আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলমের শিল্পগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে ছিল এমন ৪ ব্যাংকসহ মোট ৬টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
গত শনিবার ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এমডি মো. ওয়াসেক বিল্লাহ এবং রবিবার এসআইবিএল এমডি মো. ফোকানউল্লাহ (চলতি দায়িত্ব), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ হাবিব হাসনাত, ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি শফিউদ্দিন আহমেদ, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের সিইও শফিক বিন আবদুল্লাহ ও এক্সিম ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেনকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়।
এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এসআইবিএল, গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক ছিল এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। এস আলম গ্রুপ ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো এসব ব্যাংক থেকে বিপুল অংকের ঋণ নিয়ে পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সংস্থাটি জানায়, এই ব্যাংকগুলোতে অধিকতর তদন্তের জন্য ‘ফরেনসিক অডিট’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংক খাত সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্স। অডিট চলাকালে এসব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা স্বপদে থাকলে তা অডিটের কাজে বাধার সৃষ্টি করতে পারে বলে অভিযোগ রয়েছে টাস্কফোর্সের কাছে। এ কারণে তাদের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
টাস্কফোর্সের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, পুরনো লেনদেনের কোনও তথ্য মুছে ফেলা হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে এই ফরেনসিক অডিটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে টাস্কফোর্স। সেই সিদ্ধান্তে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকও।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার এই ৬ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করে। সেখানে এসব ব্যাংকে অধিকতর তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাজ থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
প্রথম ধাপে শরিয়াহভিত্তিক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে অডিট শুরু হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে শনিবার ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক শনিবার পরিচালনা পর্ষদের জরুরি সভায় এমডিকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তাকে আগামী তিন মাসের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয়। এ সময়ে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব পালন করবেন ব্যাংকটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ। তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ পরিবারের ৪ সদস্য ছিলেন ব্যাংকটির পর্ষদে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তনের পর গত ১ সেপ্টেম্বর ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে।
আব্দুল মান্নান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এমডি যেহেতু আগে থেকে দায়িত্বে ছিলেন, তাই তাকে রেখে অডিট প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। কোনও বির্তক যাতে না ওঠে, নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে তাকে তিন মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।”
রবিবার একইভাবে অন্য ৫ ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের বাধ্যতামূলক ছুটির সিদ্ধান্ত নেয় নিজ নিজ পর্ষদ।