Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

দুধ: ধরন, পুষ্টি কিংবা বিকল্প

milk-01
[publishpress_authors_box]

প্রায় ১০ হাজার বছর আগে পশ্চিম ইউরোপের কৃষকরা গৃহপালিত গরুর দুধকে পুষ্টির নতুন উৎস হিসেবে আবিষ্কার করেন। যদিও প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে তখন ল্যাকটোজ হজমের ক্ষমতা ছিল না, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে বেশিরভাগ মানুষই দুধ হজমে অভ্যস্ত হয়েছি।

বর্তমানে বিভিন্ন প্রজাতির দুধ পাওয়া যায়, যা মানুষের পছন্দ ও শারীরিক চাহিদার ভিত্তিতে বেছে নেওয়া হয়। তবে কেনার আগে দুধের বৈচিত্র্য ও গুণাগুণ সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি।

দুধ কেনার আগে যা বিবেচনা করবেন

বিশেষজ্ঞদের মতে, দুধ কেনার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত।

পুষ্টি: বিভিন্ন দুধে প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকে। এমনকি একই ধরনের দুইটি ভিন্ন ব্র্যান্ডের দুধেও পুষ্টি উপাদানের পার্থক্য থাকতে পারে। তাই, নিজের শরীরের চাহিদা অনুযায়ী দুধ বাছাই করতে হবে। ডায়েটিশিয়ান এমি গুডসন এর মতে, উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধ বেছে নিলে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ দুধ খোঁজা উচিত।

স্বাস্থ্যগত সীমাবদ্ধতা: অনেকের দুগ্ধজাত খাবারে বা সয়াতে অ্যালার্জি থাকতে পারে। নিরামিষাশী বা পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিরা কম কার্বন নিঃসরণকারী এবং প্রাণীজ উৎস থেকে আসেনি, এমন দুধ পছন্দ করতে পারেন।

চর্বি: দুই বছর বয়সী শিশুদের জন্য সব উপাদানযুক্ত দুধ উপকারী। তবে, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কম চর্বিযুক্ত দুধ বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদ অ্যামি রিড।

সংযোজন এবং মিষ্টি: চকলেট দুধ বা মিষ্টিযুক্ত ফ্লেভারের দুধ পরিহার করা উচিত, কারণ এগুলো দুধের পুষ্টিমান কমিয়ে দেয়।

ব্যক্তিগত পছন্দ: কারো ফেনিল দুধ পছন্দ, আবার কারো পাতলা দুধ। তাই, নিজের পছন্দ অনুযায়ী দুধ বেছে নেওয়া উচিত।

বাজারে বিভিন্ন প্রকার দুধ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে কয়েকটি নিচে আলোচনা করা হলো:

গরুর পাস্তুরিত দুধ

পাস্তুরিতকরণ প্রক্রিয়ায় দুধকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করা হয়। গরুর দুধ অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং এতে ১৩টি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এটি প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, আয়োডিন এবং ভিটামিন বি১২ এর উৎস।

উপকারিতা: উচ্চ ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ, সহজলভ্য ও দাম কম।

অসুবিধা: উচ্চ ক্যালোরি ও চর্বিযুক্ত, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা বা পশু পণ্য পরিহারকারীদের জন্য উপযুক্ত নয়।

গরুর পাস্তুরিত চর্বিমুক্ত দুধ

এই দুধে আগের দুধগুলোর মতোই পুষ্টি উপাদানগুলো থাকে, শুধু চর্বি থাকে না।

উপকারিতা: চর্বিমুক্ত, পরিমিত ক্যালোরি, উচ্চ ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন সমৃদ্ধ, সহজলভ্য ও দাম কম।

অসুবিধা: ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু বা পশু পণ্য পরিহারকারীদের জন্য উপযুক্ত নয়।

গরুর কাঁচা দুধ

কাঁচা দুধে পাস্তুরিত দুধের মতোই পুষ্টিগুণ থাকলেও, এতে ক্ষতিকারক জীবাণু থাকতে পারে। তাই, এটি পান করা ঝুঁকিপূর্ণ।

উপকারিতা: উচ্চ ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন সমৃদ্ধ।

অসুবিধা: ক্ষতিকারক জীবাণুযুক্ত, কম সহজলভ্য, উচ্চ ক্যালোরি ও চর্বিযুক্ত।

ছাগলের পাস্তুরিত দুধ

ছাগলের দুধে গরুর দুধের চেয়ে বেশি প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম থাকে। এটি সহজে হজম হয় বলে মনে করা হয়।

উপকারিতা: উচ্চ প্রোটিন, গরুর দুধের তুলনায় কম শর্করা, পাস্তুরিত ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।

অসুবিধা: উচ্চ ক্যালোরি ও চর্বিযুক্ত, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা বা পশু পণ্য পরিহারকারীদের জন্য উপযুক্ত নয়।

উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধ: ওট, সয়া, নারকেল ইত্যাদি

ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, পরিবেশ সচেতনতা অথবা প্রাণীবাদী দর্শনে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের জন্য ওট মিল্ক এবং অন্যান্য উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধ একটি চমৎকার বিকল্প। পুষ্টিবিদ রিডের মতে, উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধের ক্ষেত্রে পছন্দের অনেক বৈচিত্র্য রয়েছে। অনেকগুলোই গরুর দুধের মতো বা তার চেয়ে বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি দ্বারা সমৃদ্ধ। গরুর দুধে আয়রনের পরিমাণ কম থাকলেও, বেশিরভাগ উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধে আয়রন তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। তবে, অন্যান্য আয়রন সমৃদ্ধ খাবারও গ্রহণ করা উচিত।

