শূন্য পদে নিয়োগসহ চার দফা দাবি আদায়ে সরকারকে এক ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে দাবি পূরণ করে প্রজ্ঞাপন জারি না করলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিমুখে লং মার্চ ঘোষণা করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।
রবিবার দুপুর ১টা ১০ মিনিটে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে সরকারকে এই আল্টিমেটাম দেন ‘সাধারণ ম্যাটস শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদ’র সিনিয়র সমন্বয়ক মুজাহিদ।
এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যাতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করতে না পারে সেজন্য শাহবাগ মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে পুলিশ। পাশাপাশি তাদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।
দাবি আদয়ে সরকারকে এক ঘণ্টা সময় দিয়ে মুজাহিদ বলেন, “শহীদ জিয়াউর রহমানের হাত ধরে ম্যাটস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যে কারণে ম্যাটসের শিক্ষার্থীরা গত ১৬ বছর ধরে বৈষম্যের শিকার। আমরা উচ্চশিক্ষা নিতে পারি না। আমরা স্বাস্থ্য খাতকে সুন্দর করে সাজানোর জন্য রাজপথে নেমেছি।
“আমাদের চার দফা দাবি পূরণ করে আগামী এক ঘণ্টার মধ্যে প্রজ্ঞাপণ জারি না করলে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিমুখে লং মার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করব। দুপুর ২টা ১০ মিনিটে আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।”
চার দফা দাবি আদায়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি ৭ কার্যদিবসে বাস্তবায়ন না করায় লং মার্চ কর্মসূচি পালন করছে ম্যাটস শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সড়কে বসে পড়ে ম্যাটস শিক্ষার্থীরা। সেখানে তাদের বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়।
তখন সাধারণ ম্যাটস শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক (মিডিয়া সেল) মো. সাকিব মাহমুদ বলেন, “বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে জুলাই বিপ্লব সংগঠিত হলেও ম্যাটস শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিনের বৈষম্যের অবসান হয়নি। এই বৈষম্য অবসানের লক্ষ্যে গত ২২ জানুয়ারি চার দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা ঢাকার শাহবাগে গণজমায়েত করলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ৭ কার্যদিবসের মধ্যে দাবি পূরণের লিখিত প্রতিশ্রুতি দেন।
“কিন্তু তার দৃশ্যমান কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। যেহেতু মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ঠ অধিদপ্তরগুলো এ ব্যাপারে আন্তরিকতার সাথে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি, সেহেতু আমরা লং মার্চ কর্মসূচি নিয়েছি। আমাদের এই মুভমেন্টের সব দায়ভার স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদকে নিতে হবে, যা আগেই সংবাদ সম্মেলনের এ মাধ্যমে পৌঁছে দিয়েছি।”
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, বর্তমানে সারাদেশে ১৬টি সরকারি ম্যাটস ও প্রায় ২০০টি বেসরকারি ম্যাটস ডিপ্লোমা মেডিকেল ডিগ্রি ‘ডিএমএফ’ কোর্সটি পরিচালনা করে আসছে। বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান ২০২২ এবং বিএমডিসির সর্বশেষ তথ্যমতে বাংলাদেশে বর্তমানে ডিপ্লোমা মেডিকেল শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার এবং বিএমডিসি নিবন্ধিত ডিএমএফের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৫৫০০ হাজার ডিপ্লোমা চিকিৎসক (ডিএমএফ) গণ ‘উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার’ পদে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রসহ জেলা সদর হাসপাতালে কর্মরত আছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরও জানিয়েছে, বর্তমানে ডিপ্লোমা মেডিকেল তথা ডিএমএফ কোর্স কেরে প্রায় ৫০ হাজার দক্ষ জনবল বেকার রয়েছে। এক যুগের বেশি সময় ধরে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে, নিয়োগবিধি সংশোধনের নামে টালবাহানা করে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।
কিন্তু স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে শূন্য পদ রয়েছে ২৫০০ টি। এতে করে একদিকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অন্য দিকে ম্যাটস থেকে পাশ করা বেকার দিন দিন বাড়ছে।
তাদের চার দাবি হলো
১। এক যুগের বেশি সময় ধরে নানা অজুহাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এর শূন্য পদে বন্ধকৃত নিয়োগ অভিযুক্ত সচল করতে হবে এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা প্রদানের লক্ষ্যে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদ সৃষ্টি করতে হবে। (কারণ, ওখানে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য চিকিৎসা শিক্ষায় শিক্ষিতদের এখন পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়া হয়নি। কিন্তু এন্টিবায়োটিকসহ অন্যান্য ওষুধের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হয়, যা জনগণের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা)।
২। প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন, কোর্সের নাম পরিবর্তনসহ (১৯৮৫ সালের সিদ্ধান্ত) ২০২১ সালের কোর্স কারিকুলামের ত্রুটি ও অসংগতি সমাধান করে নতুন ইন্টার্ন লগবুক প্রণয়ন করা।
৩। উচ্চশিক্ষা বঞ্চিত, বিএমডিসি স্বীকৃত ক্লিনিক্যাল বিষয়ে উচ্চশিক্ষা প্রদান করা।
৪। প্রস্তাবিত এলাইড হেলথ প্রফেশনাল বোর্ড খসড়া আইনের নাম পরিবর্তনসহ প্রস্তাবিত সব ধারায় সংশোধনীসহ বাস্তবায়ন করা।