অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে হাত দিয়েছে, তাতে এনবিআরকে রাজস্ব আহরণে রেখে নীতি প্রণয়নের কাজটি আলাদা বিভাগের ওপর দেওয়ার সুপারিশ এসেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর সংস্কারে গঠিত পরামর্শক কমিটির সদস্য, এই সংস্থার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সোমবার এক আলোচনা অনুষ্ঠানে একথা জানিয়েছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত অক্টোবরে এই পরামর্শক কমিটি গঠন করে। কমিটিতে মজিদ ছাড়াও রয়েছেন সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন আহমেদ। ২০০৯ সালের এপ্রিলে মজিদ বিদায় নেওয়ার পর নাসির এনবিআর চেয়ারম্যান হয়েছিলেন।
গত ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে কমিটি তাদের একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদের কাছে হস্তান্তর করেন।
তারপর সোমবারই প্রথম এনিয়ে কথা বললেন মজিদ। ঢাকায় সিএ ভবনে ‘এনবিআর সংস্কার’ নিয়ে আইসিএবি ও ইআরএফ আয়োজিত এই গোলটেবিলে তিনি ছিলেন প্রধান অতিথি।
মজিদ বলেন, ১৯৭২ সালের এনবিআর আইনকে সংস্কার করেই আধুনিকায়নের সুপারিশ করেছে তাদের পাঁচ সদস্যের কমিটি।
তিনি বলেন, “আমরা অনেকগুলো পক্ষের সঙ্গে গভীর আলোচনা করে দেখেছি যে দুইটা জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ। এনবিআরকে ক্ষমতায়ন করতে হবে। তাকে আলাদা করতে হবে। তাকে স্বাধীন করতে হবে। তাকে তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে এবং সেটা সে পালন করবে।”
‘অন্তর্বর্তী’ প্রতিবেদনে এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ে রেখে নীতি প্রণয়নে আলাদা বিভাগের সুপারিশ করা হয়।
“আমরা রাজস্ব আদায় ও পলিসি উইং দুটি বিভাগে ভাগ করতে বলেছি। যেখানে রাজস্ব বোর্ড শুধু রাজস্ব আহরণ করবে, আর পলিসি উইং নীতি নির্ধারণ করবে। আর পলিসিটা যেটা এখন আইআরডি (অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ) তার একটু নাম-টাম পাল্টিয়ে আমরা একটি ডিভিশন করার সুপারিশ করেছি।”
বর্তমানে এনবিআর অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক বিভাগের অধীনে কাজ করে। অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক বিভাগের সচিবই এনবিআর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এনবিআর রাজস্ব আহরণের শীর্ষ সংস্থা হিসাবে কর সংক্রান্ত বিধি-বিধান তৈরি এবং কর আদায় দুটোই করে।
বিসিএসে এখন শুল্ক ও কাস্টমস ক্যাডারের নিয়োগপ্রাপ্তরা রাজস্ব বোর্ডে কাজ করেন। রাজস্ব আদায়ের নীতি প্রণয়নের ভার এনবিআর থেকে সরিয়ে নেওয়ার বিরোধিতা করছেন এই দুই ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, এতে এনবিআরের ক্ষমতা খর্ব হবে এবং রাজস্ব আহরণে জটিলতা তৈরি হবে। সেই সঙ্গে তাদের ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের দৌরাত্ম্য বাড়বে।
বিসিএসে নিরীক্ষা ও হিসাব (অডিট ও অ্যাকাউন্টস) ক্যাডারে নিয়োগ পেয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যানের পদে দায়িত্ব পালন করে আসা মজিদ অবশ্য দাবি করছেন, তাদের সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে এনবিআর আরও শক্তিশালী হবে।
যে ১৯৭২ সালের আইন অনুসারে সংস্কারের প্রস্তাব তারা দিয়েছেন, সেখানে রাষ্ট্রপতির মূল আদেশ (৭৬নং) অনুযায়ী, সচিব পদমর্যাদায় কর্মরত আয়কর ও কাস্টমস বিভাগের সদস্যদের মধ্য থেকে যোগ্যতম সদস্যকে সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও নির্ধারিত পদ্ধতিতে সচিব-জ্যেষ্ঠ সচিব পদমর্যাদায় এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দিতে হয়। আর এনবিআর চেয়ারম্যান সরাসরি অর্থমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করবেন।
রাজস্ব আহরণের নীতি প্রণয়নের প্রস্তাবিত বিভাগ কীভাবে কাজ করবে, তাও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে জানিয়ে মজিদ বলেন, “আমরা প্রস্তাব করেছি, প্রতি বছর পরিপত্র জারি করে একটি করে কমিটি করতে হবে, যেখানে অর্থনীতিবিদ, চার্টার্ড একাউন্টটেন্ট, অধ্যাপক, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিত্ব করে এরকম একটি কমিটিও থাকবে।
“ওই কমিটি বছর অন্তত চার থেকে ছয়টি বৈঠক করে প্রয়োজনীয় আলোচনা করে প্রয়োজনীয় নীতি গ্রহণের সুপারিশ করবে। আমরা অর্থ উপদেষ্টাকে বলেছি, সেখানে নলেজেবল লোক থাকতে হবে।”
সরকার তাদের কমিটি গঠন করলেও প্রতিবেদন তৈরিতে কোনও সময়-সীমা বেঁধে দেয়নি জানিয়ে মজিদ বলেন, “আমরা মনে করি এরকম এন্ডলেস টাইম নিয়ে কোনও সংস্কার প্রস্তাব বা এগুলো করা ঠিক না। কারণ তখন কাজের ভিতরে ইয়ে… থাকে না।”
এই পরামর্শক কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন- মো. দেলোয়ার হোসেন, ফরিদ উদ্দিন ও আমিনুর রহমান।