Beta
মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিমুখে ম্যাটস শিক্ষার্থীদের লংমার্চ

mats
[publishpress_authors_box]

শূন্য পদে নিয়োগসহ চার দফা দাবি আদায়ে শাহবাগ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিমুখে লংমার্চ করেছে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা।

এর আগে দাবি পূরণে সরকারকে এক ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। সেই সময় পেরোনোর পর আন্দোলনরতদের ৫ জন প্রতিনিধি আলোচনা করতে যান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। তার মধ্যেই লংমার্চ শুরু করেন বাকি শিক্ষার্থীরা।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিকাল ৪টার দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। তখন জাতীয় যাদুঘরের সামনের রাস্তায় অবস্থান করছিল শিক্ষার্থীরা। পরে শাহবাগে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে যাত্রা শুরু করেন ম্যাটস শিক্ষার্থীরা।

লংমার্চের আগে আগে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আহসান হাবীব সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের ৫ জন প্রতিনিধি মন্ত্রণালয়ে গিয়েছে। কিন্তু বিকাল ৪ টার মধ্যে ঘোষণা না এলে আমরা লংমার্চ করব। আমাদের কেউ আটকাতে পারবে না।”

শূন্য পদে নিয়োগসহ চার দফা দাবি আদায়ে রবিবার দুপুর ১টা ১০ মিনিটে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে সরকারকে এক ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন ‘সাধারণ ম্যাটস শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদ’র সিনিয়র সমন্বয়ক মুজাহিদ। এর মধ্যে দাবি পূরণ করে প্রজ্ঞাপন জারি না করলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিমুখে লং মার্চ ঘোষণা করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছিল তারা।

এর ২ ঘণ্টা পর সাড়ে তিনটার দিকে পাচঁজনের প্রতিনিধি দল রওনা দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। তার কিছুক্ষণ পরই লংমার্চ শুরু করে বাকিরা।

এর আগে, সোমবার উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আশ্বাস দেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তবে সাত দিনের বিরতির পর আবারও আশ্বাসের ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা ‘ভুয়া ভুয়া’, ‘আশ্বাস নয় ঘোষণা চাই’ স্লোগান দিতে থাকেন।

রবিবার বিকাল পৌনে ৩টার দিকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার প্রতিনিধি হিসেবে আন্দোলনরত মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মুহাম্মদ তুহিন ফারাবী।

এসময় স্বাস্থ্য উপদেষ্টার প্রতিনিধি হিসেবে কথা বলতে চাইলে শিক্ষার্থীদের অনেকে ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের স্লোগান থামানোর আহ্বান জানান সাধারণ ম্যাটস শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা। এরপর উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কথা বলেন তুহিন ফারাবী।

তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আমাকে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পাঠিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, তিনি আপনাদের দাবির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করেছেন। এমনকি আগামীকালের মধ্যে দশম গ্রেডে নিয়োগের সার্কুলার দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন।”

এসময় ‘শাহবাগের এই মোড় রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে তিনি ‘রোগীদের ভোগান্তির বিষয়টি’ মাথায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৫ জন প্রতিনিধিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যাওয়ারও আহ্বান জানান। প্রথমে রাজি না হলেও পরবর্তীতে তারা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, বর্তমানে সারাদেশে ১৬টি সরকারি ম্যাটস ও প্রায় ২০০টি বেসরকারি ম্যাটস ডিপ্লোমা মেডিকেল ডিগ্রি ‘ডিএমএফ’ কোর্সটি পরিচালনা করে আসছে। বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান ২০২২ এবং বিএমডিসির সর্বশেষ তথ্যমতে বাংলাদেশে বর্তমানে ডিপ্লোমা মেডিকেল শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার এবং বিএমডিসি নিবন্ধিত ডিএমএফের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৫৫০০ হাজার ডিপ্লোমা চিকিৎসক (ডিএমএফ) গণ ‘উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার’ পদে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রসহ জেলা সদর হাসপাতালে কর্মরত আছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরও জানিয়েছে, বর্তমানে ডিপ্লোমা মেডিকেল তথা ডিএমএফ কোর্স কেরে প্রায় ৫০ হাজার দক্ষ জনবল বেকার রয়েছে। এক যুগের বেশি সময় ধরে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে, নিয়োগবিধি সংশোধনের নামে টালবাহানা করে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।

কিন্তু স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে শূন্য পদ রয়েছে ২৫০০ টি। এতে করে একদিকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অন্য দিকে ম্যাটস থেকে পাশ করা বেকার দিন দিন বাড়ছে।

তাদের চার দাবি হলো :

১। এক যুগের বেশি সময় ধরে নানা অজুহাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এর শূন্য পদে বন্ধকৃত নিয়োগ অভিযুক্ত সচল করতে হবে এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা প্রদানের লক্ষ্যে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদ সৃষ্টি করতে হবে। (কারণ, ওখানে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য চিকিৎসা শিক্ষায় শিক্ষিতদের এখন পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়া হয়নি। কিন্তু এন্টিবায়োটিকসহ অন্যান্য ওষুধের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হয়, যা জনগণের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা)।

২। প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন, কোর্সের নাম পরিবর্তনসহ (১৯৮৫ সালের সিদ্ধান্ত) ২০২১ সালের কোর্স কারিকুলামের ত্রুটি ও অসংগতি সমাধান করে নতুন ইন্টার্ন লগবুক প্রণয়ন করা।

৩। উচ্চশিক্ষা বঞ্চিত, বিএমডিসি স্বীকৃত ক্লিনিক্যাল বিষয়ে উচ্চশিক্ষা প্রদান করা।

৪। প্রস্তাবিত এলাইড হেলথ প্রফেশনাল বোর্ড খসড়া আইনের নাম পরিবর্তনসহ প্রস্তাবিত সব ধারায় সংশোধনীসহ বাস্তবায়ন করা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত