Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর : সাড়ে চার বছরে বাস্তবায়ন শূন্য

SS-Matarbari-deep-seaport-project-060924
[publishpress_authors_box]

আওয়ামী লীগ সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর একটি কক্সবাজারের ‘মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন’ প্রকল্প। তবে সেটি অনুমোদন দেওয়ার সাড়ে চার বছরেও কাজ শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এমনকী প্রকল্পটির জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ এখনও শেষ হয়নি। এ পর্যন্ত প্রকল্পটির বাস্তব ভৌত অগ্রগতি শূন্য।

প্রায় ছয় বছর মেয়াদি এই প্রকল্পটির বাস্তবায়নের সময় বাকি আছে মাত্র দুই বছর তিন মাস। এরমধ্যে প্রকল্পটি কবে শুরু হবে, আর কবে শেষ হবে—তার কিছুই বলতে পারছে না উদ্যোগী কর্তৃপক্ষ নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়।

প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটি ২০২০ সালের ১০ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটিতে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা) প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার অর্থায়ন করছে।

দেশে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে জাইকা ২৩টি চলমান প্রকল্পে মোট ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে।

প্রকল্পটির বাস্তবায়নের পর ২০২৬ সালে ৬ থেকে ১১ লাখ এবং ২০৪১ সালে সর্বোচ্চ ৪২ লাখ কন্টেইনার ডেলিভারির সক্ষমতা অর্জন করবে। এই বন্দর ৮,২০০ কন্টেইনারবাহী জাহাজ ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা অর্জন করবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের ১৪.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কৃত্রিম নৌচলাচল চ্যানেলের উদ্বোধন করেন। সেদিন বলা হয়েছিল, এই বন্দর দেশের অর্থনীতিতে ২ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার অবদান রেখে অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তী সরকার মনে করছে, আগের সরকার দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিশৃংখলার সৃষ্টি করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে নতুন সরকারের পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের জন্য মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে, যেখানে এ প্রকল্পের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।

‘মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন’ প্রকল্পটি ‘বন্দর উন্নয়ন’ এবং ‘সড়ক ও জনপথ’—এই দুই ভাগে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি ভূমি অধিগ্রহণ এবং জনবল ঘাটতির চ্যালেঞ্জে পড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে প্রকল্পটির দুই পরিচালক মীর জাহিদ হাসান ও আকবর হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে দুইদিন ধরে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া মেলেনি। 

এরপর নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা উইংয়ের যুগ্ম সচিব মো. গোলাম রাব্বীর যোগাযোগ করা হলে তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “প্রকল্পটির এখনও টেন্ডার আহ্বান করা সম্ভব হয়নি। এখনও প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জমিও অধিগ্রহণ করতে পারেনি। তবে জমি অধিগ্রহণ শেষ  পর্যায়ে রয়েছে।

“একইভাবে বন্দর অবকাঠামো উন্নয়ন অংশের কাজও শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।”

কেন প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি—জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এই প্রকল্পের মূল অর্থায়ন করছে জাইকা। এই রকম বড় প্রকল্পের নকশা, পদ্ধতি টেন্ডারিং প্রক্রিয়াসহ প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করতে চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে হয়। এই অনুমোদন প্রক্রিয়ায় জাইকা অনেক বেশি দেরি করছে।  

“মূলত এই কারণেই প্রকল্পটি দেরি হচ্ছে।”  

তিনি বলেন, “তবে এর আগে প্রকল্প শুরুর বছর কোভিড-১৯ এর অভিঘাতে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখান থেকে বের হতে হতে আবার প্রকল্প প্রস্তাবনার (ডিপিপি) ব্যয় সংশোধনী করতে হয়েছে। এখনও সেই সংশোধনীর দাপ্তরিক কাজ শেষ হয়নি।

“এখন ডিপিপি ফাইনাল না হলে টেন্ডার প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না। এই রকম অনেক কারণে প্রকল্পটির কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।”

প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রকল্পটি দুটি অংশে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। একটি অংশ হচ্ছে- বন্দরের উন্নয়ন। প্রায় ৮ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে বন্দর উন্নয়ন অংশ। আর ৮ হাজার ৮৩২ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সড়ক ও জনপথ অংশ।

মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন অংশের প্রধান কাজ  

প্রকল্পটির অগ্রগতির হিসাবে দেখা যায়, প্রকল্পের এই অংশের জন্য প্রায় এক হাজার ৩২ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।

৩০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১১ দশমিক ৮ হেক্টর ব্যাক আপ এলাকাসহ একটি বহুমুখী বার্থের উন্নয়ন।

৪৬০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ২০.২ হেক্টর ব্যাক-আপ এলাকাসহ একটি কন্টেইনার বার্থের উন্নয়ন।

অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের প্রস্থ ৩৫০ মিটার, ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৬ মিটার গভীরতা ডিজাইন করা।

বন্দরের উত্তরে ২ হাজার ১৫০ মিটার এবং দক্ষিণে ৬৭০ মিটার ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ করা।

বন্দর অংশের অগ্রগতি

প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আওতায় বাস্তবায়নাধীন এই অংশে ৮ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ের মধ্যে জাইকা জোগান দিচ্ছে ৬ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা এবং সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ২১৩ কোটি টাকার সংস্থান রয়েছে।

গত জুলাই মাস পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৪৫০ কোটি টাকা; যার মধ্যে জাইকা দিয়েছে মাত্র ৮২ কোটি বা ১.২২ শতাংশ এবং নিজস্ব অর্থায়ন অংশের ৩৬৮ কোটি টাকা বা ১৬.৬৩ শতাংশ। মোট আর্থিক অগ্রগতি ৫ শতাংশ। এই ব্যয় মূলত প্রকল্পের পরামর্শক সেবা ও আবর্তক ব্যয় মেটানো হয়েছে। পূর্তকাজ শুরু হয়নি এবং ভৌত অগ্রগতি শূন্য।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অংশের অগ্রগতি

প্রকল্পটির এই অংশের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়নাধীন এই অংশে জাইকা দিচ্ছে ৬ হাজার ১৫০ কোটি টাকা এবং সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হচ্ছে ২ হাজার ৬৮২ টাকা।

গত জুলাই পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি প্রায় ২৮১ কোটি টাকা। সরকারি তহবিল অংশের বাস্তবায়ন মাত্র ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং প্রকল্প ঋণের অগ্রগতি মাত্র ২ দশমিক ২৭ শতাংশ। মোট আর্থিক অগ্রগতি ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ হলেও পূর্তকাজ শুরু না হওয়ায় ভৌত অগ্রগতি শূন্য।

প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

প্রকল্পের এই অংশের আওতায় ২৬০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করার কথা। এছাড়া ২০ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার সড়ক ও মহাসড়ক তৈরি এবং ৭ হাজার ৫৪ মিটার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।

কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার অংশে ৮১ দশমিক ৩০ হেক্টর জমি এবং মহেশখালী অংশে ৬২ দশমিক ৯৫ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেখানেও চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে প্রকল্পের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করা এবং প্রকল্পের জনবলের ঘাটতি।

এতে বলা হয়, এই অংশের প্রধান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজন ১৮ জন কর্মকর্তা। কিন্তু কাজে নিয়োজিত মাত্র নয় জন কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত