দেশের সবচেয়ে দরিদ্র জেলা মাদারীপুর। জেলাটির অর্ধেকের বেশি মানুষের বাস দারিদ্র্যসীমার নিচে। উপজেলার হিসাবেও সবচেয়ে বেশি দরিদ্রের বসবাস জেলাটির ডাসার উপজেলায়। অন্যদিকে জেলাভিত্তিক হিসাবে সবচেয়ে কম দরিদ্র পাওয়া গেছে নোয়াখালীতে।
দেশের সবচেয়ে ধনী মানুষের বসবাস ঢাকার পল্টনে। এরপর গুলশান, বনানী কিংবা ধানমন্ডি। বিভাগের হিসাবে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র বরিশাল বিভাগে এবং কম দরিদ্র চট্টগ্রাম বিভাগে পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্র ২০২২’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ঢাকার শেরে বাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পরিসংরখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) উপপরিচালক ও প্রভার্টি ম্যাপ প্রকল্পের ফোকাল পয়েন্ট অফিসার মহিউদ্দিন আহমেদ উপস্থাপন করেন।
মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০২২ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপ এবং জনশুমারি ২০২২ এর তথ্য উপাত্ত সেকেন্ডারি ডাটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের গাইডলাইন অনুযায়ী বিবিএস এই প্রতিবেদন তৈরি করে। পাশাপাশি এই প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক খাদ্য কর্মসূচির (ডাব্লিউএফপি) সহযোগিতাও এতে রয়েছে।
তিনি বলেন, মাদারীপুর জেলার দারিদ্র্যের হার ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে ডাসার উপজেলার দারিদ্র্যের হার ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া মাদারীপুর জেলার উপজেলাগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন দারিদ্র্য ৫০ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে মহিউদ্দিন বলেন, দেশের গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্য কমেছে, কিন্তু শহর এলাকার দারিদ্র্য বেড়েছে। ২০২২ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপে গ্রাম এলাকার দারিদ্র্য ছিল ২০ দশমিক ৫; দারিদ্র্য মানচিত্রে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৩ শতাংশ। খানা জরিপে শহর এলাকায় দারিদ্র্য ছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ; দারিদ্র্য মানচিত্রে তা কমে হয়েছে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের সবচেয়ে ধনী মানুষের বসবাস ঢাকার পল্টনে; যেখানে মাত্র ১ শতাংশের বাস দারিদ্র্যসীমার নিচে। অন্যদিকে, ঢাকায় দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি কামরাঙ্গীরচরে, যেখানে বসবাসকারী ১৯.১ শতাংশ মানুষ দরিদ্র।
এছাড়া ভাষানটেকে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ ও মিরপুরে ১২ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। এমনকি ঢাকার ধনী এলাকা হিসেবে পরিচিত বনানীতে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষের অবস্থান দারিদ্র্যসীমার নিচে। এছাড়া দারুস সালামে ১১, যাত্রাবাড়ীতে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ ও আদাবরে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ দরিদ্র মানুষ বসবাস করে।
ঢাকার নিউমার্কেটে এক দশমিক ৭ শতাংশ দরিদ্র মানুষ বসবাস করে। এছাড়া রমনায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ, মতিঝিলে ৩ দশমিক ৬, কোতোয়ালীতে ২ দশমিক ৯ শতাংশ, গুলশানে ৩ দশমিক ২ শতাংশ, গেণ্ডারিয়ায় ২ দশমিক ৪, ধানমন্ডিতে এক দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।
২০১৭ সালের ক্রয়ক্ষমতা সমতারভিত্তিতে নির্ধারিত আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমা হলো দৈনিক আয় ২ দশমিক ১৫ ডলার। অর্থাৎ দৈনিক ২ দশমিক ১৫ ডলারের কম আয় করা মানুষ দরিদ্র বলে গণ্য হবে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৩ শতাংশ। শহর এলাকায় এই হার ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে সবচেয়ে বেশি গরিব মানুষ বাস করে বরিশাল বিভাগে। বিভাগটিতে দরিদ্র মানুষের হার ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে সবচেয়ে কম ১৫ দশমিক ২ শতাংশ দরিদ্র মানুষের বাস চট্টগ্রাম বিভাগে।
বরিশালে গ্রামে বসবাসকারীদের ২৮ দশমিক ১ শতাংশ দরিদ্র ও শহরে বসবাসকারীদের ২১ দশমিক ৭ শতাংশ দরিদ্র। চট্টগ্রামে এই হার গ্রামে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ এবং শহরে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ।
বরিশালের পরই বেশি দরিদ্র মানুষের বসবাস রংপুর বিভাগে, বিভাগটিতে ২৫ শতাংশ দরিদ্র মানুষের বসবাস। ময়মনসিংহ বিভাগে ২২ দশমিক ৬ শতাংশ, ঢাকায় দারিদ্র্যের ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ, খুলনায় ১৭ দশমিক ১ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ এবং সিলেটে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ দরিদ্র মানুষ বসবাস করে।
জেলার হিসেবে মাদারীপুরের পরের অবস্থানে রয়েছে নরসিংদী জেলা। এ জেলার ৪৩ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। এছাড়া পিরোজপুরে ৩৭ দশমিক ৯ শতাংশ, কিশোরগঞ্জে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ, নেত্রকোণায় ৩৩ দশমিক ৯ , ঝালকাটিতে ৩৩ দশমিক ৫ এবং পঞ্চগড়ে ৩৩ দশমিক ২ মানুষ দরিদ্র।
সবচেয়ে কম দরিদ্র মানুষের বসবাস নোয়াখালী জেলায়। এ জেলাটি মাত্র ৬ দশমিক ১ শতাংশ দরিদ্র মানুষের বসবাস করে। এরপর রয়েছে মেহেরপুর ৯ দশমিক ৮ শতাংশ, খুলনা ১০ দশমিক ২ এবং সিরাজগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় ১০ দশমিক ৯ শতাংশ দরিদ্র মানুষ বসবাস করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের মো. মাহবুব হোসেন। বিশেষ অতিথি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির উপপ্রধান সিমোন লসন পার্চমেন্ট।
বিবিএসের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সেখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা, জাতিসংঘ ও উন্নয়ন সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী, বিবিএস ও এসআইডির কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।