Beta
শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫

সামষ্টিক অর্থনীতি ও মূল্যস্ফীতি অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা উচিত : রেহমান সোবহান

শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক সিম্পোজিয়ামে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান।
শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক সিম্পোজিয়ামে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান।
[publishpress_authors_box]

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ঠিক রাখাই অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান।

তার মতে, অর্থনৈতিক সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটির সুপারিশ পরবর্তী নির্বাচিত সরকারকেই বাস্তবায়ন করতে হবে।

শনিবার ‘শ্বেতপত্র এবং অতঃপর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সংস্কার ও জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক সিম্পোজিয়ামের সমাপনী সেশনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মতামত তুলে ধরেন, যিনি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান।

ঢাকার শেরে বাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সিম্পোজিয়াম আয়োজিত হয়।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্বপালন করা রেহমান সোবহান বলেন, “সো কল্‌ড রিফর্ম (কথিত সংস্কার) কমিটিগুলো দেশের অর্থনীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সংস্কারের জন্য যেসব সুপারিশ উপস্থাপন করেছে, তা পরবর্তী নির্বাচিত সরকারকেই বাস্তবায়ন করতে হবে।

“কমিটিগুলো যেসব সুপারিশ করেছে, তা বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। এতো সময় অন্তর্বর্তী সরকার পাবে না। তাই এসব সংস্কার কমিটির সুপারিশ জনগণের সমর্থন নিয়ে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারকেই বাস্তবায়ন করতে হবে।”

অন্তর্বর্তী সরকার কেন সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারবে না, তার ব্যখ্যাও তুলে ধরেন এই অর্থনীতিবিদ।

তিনি বলেন, “পাচার হওয়ার অর্থ ফিরিয়ে আনা বা ঋণ খেলাপির কাছ থেকে টাকা আদায় করা- দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। এই বিপুল সময় অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকা সম্ভব নয়। তাই পরবর্তী সরকারকেই এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে রেহমান সোবহানের এই বক্তব্যের সময় দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য জানতে চান, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকার তার সময়টা সবচেয়ে ভালোভাবে কীভাবে ব্যবহার করতে পারে?

তখন রেহমান সোবহান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার (অর্থনীতি নিয়ে) সমস্যার সবচেয়ে ভালো সমাধান কীভাবে করা যায়, তার একটা কার্যকর উপায় খুঁজে বের করবে।

“এরপর নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসলে তাদের স্বার্থেই এটা বাস্তবায়ন করবে।”

এরপর রেহমান সোবহানের বক্তব্যের মাঝে ড. দেবপ্রিয় আবারও জানতে চান তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার কী হবে?

তখন রেহমান সোবহান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে অগ্রাধিকার হবে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও শৃংখলা রক্ষায় সর্বোত্তম ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষায় ও সমস্যা সমাধানে বর্তমান সরকারকে কার্যকর কোনও ব্যবস্থা নিতে আমি দেখতে পাচ্ছি না।

“অর্থনীতির শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে বিশেষ করে ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় কিছু কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারত।”

অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার হিসেবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ শক্তিশালী রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণই অগ্রাধিকার হতে পারে বলে মত তুলে ধরেন তিনি।

অশিতীপর এই অর্থনীতিবিদ বিগত সরকারের আমলে অর্থপাচারসহ সামষ্টিক অর্থনীতিতে চলমান নানা অনিয়ম নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, “এই দেশে টাকা পাচারের এই সংস্কৃতি পাকিস্তান আমল থেকেই শুরু। তবে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে প্রথমে ঋণ খেলাপিদের নির্বাচন করার সুযোগ পাওয়া শুরু হয়।

“তখনকার অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান আমাদের কথা দিয়েছিলেন যে ঋণ খেলাপিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি খেলাপিদের ৫ শতাংশ আদায়ের শর্তে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেন। এরপর এরশাদ, খালেদা জিয়া এবং বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এটা সবচেয়ে খারাপ অবস্থার সৃষ্টি করেছে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কার্যকর না রাখার কারণেই বাংলাদেশে ঋণ খেলাপি তৈরি হয় এবং এই সম্পদ বিদেশে পাচার হয় বলে উল্লেখ করেন রেহমান সোবহান।

তিনি বলেন, “কেন্দ্রেীয় ব্যাংক একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্বেও (গত সরকারের আমলে) রাজনীতি নির্ভরতা বিশেষ করে সরকার প্রধানের কাছে তার ক্ষমতা বিলিয়ে দেয়। এর ফলে পুরো ব্যাংকিং খাতটি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ হতো রাজনৈতিক ব্যবস্থায়।

“এভাবেই ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থায় অলিগার্ক (রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ) ব্যবস্থা তৈরি হয়। এরপর অর্থপাচার আর নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়নি।”

বিগত সরকারের আমলে অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার আরেকটি বড় কারণ হিসেবে বছরে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের মতো হুন্ডি ব্যবসা হওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

তার পরামর্শ, সহজ বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হবে।  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত