একটি জুতা কোম্পানির কিছু সংখ্যক বিক্রয় প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে। সেই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি ঝুলছে মেট্রোরেলের পিয়ারে। একই খুঁটিতে ঝুলছে বাসা ভাড়া, মেসের সিট ভাড়া, বিয়ের ঘটকালির বিজ্ঞাপনও। রাজনৈতিক দলের পোস্টার তো রয়েছেই।
শনিবার সকালে ঢাকার পল্লবীতে থাকা মেট্রোরেলের ১৭২ নম্বর পিয়ারে গিয়ে দেখা গেল এমন অবস্থা। এই পিয়ারটিই শুধু নয়, অন্য পিয়ারগুলোর চিত্রও এমনই। এসব পোস্টারে ঢাকা পড়েছে বৈষ্যমবিরোধী আন্দোলনের গ্রাফিতিও।
‘মেট্রোরেলের পিয়ারে পোস্টার লাগানো দণ্ডনীয় অপরাধ’ – বিভিন্ন জায়গায় লাগানো এমন সতর্কবার্তাও থামাতে পাড়েনি পোস্টারের বহর।
মেট্রোরেল আইনে এই স্থাপনায় পোস্টার লাগানো নিয়ে কিছু লেখা নেই। কিন্তু এই বৈদ্যুতিক ট্রেন উদ্বোধনের পরপরই পোস্টার ঠেকাতে দেওয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রয়োগের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।
পোস্টার না লাগাতে গণবিজ্ঞপ্তিও দিয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশেন। তৎকালীন মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছিলেন, এভাবে পোস্টার লাগালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পোস্টার লাগানোয় গত বছর জাতীয় পার্টির এক নেতাকে সতর্কও করেছিল ডিএনসিসি।
তার আগে ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর উদ্বোধন হওয়ার আগেই পোস্টার নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছিল ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। কারণ পিয়ার ঢাকা পড়ছিল পোস্টারে।
ওই বছরের ২২ আগস্ট মেট্রেরোরেলের বিভিন্ন স্থাপনায় পোস্টার লাগানোর অপরাধে ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পোস্টার সাঁটানো বন্ধে থানায় জিডিও করে ডিএমটিসিএল।
মাঝে কিছুদিন মেট্রোরেলের পিয়ারগুলো ঝঞ্ঝাটমুক্ত থাকলেও গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বদলে গেছে চিত্র।
শনিবার মিরপুর থেকে শুরু করে আগারগাঁও, ফার্মগেইট, পল্টন সবখানে ঘুরে কোথাও পোস্টারমুক্ত পিয়ার দেখা যায়নি।
এমনকি স্টেশনেও পোস্টার সাঁটা দেখা গেছে। পল্লবী স্টেশনে ঢোকার মুখেই চোখে পড়বে ঢাকা মহানগর উত্তরের রূপনগর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাসুম বিল্লাহ্র পোস্টার।
৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’র শুভেচ্ছা জানিয়ে সাঁটানো হয়েছে সেই পোস্টার। এই পোস্টার পাওয়া যাবে মেট্রোরেলের ১৭০ নম্বর পিয়ার থেকে শুরু করে ১৯৩ নম্বর পিয়ারের প্রতিটিতে।
একই পোস্টারে বড় করে ব্যবহার করা হয়েছে বিএনপি সমর্থিত সংগঠনটির কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইয়াছিন আলীর ছবি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ছবিও আছে এই পোস্টারে।
এ্ই দিবসের পোস্টারে ছেয়ে আছে আগারগাঁও থেকে বিজয় সরণি পর্যন্ত খুঁটিগুলোও। জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের পোস্টার সেগুলো।
জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এলাকার পিয়ারগুলোতে সবচেয়ে বেশি পোস্টার ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর। এছাড়া আছে কোচিং সেন্টারের বিজ্ঞাপন। ‘ড্রাইভার আবশ্যক’, ‘রুমমেট আবশ্যক’ এমন বিজ্ঞাপনও সাঁটা আছে পিয়ারে।
শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে দোয়েল চত্বর এলাকায় মেট্রোরেলের পিয়ারে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তির বিজ্ঞাপন। এছাড়া আছে বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিলের পোস্টার, এমনকি কবিরাজি চিকিৎসার বিজ্ঞাপন।
রিফাত ইসলাম নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এমন সব পোস্টারে বিরক্তি প্রকাশ করে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “রঙ-বেরঙের এসব পোস্টারে মেট্রোরেলের বাহ্যিক সৌন্দর্য মলিন হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। এ বিষয়ে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের নজরদারি আরও বাড়ানো উচিৎ। না হলে কিছুদিন পর পোস্টারের কারণে পিলার আর চোখে পড়বে না।”
মেট্রোরেলের ১৭১ নং পিয়ারে লাগানো একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে থাকা মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলে এক ব্যক্তি তা ধরেন, নিজের নাম বলেন আবু সাঈদ।
বিজ্ঞাপন লাগানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আসলে আমরা একটি প্রতিষ্ঠানকে পোস্টার লাগানোর দায়িত্ব দিয়েছিলাম। ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজনই বলতে পারবে তারা কোথায় কোথায় পোস্টার লাগিয়েছে।
“তবে পোস্টার লাগানো নিষেধ- এমন কোনও স্থানে যদি সেগুলো লাগানো হয়, তাহলে অবশ্যই সেটা অন্যায় হয়েছে। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলব, যাতে ভবিষ্যতে এমনটা আর না করে।”
স্থাপনায় পোস্টারের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইন্টেন্যান্স) নাসির উদ্দিন আহমেদ দাবি করলেন, পোস্টার লাগানো প্রতিরোধে তাদের নজরদারি আছে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ডিএমটিসিএলের জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি।
ডিএমটিসিএলের জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা (উপসচিব) ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আহসান উল্লাহ শরিফীকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “এ নিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানানো হবে আপনাকে।”