Beta
মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫

মেডিকেলে ভর্তি : মুক্তিযোদ্ধা কোটার ১৯৩ জনের কার্যক্রম স্থগিত

সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ১৯৩ জনের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই করার পর তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সোমবার জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর।

অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) নীতিমালা অনুযায়ীই মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে ১৯৭১ সালের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের ৫ শতাংশ কোটা রয়েছে। কোটা অনুযায়ী তাদের জন্য গতবার ছিল ১০৮টি আসন; এবার রয়েছে ২৬৯টি আসন। এবার এ কোটায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে ১৯৩ জন; বাকি ৭৬টি আসন এরই মধ্যে মেধা তালিকা থেকে পূরণ করা হয়েছে।

ওই ১৯৩ জন আসলেই বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কি না, তারা নাতি-নাতনি হয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয় দিচ্ছে কি না, বা অন্য কেউ মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুযোগ নিচ্ছে কি না- এসব যাচাই-বাছাইয়ের পর তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। যাচাই-বাছাইয়ে কোনও ভুল বা অসত্য তথ্য পাওয়া গেলে সেই প্রার্থীর ভর্তি বাতিল হবে এবং মেধাতালিকা থেকেই সেই শূন্য আসন পূরণ করা হবে।

দেশে মেডিকেল কলেজ ১১০টি। সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজে আসন ৫ হাজার ৩৮০টি। বেসরকারি ৬৭টি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ২৯৩টি আসন রয়েছে। এছাড়া একটি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ও পাঁচটি বেসরকারি আর্মি মেডিকেল কলেজ আছে।

সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হয় এই পরীক্ষার মেধাতালিকার ভিত্তিতে। এই ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই শুধু বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া যায়।

মেডিকেল কলেজে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে গত ১৭ জানুয়ারি শুক্রবার ভর্তি পরীক্ষা হয়। এতে অংশ নেয় এক লাখ ৩১ হাজার ৭২৯ জন।

রবিবার প্রকাশিত ফলে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে ৬০ হাজার ৯৫ জন উত্তীর্ণ হয়েছে; পাসের হার ৪৫ দশমিক ৬২ শতাংশ।

পরীক্ষায় পাস নম্বর ছিল ৪০।

৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে ৫ হাজার ৩৭২ পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১৯৩ জন থাকার বিষয়টি সমানে আসার পর কম নম্বর পেয়েও ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন- এমন যুক্তি দিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।

প্রকাশিত ফলকে ‘বৈষম্যমূলক’ দাবি করে রবিবার রাতেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের একদল শিক্ষার্থী। তারা ফল বাতিলের দাবিও জানান।

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় কোটা বাতিল, প্রকাশিত ফল বাতিল করে আবার প্রকাশের দাবিতে সোমবারও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

উদ্ভূত পরিস্থিতে বিষয়টি নিয়ে সোমবার বৈঠক করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। বৈঠকে স্বাস্থ্য খাতের সংশ্লিষ্ট শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা ছিলেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান জানিয়েছেন, এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. রুবীনা ইয়াসমীন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আজ এ বিষয়ে আমাদের মিটিং ছিল। কারণ বিএমডিসি নীতিমালা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য এ কোটা নির্ধারিত। কিন্তু নাতি-নাতনিদের জন্য নয়।

“সেই হিসাবে এই কোটা রয়েছে। সন্দেহজনক ১৯৩ জনকে আমরা ডেকেছি। তাদের ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে এবং আমরা ওয়েবসাইটেও দেব।”

অধ্যাপক রুবীনা ইয়াসমীন জানান, আগামী ২৭, ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি সব কাগজসহ তাদের ডাকা হয়েছে।

সবকিছু যাচাই-বাছাই করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এজন্য তিনটা কমিটি গঠন করা হয়েছে, প্রতিদিন ৬৬ জনের কাগজপত্র যাচাই করা হবে। সবকিছু দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”

এই ১৯৩ জনের ফল স্থগিত বলা যাবে কিনা- এমন প্রশ্নে অধ্যাপক রুবিনা ইয়াসমীন বলেন, “আমরা ঠিক স্থগিত শব্দ বলছি না। বলতে পারেন, কাগজপত্র দেখার জন্য ডাকা হচ্ছে। সবকিছু যাচাই করা হবে, এরপর সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

বিএমডিসির নীতিমালায় ১৯৭১ সালের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটা রয়েছে। কিন্তু এখন যারা সুযোগ পেয়েছে, তাদের বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা কতটা রয়েছে- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটাই আমরা যাচাই করব। সে জন্যই সব কাগজপত্র নিয়ে আসার জন্য বলেছি আমরা।”