পশুর দুধের তুলনায় উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধে ক্যালোরি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম থাকে। তবে, স্বাদ ও ঘনত্বের জন্য এতে শর্করা বা ঘন উপাদান যোগ করা হতে পারে। একটি প্রধান বিষয় হলো, বাদাম, ওট এবং নারকেল জাতীয় উদ্ভিদভিত্তিক দুধগুলোয় গরুর দুধের মতো অতটা প্রোটিন, প্রাকৃতিকভাবে থাকে না।

বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধের মধ্যে কিছু বিশেষত্ব দেখা যায়। মিষ্টি ছাড়া বাদামের দুধে- চর্বি, ক্যালোরি এবং মোট শর্করা কম থাকে। যাদের হালকা, কম ক্যালোরিযুক্ত এবং সহজে হজমযোগ্য পানীয় প্রয়োজন, তাদের জন্য এটি ভালো বিকল্প। অন্যদিকে, মিষ্টি ছাড়া নারকেল দুধে প্রোটিনের পরিমাণ প্রায় শূন্য এবং ক্যালসিয়ামও খুব কম থাকে, যেখানে প্রতি কাপে মাত্র ৪০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এটি কম ক্যালোরির বিকল্প হলেও, স্যাচুরেটেড ফ্যাট এর পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি।

সয়া দুধ অন্যান্য উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধের তুলনায় আলাদা, কারণ এতে গরুর দুধের মতোই উচ্চ প্রোটিন উপাদান বিদ্যমান। প্রতি কাপে প্রায় ৮ গ্রাম প্রোটিন থাকে, যা এক কাপ সাধারণ গরুর দুধের সমান। ইউএস ডায়েটারি গাইডলাইন অনুযায়ী, ফোর্টিফাইড সয়া দুধ পুষ্টি উপাদানের দিক থেকে গরুর দুধের সবচেয়ে কাছাকাছি এবং গরুর দুধ খাদ্যের অংশ না হলে এটি প্রথম পছন্দ হতে পারে।

এতে গরুর দুধ এবং অন্যান্য উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধের চেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম থাকে। তবে, গরুর দুধে কোনো শর্করা যোগ করা না থাকলেও, সয়া দুধে ৫ গ্রাম শর্করা যোগ করা হয়। অন্যান্য উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধের তুলনায় এতে ক্যালোরির পরিমাণও বেশি, প্রতি গ্লাসে ১১০ ক্যালোরি।

সামগ্রিকভাবে, উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধ দুগ্ধ বা পশু পণ্য পরিহার করতে চান তাদের জন্য একটি উপযুক্ত বিকল্প। এগুলোতে সাধারণত ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যোগ করা হয়, চর্বি ও ক্যালোরি কম থাকে এবং পরিবেশের জন্যও ভালো।

তবে, প্রোটিনের পরিমাণ কম থাকা, বাড়তি উপাদান যোগ করা এবং দুগ্ধজাত খাবারের চেয়ে দাম বেশি হওয়া এর কিছু অসুবিধা। তাই, নিজের চাহিদা ও পছন্দের সাথে মিলিয়ে সঠিক দুধ বেছে নেওয়া উচিত।

দুধের বিকল্প কী

দুধ খাওয়ার প্রধান কারণ হলো ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটানো। পুষ্টিবিদ রিডের মতে, কিশোর-কিশোরীদের প্রতিদিন ১,৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ কমপক্ষে ১,০০০ মিলিগ্রাম হওয়া উচিত (৫১ থেকে ৭০ বছর বয়সী নারীদের জন্য এটি ১,২০০ মিলিগ্রাম)।

যদি কেউ দুধ পান করতে না চান, তাহলে অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য, যেমন দই এবং পনির একটি সহজ বিকল্প হতে পারে। এগুলো অন্যান্য দিক থেকেও উপকারী। গবেষণা বলছে, যে দুগ্ধজাত খাবার টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে এবং হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমাতে পারে।

সয়া দুধ ছাড়া অন্য কোনো উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধ বেছে নিলে (যেগুলোতে প্রোটিন কম বা নেই), মাংস, মটরশুঁটি, টফু, বাদাম এবং ডিমের মতো অন্যান্য উৎস থেকে প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে।

যদি কেউ দুগ্ধ এবং উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধ দুটোই পরিহার করতে চান, তাহলে অন্যান্য উৎস থেকে পুষ্টি পেতে পারেন। তবে এর জন্য কিছু পরিকল্পনা করতে হবে। পুষ্টিবিদ গুডসন বলেছেন, “তিন কাপ গরুর দুধে (প্রায় ৯০০ মিলিগ্রাম) ক্যালসিয়াম পেতে হলে প্রায় ১০ কাপ রান্না করা পালং শাক খেতে হবে।”

যা বেশিরভাগ মানুষের কাছেই অবাস্তব একটি ব্যাপার।

তিনি আরও যোগ করেন: “গরুর দুধ পান না করে এর পুষ্টিগুণ পেতে হলে সাবধানে বিভিন্ন ধরনের খাবার নির্বাচন এবং একত্রিত করতে হবে, এবং এর জন্য সুরক্ষিত পণ্যের প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী নারী বা ক্রীড়াবিদদের মতো যাদের উচ্চ পুষ্টির চাহিদা রয়েছে, তাদের জন্য এটি আরও বেশি প্রচেষ্টা এবং পরিকল্পনার দাবি রাখে।”

(ইয়াহু লাইফ অনুসরণে লেখা)

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত