‘ক্যাপ্টেন নিকোলাস’ ও ‘গ্যাজ জিএমএস’ ট্যাংকার দুটি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর জলসীমার কুতুবদিয়ার গভীর সাগরে নোঙর করে ৬-৭ অক্টোবর। এলপিজি এনেছে সিলিন্ডার গ্যাস বিপণনে জড়িত দেশের বেসরকারি বেশ কয়েকটি শিল্পগ্রুপ। দুটি জাহাজ থেকেই এলপিজি স্থানান্তরও শুরু হয়েছে।
তবে ‘ক্যাপ্টেন নিকোলাস’ জাহাজ থেকে এলপিজি খালাস করতে গিয়ে গত রবিবার আগুন লেগে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে প্রাণহানি না হলেও প্রচুর এলপিজি জ্বলে গেছে।
‘ক্যাপ্টেন নিকোলাস’ জাহাজে আগুন লাগার পর ঘটনাটি ‘নাশকতা, নাকি নিরাপত্তাজনিত অবহেলা’ তা নিয়ে আলোচনার মধ্যে সামনে এসেছে আসলেই ওই এলপিজি ইরান থেকে আনা হয়েছে কি না।
কারণ, এলপিজি অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলোচিত ব্যবসায়ী আজম জে চৌধুরী গত ৬ অক্টোবরই দুটি জাহাজেই ইরান থেকে এলপিজি আমদানির অভিযোগ করেন।
বাংলাদেশের এলপিজি খাতের অন্যতম অপারেটর ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, ওমেরা সিলিন্ডার লিমিটেড ও ওমেরা ফুয়েল লিমিটেডের এই পরিচালক বলছেন, ‘আর্ন্তজাতিক নিষেধাজ্ঞা’ লঙ্ঘন করে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে অবৈধভাবে এসব এলপিজি ইরান থেকে আমদানি করা হয়েছে। এই আমদানি দেশের এলপিজি সেক্টরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
এসব অভিযোগ এনে দুটি জাহাজই আটকের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস, বাংলাদেশ ব্যাংক ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
তবে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বসুন্ধরা, এস আলম, বেক্সিমকো, বিএমের মতো শীর্ষ গ্রুপগুলো ব্যবসায়িকভাবে চাপে পড়ায় আজম জে চৌধুরী এসব অভিযোগ করে ‘বাড়তি সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছেন’ বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বেসরকারি খাতের কোম্পানি ইস্টকোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরীর অভিযোগের পর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে নৌবাণিজ্য দপ্তর, কাস্টমস কর্মকর্তারা রয়েছেন। সেই কমিটি ৯ অক্টোবর কুতুবদিয়া গভীর সাগরে গিয়ে জাহাজ পরিদর্শন করে। কিন্তু অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায়নি কমিটি।
তার চার দিন পর গতকাল রবিবার ‘ক্যাপ্টেন নিকোলাস’ জাহাজে আগুন লাগার ঘটনা ঘটলো। এখন আগুন লাগার সঙ্গে ইরান থেকে এলপিজি আমদানির যোগসূত্র খুঁজছেন অনেকেই।
৪২ হাজার ৯২৫ টন এলপিজি নিয়ে গত ৭ অক্টোবর ‘ক্যাপ্টেন নিকোলাস’ জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর জলসীমার কুতুবদিয়া গভীর সাগরে নোঙর করে। জাহাজে এলপিজি আমদানি করেছে যৌথভাবে যমুনা গ্রুপ, বিএম এনার্জি, এনার্জি প্যাক, টিএমএস এবং ইউনিট্যাক্স গ্রুপ।
জাহাজটি থেকে এই এলপিজি স্থানান্তর করে নৌপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়ার জন্য ১৩টি লাইটার ট্যাংকার ভাড়া করা হয়। এর মধ্যে একটি লাইটার ট্যাংকার এলপিজি নিয়ে মোংলায় পৌঁছেছে। সেটি ছিল যমুনা গ্রুপের।
আরেকটি লাইটার ‘বিএলপিজি সোফিয়া’তে এলপিজি স্থানান্তরের সময় রবিবার জাহাজে আগুন লাগে। তখন সোফিয়াতে স্থানান্তর করা এলপিজি ছিল চট্টগ্রামভিত্তিক ইউনিট্যাক্স গ্রুপের।
এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল আহমদ চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের মেয়েজামাই। এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এসআইবিএলের চেয়ারম্যানও ছিলেন বেলাল আহমদ।
গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরপরই ব্যাংক খাতে জোরেশোরে আলোচনা শুরু হয় এস আলম গ্রুপ নিয়ে। জোরজবরদস্তি করে পর্ষদের দখল নেওয়া ইসলামী ব্যাংকসহ শরীয়াহভিত্তিক অন্য ব্যাংক থেকে এস আলমসহ এ গ্রুপের প্রতিনিধিদের সরানো হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে গিয়েছিলেন একবারই ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে। দুই কোটি ৯৯ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মামলাটি করেছিলেন ব্যবসায়ী আজম জে চৌধুরী। মামলায় প্রায় এগার মাস বন্দি ছিলেন শেখ হাসিনা।
মবিল যমুনা লুব্রিক্যান্ট (এমজেএল) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজম জে চৌধুরী বর্তমানে প্রাইম ব্যাংকের পরিচালক পদে আছেন। তার ছেলে তানজিল চৌধুরী ব্যাংকটির চেয়ারম্যান। কনসলিডেটেড টি অ্যান্ড ল্যান্ডস কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যানও আজম জে চৌধুরী।
আজম জে চৌধুরীর ইরান থেকে এলপিজি আনার অভিযোগের মধ্যেই ‘ক্যাপ্টেন নিকোলাস’ জাহাজের শিপিং এজেন্ট সী ওয়েভ মেরিন সার্ভিসেস প্রতিষ্ঠানটি বন্দর ও কাস্টমসে ঘোষণা দিয়েছে, সব এলপিজি বোঝাই করা হয়েছে ওমানের সোহার বন্দর থেকে। সেই অনুযায়ী কাস্টমস ছাড়পত্র দিয়েছে ও বন্দর লাইটার করার অনুমতি দিয়েছে।
সী ওয়েভ মেরিন সার্ভিসেসের উপদেষ্টা খায়রুল আলম সুজন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা বন্দর কাস্টমসে যে ডকুমেন্ট দিয়েছি সেটি যাচাই করেই খালাসের অনুমতি দিয়েছে। এর বাইরে যদি কেউ অভিযোগ দিয়ে থাকে সেটি কাস্টমস বন্দর যাচাই করে দেখুক। বাংলাদেশের শীর্ষ এলপিজি প্রস্তুতকারকরা এই এলপিজি আমদানি করেছে।
“এরমধ্যে বড় জাহাজ থেকে একটি লাইটার জাহাজে এলপিজি খালাস করে মোংলায় নেওয়া হয়েছে। আরেকটি জাহাজে খালাস চলাকালীন দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটল। আমার কাছে মনে হয় না এখানে নাশকতা ছিল। এরপর কেন দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটি জানতে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, কমিটিই নিরুপন করবে কেন সেটি ঘটল।”
ইরান থেকে এলপিজি আমদানির কারণেই এই আগুন লাগার দুর্ঘটনা কিনা- এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে আজম জে চৌধুরী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “অন্য দেশ থেকে আমরা যারা এলপিজি আমদানি করি তারা কমপ্লায়েন্স মেইনটেইন করি। ইরান থেকে আনলে সেটি করা হয় না। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যায়।
“একমাত্র এই কারণেই যে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটি বলব না। তবে এটা একটি কারণ হতে পারে। এছাড়া ক্যাপ্টেন নিকোলাস জাহাজটি অনেক পুরনো। এই ধরনের পুরনো জাহাজে এলপিজির মতো সেনসেটিভ পণ্য পরিবহন দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।”
আজম জে চৌধুরীর অভিযোগ, বন্দর-কাস্টমসে ওমান থেকে আসার ডকুমেন্ট সাবমিট করা হলেও বাস্তবে সেই এলপিজি আমদানি হয়েছে ইরান থেকে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে এই এলপিজি অবৈধভাবে আমদানি করা হয়েছে।
তার মতে, ইরানের এই এলপিজি ইরাকের একটি বন্দর থেকে বোঝাই করা হয়েছে। আর ডকুমেন্ট বানানো হয়েছে। কাস্টমস বন্দর ভাসা ভাসা তদন্ত না করে একটু গভীরে গেলেই সেটি প্রমাণ হবে।
এই ধরনের অভিযোগ আসলে কীভাবে তদন্ত করে বন্দর শিপিং সংশ্লিষ্টরা- সে বিষয়ে জানতে চাইলে নৌবাণিজ্য অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে তদন্ত কমিটি সরাসরি জাহাজে গিয়ে লগবুক যাচাই করে।
“সেখানে সর্বশেষ কোন বন্দর থেকে পণ্য বোঝাই হয়েছে তার উল্লেখ থাকে। আর অনলাইনে শিপ ট্রাকিং করে লগবুকের তথ্য নিশ্চিত করা হয়। সেগুলোর মধ্যে ভিন্নতা থাকলে পুনরায় নিশ্চিত হতে কার্গোর বিল অব লোডিং যাচাই করে দেখি।”
তদন্ত কমিটি জাহাজ ঘুরে এলেও প্রতিবেদন দেয়নি।
জানতে চাইলে কমিটির সদস্য চট্টগ্রাম বন্দরের সহকারী হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন মো. মোস্তাসীম বিল্লাহ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা একবার সরেজমিনে ঘুরে এসেছি। সেই ফাইন্ডিংস নিয়ে আমরা বসব। প্রয়োজনে আরও কথা বলে নিশ্চিত হয়েই প্রতিবেদন জমা দিব। কবে নাগাদ জমা দিতে পারব- এখনই বলা যাচ্ছে না।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির আরেক সদস্য বলেন, “আজম জে চৌধুরী যে অভিযোগ দিয়েছেন তার সত্যতা এখনও আমরা পাইনি। অনলাইন, অফলাইন এমনকি কার্গো তথ্য যাচাই করে দেখেছি সেখানে ডকুমেন্টেশনে কোনও অসত্য তথ্য পাইনি। এখন ধরেন ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কারও স্ক্রিন শট দিয়ে তো অফিসিয়ালি প্রমাণ করা যায় না।”
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কোনও জাহাজের বিরুদ্ধে আর্ন্তজাতিক নিষেধাজ্ঞার অভিযোগ থাকলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়। ‘ক্যাপ্টেন নিকোলাস’ ও ‘গ্যাজ জিএমএস’ জাহাজ দুটির ক্ষেত্রে সেই ধরনের কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।
জানতে চাইলে নৌবাণিজ্য অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেন, “আমার জানামতে এই দুটি জাহাজের ক্ষেত্রে সেই ধরনের কোনও নিষেধাজ্ঞা বা চিঠি আমাদের কাছে নেই। ফলে চিঠি না থাকলে কিংবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছাড়া আমরা কোনও জাহাজ আটকাই না।”
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “২০২৩ সালে রাশিয়ার পণ্য পরিবহনকারী ৬৪টি জাহাজের নিষেধাজ্ঞার তথ্য সম্বলিত নির্দেশনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এসেছিল। তখন আমরা সেই জাহাজ যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সে নির্দেশনা কার্যকর করেছিলাম।”
আজম জে চৌধুরী বলছেন, আর্ন্তজাতিক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইরান থেকে এই ধরনের এলপিজি আমদানি অবৈধ আইন বহির্ভূত। এতে বাংলাদেশের এলপিজি সেক্টরের ভাবর্মূতি ক্ষতির মুখে পড়লে দায়দায়িত্ব বাংলাদেশ এলপিজি অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন বহন করবে না।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইরান থেকে পণ্য আমদানির যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সেটি আর্ন্তজাতিক নিষেধাজ্ঞা নয়; জাতিসংঘের কোনও নিষেধাজ্ঞা নয়। যুক্তরাষ্ট্র নিজের স্বার্থে একাই সেই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা হলেও সেটি মানতে বাধ্য তাদের সদস্য সব দেশ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা যেকোনও দেশ চাইলে মানতে পারে, আবার নাও মানতে পারে। সেটা একান্তই সেই দেশের এখতিয়ার।
আজম জে চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে আর্ন্তজাতিক নিষেধাজ্ঞা হিসেবে অভিহিত করে জাহাজ থেকে এলপিজি খালাস বন্ধ, জাহাজ আটক করে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, “মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আমাদের কাছে অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এলপিজি আমদানিতে লেনদেন হয় মার্কিন ডলারে। ফলে লেনদেনে যদি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেয়, সেই ঝুঁকি আমরা নিব কি না। আর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসলে দেশের পুরো এলপিজি সেক্টরই বিপদে পড়বে।”
‘বিজনেস জেলাসি’র কারণে ইরান থেকে আমদানির অভিযোগ দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে আলোচিত এই ব্যবসায়ী বলেন, “জেলাসি কেন হবে? আমরা তো অনেক সময় এলপিজি এনে একে অন্যকে ধার দেই। তবে এটা ঠিক ইরান থেকে এত কমদামে আনার কারণে আমরা যারা কমপ্লায়েন্স মেইনটেইন করে আনছি তারা অসম প্রতিযোগিতায় পড়েছি। আর ইরান থেকে কম দামে আনলে কম দামে কেনার সুফল তো ভোক্তারা পাচ্ছেন না।”
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইউনিট্যাক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল আহমদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর এস আলম পরিবারের অন্য সদস্যদের মতো তাকেও দেশে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে ইউনিটেক্স এলপিজি লিমিটেডের হেড অফ সাপ্লাই চেইন রানা নন্দী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “দেশের এই সময়ে কোনও ব্যবসায়ী ইরান থেকে পণ্য আনার ঝুঁকি নিতে যাবেন না। আর আমাদের কার্গো বোঝাই হয়েছে ওমানের বন্দর থেকে। সবগুলো ডকুমেন্ট বৈধ দেশ থেকে ভেরিফাই হয়েছে, যেটা বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন করেছে। সুতরাং এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলার কোনও সুযোগ নেই।”
‘বিজনেস জেলাসি’ বা প্রতিযোগিতার কারণে এমনটি হয়ে থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিএম এনার্জি লিমিটেডের এক কর্মকর্তা বলছেন, মূলত পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শীর্ষ এলপি গ্যাস ব্যবসায়ীরা যেমন বসুন্ধরা, এস আলম, বেক্সিমকো, বিএমের মতো শীর্ষ গ্রুপ গুলো ব্যবসায়িকভাবে চাপে পড়েছে। এই সময়ে আজম জে চৌধুরী এসব অভিযোগ করে বাড়তি সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, “সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এলপিজি অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি যে অভিযোগ দিয়েছেন, সেটা সংগঠনের সদস্যদের কার সঙ্গে কথা বলেছেন? সেটা একটা বড় প্রশ্ন।”
বর্তমানে দেশে এলপিজির বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৪ লাখ টন। এই চাহিদার মাত্র দুই শতাংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়; বাকি ৯৮ শতাংশ আমদানি করতে হয়। ২৮টি কম্পানি এই এলপিজি আমদানি করে দেশে বিপণন করছে।
আগে শুধু সিলিন্ডার গ্যাস দিয়েই এলপিজি ব্যবহার হতো। পরে দেশজুড়ে স্থাপিত এলপিজি স্টেশনের মাধ্যমে গাড়িতে সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে এই এলপিজি। এর ফলে চাহিদা অনেক বেড়েছে। তাছাড়া বাসাবাড়িতে নতুন করে গ্যাস সংযোগ না দেওয়া এবং সিএনজি স্টেশনগুলো ২৪ ঘণ্টা খোলা না থাকার ঘাটতি পূরণে এলপিজির ব্যবহার বেড়েছে।
২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে এলপিজি ব্যবহৃত হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৭৪ মেট্রিক টন। এখন সেটি ১৪ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার (জাইকা) এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে ৩০ লাখ টনে উন্নীত হবে। ২০৪১ সালে চাহিদা হবে ৬০ লাখ টন।