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয় জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “কোটা বাতিলের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আদালত থেকে যে রায় দেওয়া হয়েছিল, সেখানে মূল পরিবর্তন হলো নাতি-নাতনির পরিবর্তে পরবর্তী প্রজন্মের বদলে সন্তান বলা হয়েছে।

“অতএব কোটার বিষয়টিতে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে এটা একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষাও প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী হয়েছে। তারপরও এটা স্ক্রুটিনি করা হবে।”

তিনি বলেন, “এই ১৯৩ জনের মধ্যে খুবই আনইউজুয়াল হবে যাদের বাবার বয়স ৬৭-৬৮ বছর এবং যাদের সন্তান থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। সেখানে যদি কোনও ত্রুটি ধরা পড়ে তাহলে সেটা দেখা হবে।

“এমবিবিএস পরীক্ষায় মূল কোটা থাকবে, কি থাকবে না- এই নীতিগত সিদ্ধান্তটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়, এটি রাষ্ট্রের। আগামী ২৭, ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি যাচাই করা হবে।”

মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবিতে রবিবারের মতো সোমবারও শহীদ মিনারে সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা।

সেখানে তারা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘মেডিকেলে কোটা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘৪০ পেয়ে চান্স হয়, ৭৩ কেন বাদ হয়’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’সহ নানা স্লোগান দেয়।

রবিবারের সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে ঢাকার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক আব্দুল ওহাব বলেন, “ভর্তি পরীক্ষায় ৪০ বা ৪১ পেয়ে অনেকে চান্স পেয়েছে। অথচ এর ডাবল মার্ক পেয়েও অনেকে চান্স পায়নি, এটা কি বৈষম্য না?”

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তোমরা যেহেতু রাজপথে নামতে শিখেছ সেহেতু রাজপথ থেকেই তোমাকে অধিকার আদায় করে নিতে হবে। এছাড়াও আজকের মধ্যে সকল ধরনের কোটার বিলুপ্তি ও ফলফল পুনঃপ্রকাশ করতে হবে। আমি শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি।”

ওই ১৯৩ জনের ফল স্থগিত করা হয়েছে, না কি যাচাই বাছায়ের পর তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, এ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলে, “কনফিউশন তো থাকবেই। তবে যাচাই বাছাইয়ের পরই তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আপনি আপাতত স্থগিত বলতে পারেন।

“আর বিএমডিসির নীতিমালা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বদলাতে পারে না, এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। সরকার যদি মনে করে কোটা থাকবে না, তাহলে তারা বাতিল করতে পারে।”

স্বাস্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য কোটা পদ্ধতি বিএমডিসি নীতিমালাতেই রয়েছে। সে অনুসারেই ফল প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স হিসেবে এখন তাদের সন্তানদের থাকার কথা না কোনও ভর্তি পরীক্ষায়। এই সুযোগটাই অন্য কেউ নিচ্ছে কি না, সেটাই যাচাই করা হবে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, সরকারি মেডিকেল কলেজে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময়সীমা আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির অনলাইন আবেদন গ্রহণের বিজ্ঞপ্তি ২৩ জানুয়ারি প্রকাশ হবে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সোমবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞিপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, যাচাই-বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই ১৯৩ জনের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। বাকিরা যথাসময়ে ভর্তি হতে পারবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “এবার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিদ্যমান বিধি অনুসারে শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য প্রযোজ্য হবে। তাদের নাতি-নাতনি বা অন্য কারও জন্য প্রযোজ্য হবে না। এ কোটার অধীনে সংরক্ষিত ২৬৯টি আসনের মধ্যে ১৯৩ জন পাওয়া গেছে। বাকি ৭৬টি আসন ইতোমধ্যে মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হয়েছে।

“এই কোটায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ১৯৩ জনের পিতা/মাতার মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র, নিজের জন্মনিবন্ধন সনদসহ যাবতীয় প্রমাণাদি ও একাডেমিক সার্টিফিকেট নিয়ে আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে মধ্যে মেডিকেল এডুকেশন শাখায় উপস্থিত হয়ে যাচাই-বাছাই করাতে হবে। প্রক্রিয়াতে কোনও ভুল বা অসত্য তথ্য পাওয়া গেলে সেই প্রার্থীর ভর্তি বাতিল হবে এবং মেধাতালিকা থেকে সেই শূন্য পদ পূরণ করা হবে।”

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, “এ যাচাই-বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই ১৯৩ জনের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। অবশিষ্টদের ভর্তিসহ মেডিকেল কলেজের অন্যান্য কার্যক্রম যথারীতি চালু থাকবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত