছি অক্সিটোসিন ডিমেনশিয়ার মতো রোগের একটি সমাধান হতে পারে”।

গবেষণায় ইঁদুরের মস্তিষ্কের কিছু জায়গায় অক্সিটোসিনের সক্রিয়তা পরীক্ষা করা হয়। এরপর পরীক্ষা করা হয় ইঁদুরের মনে রাখার ক্ষমতা। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করা হয় কিভাবে কোন প্রাণী নতুন একটি বস্তু মনে রাখে।

গবেষণা দলটি ইঁদুরের মস্তিস্কের বিশেষ কিছু অঞ্চলে অক্সিটোসিন প্রয়োগ করেন। এতে দেখা যায় শরীরকে কর্মক্ষম রাখার জন্য দায়ী, মস্তিস্কের এমন অঞ্চলগুলো এতে উদ্দীপ্ত হয়।

মস্তিষ্কের এই এলাকাগুলো আবেগ এবং স্মৃতির সঙ্গে যুক্ত।

অক্সিটোসিন প্রয়োগের এই গবেষণায় পাওয়া গেছে আশ্চর্যজনক ফল। দেখা গেছে স্বল্প মেয়াদী স্মৃতি মনে রাখার ক্ষেত্রে ইঁদুরগুলোর বিশেষ কোন অগ্রগতী নেই। অথচ দীর্ঘমেয়াদী ক্ষেত্রে পাওয়া গেছে উল্লেখযোগ্য সাফল্য। বিশেষ করে নতুন কোন বস্তু সনাক্তের ক্ষেত্রে।

গবেষকরা বলছেন ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে এই অনুসন্ধানগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষ ডিমেনশিয়া এবং আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত।

তারা মনে করছেন এই রোগগুলো উপশম করতে এই গবেষণা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।

অনেকেই মনে করেন, একাকীত্ব এবং সামাজিক মেলামেশার অভাব ডিমেনশিয়ার উপসর্গগুলোকে আরও তীব্র করতে পারে।

ছবি-পেক্সেলস

অধ্যাপক সাইতোহ এ ব্যাপারে বলেন, “সামাজিক মেলামেশার সুযোগ কম এমন সমাজে ডিমেনশিয়া রোগের আক্রান্ত হবার সুযোগ বেশি বলে একটি পোক্ত ধারণা আছে। তবে এই ঘটনার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আমাদের জানা নেই।”

তবে অক্সিটোসিনের ওপর গবেষণার ভিত্তিতে গবেষকদল প্রস্তাব করছেন, সামাজিক বন্ধন ডিমেনশিয়ার মতো রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।

মাদকাসক্তি নিরাময়ে অক্সিটোসিন

ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক মাদকে আসক্ত এমন ৫৫ থেকে ৮৫ বছর বয়সী ব্যক্তিদের নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করছেন।

গবেষণার অংশ হিসেবে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে তাদের অক্সিসোডন নামের একটি মাদক দেওয়ার পর তাদের সিনথেটিক অক্সিটোসিন দেওয়া হবে।

এরপর, গবেষকরা তাদের হার্ট রেট এবং শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করে উপাত্ত সংগ্রহ করবেন।

এছাড়া, তারা মনে রাখার প্রক্রিয়া এবং আবেগী প্রতিক্রিয়াও মূল্যায়ন করবেন। ব্যথার প্রতিক্রিয়া মূল্যায়ণ করতে, তারা উরুর ওপর প্রয়োগ করবেন মৃদু চাপ এবং হাতে প্রয়োগ করবেন বিভিন্ন মাত্রার তাপমাত্রা।

সবশেষে গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের মনে রাখার ক্ষমতা বিশ্লেষণ করবেন, এবং ব্যথার প্রতিক্রিয়ায় মাদক কী ধরণের প্রভাব ফেলছে তা নিরীক্ষা করবেন।

গবেষকদের এই দলটি চেষ্টা করছে অক্সিটোসিনের বহুমুখী প্রয়োগ তুলে ধরতে। যা কিনা “লাভ হরমোন” (Love hormone) ওরফে অক্সিটোসিনের প্রভাব সম্পর্কে বিশ্বের নানা শাখায় কর্মরত বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

বিজ্ঞানীরা আশা করছে ডিমেনশিয়া এবং মাদকাসক্তি প্রতিরোধে অক্সিটোসিন হরমোনের প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত