রেমালের তাণ্ডব শেষ হওয়ার পুরো একদিন পার হলেও অন্ধকারে রয়েছে বাগেরহাটের পাঁচ লাখ মানুষ। বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে দৈনন্দিক কাজ, দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি দুদিন পরও বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে না পারায় নানা ধরনের সংকটে পড়েছেন স্থানীয়রা। ফ্রিজে নষ্ট হচ্ছে মাছ-মাংস, মোবাইল ফোনে চার্জ না থাকায় যোগাযোগ করতে পারছেন না দূরে থাকা স্বজনরা।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ঘূর্ণিঝড়ে গাছপালা উপড়ে তার ছিঁড়ে যাওয়ায় সঞ্চালন লাইনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে সংযোগ পুনঃস্থাপনের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে, পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ চালু করা হবে।
মঙ্গলবার বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের মাঝিডাঙা, বাদেকাড়া, পৌরসভার খারদ্বারসহ বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা গেল, সড়কে বিদ্যুতের তারের ওপর গাছ পড়ে আছে, তার ছিঁড়ে ঝুলে আছে। বেশ কিছু স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে ও ভেঙে পড়েছে। ঝড়ের তাণ্ডবে পল্লী বিদ্যুতের লাইন লন্ডভন্ড হয়ে আছে।
একই অবস্থা উপকূলীয় শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা ও রামপাল উপজেলাতেও।
সকাল থেকেই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের গাছপালা কেটে পরিস্কার করতে দেখা গেছে।
সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, তার ওয়ার্ডে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা চার হাজারের বেশি। রবিবার ঝড়ের দিনই বিদ্যুৎ চলে যায়। এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যুৎ আসেনি।
গত দুইদিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোনে চার্জ দিতে পারছেন না স্থানীয়রা। ফ্রিজে থাকা মাছ-মাংস নষ্ট হয়ে গেছে। ইন্টারনেট পরিষেবা চালু না থাকায় দেশের বাইরে থাকা স্বজনরাও যোগাযোগ পর্যন্ত করতে পারছে না।
বাদেকাড়া গ্রামের মুনিম রায়হান বলেন, তাদের এলাকায় তিন হাজারের বেশি গ্রাহক পল্লী বিদ্যুতের। ঝড়ের দিন বিকেল থেকে বিদ্যুৎ নেই। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তারা অন্ধকারে রয়েছেন।
মুনিমের বাড়ির সামনেই ঝড়ের দিন রাতে বিদ্যুতের তারের ওপর বিশাল আকৃতির একটি মেহগনির গাছ উপড়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত সেটি সরানোর কোনও উদ্যোগ নেয়নি পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। এখন স্থানীয়রা নিজেরাই তারের ওপর থেকে গাছটি কেটে সরানোর উদ্যোগ নিচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বাগেরহাট কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্ব) সুশান্ত রায় সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে তারের ওপর গাছপালা উপড়ে ও তার ছিঁড়ে পল্লী বিদ্যুতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দেড় হাজারের বেশি গাছপালা উপড়ে ৭০২টি পয়েন্টে তার ছিঁড়ে পড়েছে। ১৩০টি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে ও ভেঙে গেছে, ৩৫টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে, ৩৯৪টি মিটার ভেঙে গেছে।
বাগেরহাটের নয়টি উপজেলায়সহ খুলনার কিছু অংশ নিয়ে পল্লী বিদ্যুতের এই এলাকায় গ্রাহক সংখ্যা চার লাখ ৮৫ হাজার। এদের সবাই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করতে সোমবার সকালে বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেই তারা বেশি শ্রমিক নিয়ে মোংলা ইপিজেডে বাগেরহাট শহরের বিসিক শিল্পনগরীর দুটি সাব স্টেশন চালু করেন বলে জানান সুশান্ত রায়।
তিনি বলেন, “কিন্তু বিকালে ঝড়ো বাতাসে তা আবার বন্ধ রাখতে হয়। মঙ্গলবার ভোর থেকে শতশত শ্রমিক জেলার বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে। যেসব এলাকায় কম ক্ষতি হয়েছে সেসব এলাকায় দ্রুত বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টা করছি। পর্যায়ক্রমে সব এলাকায় বিদ্যুৎ চালু করা হবে। আজকের মধ্যেই গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু হবে।”
তবে কত গ্রাহক সংযোগের আওতায় আসবে বা পুরো এলাকায় কতদিনে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করা যাবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।