অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা একটি মামলায় খালাস পেয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। এতে ওই মামলায় তার ৮ বছরের সাজাও বাতিল হয়ে গেছে।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা ওই মামলার দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের রায়ে বাবর খালাস পেলেন।
বুধবার বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার একক হাই কোর্ট বেঞ্চে তার আপিলের শুনানি শেষে এ রায় দেওয়া হয়।
বাবরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির।
২০২১ সালের ১২ অক্টোবর অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর তৎকালীন বিচারক মো. শহিদুল ইসলামের আদালত বাবরকে ৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬(২) ধারায় ৩ বছর ও ২৭(১) ধারায় ৫ বছরের তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও তিন মাস কারাভোগের আদেশ দেওয়া হয়।
পরে এই মামলা থেকে খালাস ও সাজা বাতিল চেয়ে বাবরের পক্ষে হাই কোর্টে আপিল করা হয়। বুধবার আপিলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে মামলা থেকে খালাস ও সাজা বাতিল করেছে উচ্চ আদালত।
এদিনের রায়ের বিষয়ে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “বিচারিক আদালতের রায়ে লুৎফুজ্জামান বাবরের ৮ বছরের কারাদণ্ড ও তার ব্যাংক হিসাবগুলো জব্দ করা হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে আপিল করা হয়, আপিলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে তাকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
“এ মামলায় উনার (বাবর) বিরুদ্ধে যেসকল অভিযোগের কথা বলা হয়েছে, সেই সময় তিনি কারাগারে ছিলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, উনি কারাগারে থাকা অবস্থায় তার একাউন্টে টাকা জমা দিল কে? সাক্ষ্য প্রমাণে এসেছে, দুর্নীতি দমনে টাস্কফোর্সের এক সদস্য মেজর জসিম তার একাউন্টে ১০ লাখ ডলার জমা করেন। এছাড়া বাড়ি বানানোর জন্য ৮ লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেন। সেই টাকা সম্পদ বিবরণীতে দেখানো হয়নি, এটা গোপন করেছেন বলে মামলায় বলা হয়।”
“এ দুই বিষয়ে ৮ বছর কারাদণ্ড দিয়েছিল। সেটা অযৌক্তি। এছাড়া আমরা ব্যাংকে জমা হওয়া ওই টাকার দাবি কখনও করিনি” যোগ করেন বাবরের আইনজীবী।
২০০৭ সালের ২৮ মে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যৌথবাহিনীর হাতে আটক হন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। এরপর অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ১৩ জানুয়ারি রমনা থানায় মামলা করে দুদক।
মামলায় বাবরের বিরুদ্ধে ৭ কোটি ৫ লাখ ৯১ হাজার ৮৯৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। তিনি দুদকে ৬ কোটি ৭৭ লাখ ৩১ হাজার ৩১২ টাকার সম্পদের হিসাব দাখিল করেছিলেন। তার অবৈধ সম্পদের মধ্যে প্রাইম ব্যাংক এবং এইচএসবিসি ব্যাংকে দুইটি এফডিআরে ৬ কোটি ৭৯ লাখ ৪৯ হাজার ২১৮ টাকা এবং বাড়ি নির্মাণ বাবদ ২৬ লাখ ৪২ হাজার ৬৭৮ টাকা গোপনের কথা উল্লেখ করা হয়।
তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৬ জুলাই দুদক বাবরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। তাকে ২০১৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় এবং ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।