Beta
বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫

শিবিরের প্রকাশনায় লেখা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে মাহফুজের পোস্ট

‘মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে গেলে পরাজিত হবেন’
মেহেরপুরে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা উৎসবে ২২ জানুয়ারি দেখা যায় ছাত্র সংবাদের ডিসেম্বর, ২০২৪ সংখ্যাটি।
মেহেরপুরে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা উৎসবে ২২ জানুয়ারি দেখা যায় ছাত্র সংবাদের ডিসেম্বর, ২০২৪ সংখ্যাটি।
[publishpress_authors_box]

ইসলামী ছাত্রশিবিরের মুখপত্র ‘ছাত্র সংবাদ’ এর প্রকাশিত একটি লেখায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের পর যখন তা নিয়ে চলছে সমালোচনা; তখন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা মানে দেশের সঙ্গে গাদ্দারি। মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার যারা করবে, তারা পরাজিত হতে বাধ্য।

মঙ্গলবার বিকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পাতায় দেওয়া এক পোস্টে একথা বলেন আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হয়ে আসা মাহফুজ।

তার আগে থেকে ফেইসবুকে তুমুল আলোচনা চলছে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের মুখপত্র মাসিক ছাত্র সংবাদের ডিসেম্বর সংখ্যার একটি লেখা নিয়ে।

ছাত্র সংবাদে প্রকাশিত লেখার এই অংশের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়েছে, তা নিয়ে হচ্ছে সমালোচনা।

ওই লেখায় একাত্তর নিয়ে বলা হয়েছে- “সে সময়ের অনেক মুসলিম না বুঝে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল, এটা তাদের ব্যর্থতা ও অদূরদর্শিতা ছিল। আল্লাহ তাদের ক্ষমা করুন।”

একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল জামায়াত এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ।

স্বাধীনতার ছয় বছর পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে জামায়াত সক্রিয় হওয়ার পর ছাত্র সংঘ নামটি বাদ দিয়ে তাদের ছাত্র সংগঠন হিসাবে গড়ে তোলে ছাত্রশিবিরকে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে পতনের কয়েকদিন আগে আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াত ও শিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

কী লিখেছেন মাহফুজ

মাহফুজ আলম ‘মুক্তিযুদ্ধ মানে বাংলাদেশ/ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান মানে বাংলাদেশ’ শিরোনামে লিখেছেন তার সাড়ে তিনশ শব্দের ফেইসবুক পোস্ট।

কারও নাম উল্লেখ না করে তার লেখায় বলা হয়, “মুক্তিযুদ্ধের পর কী হয়েছে, তা নিয়ে সমালোচনা করুন। ইতিহাস পর্যালোচনা করুন। কোনও সমস্যা নেই। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কী কী ঘটেছে, তা নিয়েও তর্ক উঠতে পারে। কিন্তু, সেসবই হবে মুক্তিযুদ্ধকে মেনে নিয়ে।

“এ দেশের মানুষের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও বাংলাদেশের জন্মকে স্বীকার করেই এদেশে রাজনীতি করতে হবে। এর কোনও ব্যত্যয় হলে আপনাদের আমরা বাংলাদেশের পক্ষের, গণ অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি হিসাবে মেনে নেব না।”

উদাহরণ হিসাবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মাহফুজ লিখেছেন, “যেমন, শেখ মুজিবের ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠা নিয়ে আমরা বলব। উনি ফ্যাসিস্ট ছিলেন। কিন্তু, বাংলাদেশের জন্মে অনেক জাতীয় নেতৃত্বের মতন উনার অবদান অনস্বীকার্য। তাই, আমরা ‘৭২ পূর্ব শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রাপ্য গুরুত্ব দেব।

“মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ ফ্যাসিস্ট হতে পারেন, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ছিল আপামর জনগণের লড়াই। মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশের ফ্যাসিস্ট, ইসলামফোবিক ও খুনী হয়ে ওঠার কারণে আপনি খোদ মুক্তিযুদ্ধ বা সকল মুক্তিযোদ্ধাদের অস্বীকার কিংবা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেন না। এটা রাষ্ট্রের ভিত্তির সাথে গাদ্দারি!”

জুলাই অভ্যুত্থানকে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা হিসাবে দেখিয়ে মাহফুজ লিখেছেন, “বাংলাদেশপন্থীদের অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধপন্থী হতে হবে। তবে এটাও সত্য যে, মুক্তিযুদ্ধ করা অনেকেই ফ্যাসিস্ট ও তাবেদার হয়ে উঠেছিলেন। আজ তারা ছাত্র-জনতার কাছে পরাজিত হয়েছেন।

“মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা যাবেন, তারা ও মজলুম বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে অতীতে পরাজিত হয়েছেন, সামনেও পরাজিত হতে বাধ্য।”

ছাত্র সংবাদ কী বলছে

সমালোচনার শুরুর পর ছাত্র সংবাদের ওয়েবসাইটে তাদের ডিসেম্বর ২০২৪ সংখ্যাটি আর পাওয়া যাচ্ছে না, যেখানে আহমেদ আফগানীর লেখা ‘যুগে যুগে স্বৈরাচার ও তাদের করুণ পরিণতি’ শীর্ষক বিতর্কিত লেখাটিও নেই। তবে এই লেখকের পুরনো অন্য লেখা পাওয়া যাচ্ছে।

ছাত্রশিবির এখন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘প্রকাশনা উৎসব’ করছে, সেখানে তাদের স্টলে অন্য প্রকাশনাগুলোর সঙ্গে ছাত্র সংবাদও থাকছে। ছাত্র সংবাদের জানুয়ারি, ২০২৫ সংখ্যার পাশাপাশি ডিসেম্বর, ২০২৪ সংখ্যাটি ক’দিন আগেও দেখা গেছে তাদের স্টলে।

আহমেদ আফগানীর লেখা নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষাপটে ছাত্র সংবাদের পক্ষ থেকে তাদের ফেইসবুক পাতায় এক পোস্টে বলা হয়েছে, “এই মন্তব্যটি একান্তই লেখকের ব্যক্তিগত মতামত। আমাদের সম্পাদকীয় নীতি অনুযায়ী আমরা প্রত্যেকের যেকোনো ইতিবাচক মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।”

সেই সঙ্গে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে সেই পোস্টে বলা হয়, “ছাত্র সংবাদ মনে করে— একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন, সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা ও অধিকার আদায়ের সংগ্রাম ছিল, ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়। মুক্তিযুদ্ধে ইসলাম কোনও পক্ষ ছিল না। বরং তৎকালীন শাসক শ্রেণী মুক্তিযুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইসলামকে টেনে তাদের অপকর্মকে জায়েজ করতে চেয়েছিল, সেই সাথে আমাদের দেশেও একটি পক্ষ মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে বারবার ইসলামকে টেনে জাতিকে বিভক্ত করার হীন প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।”

এদিকে ওই লেখার লেখক আহমদ আফগানী এক ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, “এই লেখার দায় সম্পূর্ণ আমার এবং আমি নিজে মনে করি লেখাটি সঠিক।”

ব্যক্তিগত গবেষণা কাজের জন্য দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দাবি করে তিনি আরও বলেন, “তাদের কাছ থেকে এই মন্তব্য আমি পেয়েছি। অতএব আমার মন্তব্যের জন্য বিব্রত নই।”

আহমদ আফগানী তার ব্লগ ‘আফগানীর খেরোখাতা’য় নিজের পরিচয় তুলে ধরার সময় ছাত্রশিবির ও জামায়াতে যুক্ত থাকার তথ্যও দিয়েছেন।

২০০০ সালে নোয়াখালী জিলা স্কুলে পড়ার সময় তিনি ছাত্রশিবিরে যুক্ত হয়েছিলেন। ২০০৭ সালে নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর সংগঠনটির পূর্ণ সদস্য হন।

চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়া আফগানী ২০১৮ সালে জামায়াতে যোগ দেন। নিজেকে জামায়াতের পূর্ণ সদস্য বলছেন তিনি।

আফগানী ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, তিনি কোথাও লেখা পাঠানোর সময় শর্ত দেন যে তার লেখার কোথাও পরিবর্তন করা যাবে না। সেই কারণে ‘ছাত্র সংবাদ’ সম্পাদকরা তার লেখায় কাঁচি চালাতে পারেনি।

“আমার স্ট্যান্ড ও ছাত্র সংবাদের স্ট্যান্ড একই না হতে পারে। তবে আমার লেখা ও মন্তব্যের দায় আমার। অন্য কারো নয়।”

সংগঠনের মুখপত্র ‘ছাত্র সংবাদ’র সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি হিসাবে রয়েছেন ছাত্রশিবিরের সদ্য সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম। ছাত্রশিবিরের বর্তমান সভাপতি জাহিদুল ইসলাম সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।

ছাত্র সংবাদ প্রকাশিত হয় ঢাকার পুরানা পল্টনের ইসলামী ছাত্রশিবিরের কার্যালয় থেকে; যোগাযোগের ঠিকানাও একই।

সংগঠনের মুখপত্রে প্রকাশিত লেখা নিয়ে সমালোচনা চললেও এনিয়ে ছাত্রশিবির এখনও আনুষ্ঠানিক কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। মূল দল জামায়াতও এবিষয়ে কিছু বলেনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত