মেট্রোরেলের ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পাসধারী যাত্রীরা ভ্রমণ পারলেও যারা একক যাত্রার টিকেটে যাতায়াত করতে চান, তাদের অধিকাংশকেই স্টেশনে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। টিকেট সংকটে অনেকে শেষ পর্যন্ত বাস বা অন্য পরিবহণে চেপে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
ঢাকায় মেট্রোরেলের যাত্রীদের জন্য দুই ধরনের টিকেট দেওয়া হয়। একটি এমআরটি পাস বা র্যাপিড পাস, অন্যটি একক যাত্রার টিকেট। যাত্রী র্যাপিড পাস কেনার পর টাকা না ফুরানো পর্যন্ত তা ব্যবহার করতে পারেন, কার্ডটি নিজের কাছে রাখতে পারেন।
একক যাত্রার যাত্রীরা স্টেশন থেকে তাৎক্ষণিক টিকেট কিনে যাত্রা করতে পারেন। গন্তব্যে পৌঁছানোর পর স্টেশন থেকে বের হওয়ার সময় সেই টিকেট ফেরত দেওয়া বাধ্যতামূলক। প্রতিটি একক যাত্রার টিকেট দেড়শ টাকা করে কিনতে হয়।
একক যাত্রার টিকেট না পেয়ে ফিরে যাওয়া যাত্রীরা সরকারের উপর চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত এই সমস্যার সমাধানের দাবি জানাচ্ছেন। তবে চলতি মাসের শেষে এবং আগামী মাসের শুরুর দিকে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে জানিয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।
মেট্রোরেলের একক যাত্রার টিকেট সংকট কাটাতে চার লাখ নতুন টিকেট কেনার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ডিএমটিসিএলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুর রউফ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এই মাসের শেষের দিকে মেট্রোরেলের জন্য নতুন করে ২০ হাজার টিকেট আসছে।
“প্রায় চার লাখ একক যাত্রার টিকেট অর্ডার করা হয়েছে। এরমধ্যে গত মাসে ২০ হাজার নতুন টিকেট যুক্ত করা হয়েছে। এই মাসের (ডিসেম্বর) ২৮ তারিখ ২০ হাজার টিকেট আমরা হাতে পাব।”
“এর আগে গত মাসেও ২০ হাজার নতুন টিকেট এনে যুক্ত করা হয়েছে। আগামী মার্চের মধ্যে বাকী প্রায় সাড়ে তিন লাখ একক যাত্রার টিকেট দেশে আসবে” বলেন ডিএমটিসিএল এমডি।
টিকেট সংকটের কারণ জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, “মেট্রোরেল লাইন-৬ এর উদ্বোধনের সময় আমাদের একক যাত্রার টিকেট ছিল প্রায় ৩ লাখ ১৩ হাজার। এরমধ্যে হারানো বা যাত্রীরা নিয়ে গেছেন এবং ড্যমেজ হয়েছে প্রায় দুই লাখ তের হাজার একক যাত্রার টিকেট।
“বাকী টিকেট এখন আমাদের হাতে আছে। কিন্তু এই টিকেটে কোনোভাবেই সংকুলান হচ্ছে না বলেই এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।”
যেসব কার্ড নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেসব কার্ড ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছিল মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। তাতে কিছু কার্ড ফেরত আসে। সব মিলিয়ে বর্তমানে মেট্রো কর্তৃপক্ষের আছে একক যাত্রার প্রায় ৪০ হাজার টিকেট আছে।
স্টেশন ঘুরে যা দেখা গেল
রবিবার বেলা ১১টায় মিরপুর ১১ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় নিচের লিফট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সিঁড়ি বেয়ে উপরে যাওয়ার গেটে নিরপত্তা প্রহরী দাঁড়িয়ে রয়েছেন। যাদের এমআরটি পাস নেই তাদের তিনি গেট দিয়ে কনকোর্স ফ্লোরে যেতে দিচ্ছেন না।
নিরাপত্তা প্রহরীরা বলছেন, একক যাত্রার টিকেট নেই তাই এমআরটি পাস ছাড়া উপরে যাওয়া যাবে না। শুধু এমআরটি ও র্যাপিড পাসধারী যাত্রীদের কনকোর্স ফ্লোরে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে।
মেট্রোরেলে মতিঝিল যাবেন, তাই হাতে কম সময় নিয়ে স্টেশনে এসে টিকেট না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আবদুল কাদের। তিনি বলেন, “দেশের সাধারণ মানুষের ৩০-৪০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে তৈরি মেট্রোরেল। টিকেট সংকটের কারণে মানুষ ব্যবহার করতে পারবে না, এটা কী ধরনের কথা?
“আসলে দেশ চালানোর দক্ষতা এই সরকারের নেই বলে এই সমস্যা হচ্ছে।”
কাদেরের মতো অনেক যাত্রীকে একক যাত্রার টিকেট না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে দেখা যায়।
কনকোর্স ফ্লোরে গিয়ে দেখা যায়- একক যাত্রার টিকেট বিক্রির কাউন্টার বন্ধ। অন্য পাশের এমআরটি পাস রিচার্জ কাউন্টারে শুধু রিচার্জ করা হচ্ছে। একইভাবে ভেন্ডিং মেশিনেও একক যাত্রার টিকেট না থাকায় মেশিনগুলোও বন্ধ রাখা হয়েছে।
কাউন্টারের দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তা কবির উদ্দীন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমাদের কাছে টিকেট নেই। তাই এমআরটি পাস ছাড়া যাত্রী প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।”
একইভাবে মিরপুর ১০, কাজিপাড়া ও আগারগাঁও মেট্রো স্টেশনেও একই অবস্থা দেখা যায়।